রাবি শিক্ষার্থী জিসানের শতাধিক ছবি নিয়ে একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী
ছোটবেলা থেকেই শিল্পকর্মের প্রতি প্রবল আকর্ষণ ছিল তার। আগ্রহ থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বইয়ের ছবিগুলো আঁকতেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলা, সম্রাট শাহজাহান, মিরজাফরসহ ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোর ছবি দেখে দেখে হুবহু একে ফেলতেন তিনি। ছবিগুলো খুবই চমৎকার হওয়ায় পরিবারের সদস্য, স্কুলশিক্ষক ও সহপাঠীদের কাছ থেকে পেতেন উৎসাহ। সেই প্রেরণা থেকেই শিল্পকর্মের দিকে নিজেকে মনোনিবেশ করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন শেষ করার আগেই প্রফেশনালভাবে শিল্পকর্মের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেন এ শিল্পকর্মী।
বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা, ছাপচিত্র বিভাগের চিত্রকলা গ্রুপে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ জিসানের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তিনি। শনিবার (১৮ মে) বিকেলে হলের মুক্তমঞ্চে তারই আঁকা এককভাবে নিরীক্ষাধর্মী শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করেন জিসান। সেখানে স্থান পেয়েছে প্রায় শতাধিক শিল্পকর্ম। মুক্তমঞ্চের চারপাশে এগুলো রাখা হয়েছে। শিল্পকর্মের মধ্যে আছে সুখী দম্পতি, 3 Dancing Girls, নিরীক্ষধর্মী ভূদৃশ্য, Experimental Figure Drawing, অভিমান, হিংস্র মানবসহ চমৎকার সব নাম। কারুশিল্পের নিরীক্ষামূলক চর্চার পাশাপাশি শিক্ষাজীবনের প্রারম্ভিক কিছু প্রাতিষ্ঠানিক চর্চামূলক কাজও প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে।
তার বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামে। পিতা ফজর আলী একজন কৃষক ও মাতা ফাতেমা খাতুন একজন গৃহিণী। তাদের যৌথ পরিবারের মোট ১৫ জন সদস্য আছেন। বর্তমানে তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিয়েটিভ ট্রেনিং অ্যান্ড মেডিকেল ইন্সটিটিউটের চারুকলা বিভাগের ট্রেড ইন্সট্রাক্টর (ফাইন আর্টস) এবং বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর বিষয়ে জিসান বলেন, একজন শিল্পীর শিল্পসত্তা প্রকাশ পায় শিল্প প্রদর্শনের মাধ্যমে। তারই উদ্দেশ্য এই প্রথম একক শিল্প প্রদর্শনের আয়োজন করেছি। আমি ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন রকম আঁকাআঁকি করতাম। তখন থেকেই আমার পরিবারের সদস্যরা ও শিক্ষকরা আমাকে অনুপ্রাণিত করতেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর আমি প্রফেশনালভাবে চিত্র আঁকা শুরু করি। এছাড়া আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এগুলো বিক্রি করে থাকি। এখন আমি প্রচুর অর্ডার পাই।
শিল্পকর্মের বিশেষত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার শিল্পকর্মগুলোর আলাদা একটা বিশেষত্ব আছে। এগুলোর বিষয়ে যতক্ষণ না আমি ব্যাখ্যা করব ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ তা বুঝতে পারবে না। এটা চোখ খুলে দেখলে যেমন লাগে চোখ ঝাপসা করে দেখলে তা আরেক রকম লাগবে। খালি চোখে যেমন লাগে, ক্যামেরা দিয়ে দেখলে তা ভিন্ন মনে হবে। এটা আমার শিল্পকর্মের বৈশিষ্ট্য। একজন শিল্পীর সব থেকে বড় পরিচয় হলো তার শিল্পকর্ম। আমার শিল্পকর্মের মান কেমন হয়েছে তা দর্শকরাই ভালো বলতে পারবেন।
শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য সম্পর্কে এই শিল্পী বলেন, একজন শিল্পীর উদ্দেশ্য হলো প্রদর্শনীর মাধ্যমে তার শিল্পকর্মের বিষয়বস্তু মানুষকে বোঝানো। বর্তমান সমাজের বিভিন্ন কলহ-বিবাদ, বিচ্ছেদ ও যে অরাজকতা ঘটছে সেটাকে দূর করে কীভাবে একতাবদ্ধ ভাবে বসবাস করা যায় সেটা আমি শিল্পকর্মের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছি। ছবিগুলোতে যে সাদা রং ব্যবহার করা হয়েছে তা আমি মনের প্রশান্তিকে বুঝিয়েছি এবং কালো রং দ্বারা মনের দুঃখকে বুঝিয়েছি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নিজেকে একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে প্রকাশ করতে চাই। আর এই প্রদর্শনী আমি চালু রাখতে চাই। এরপর বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে, বিভাগীয় পর্যায়ে আয়োজন করার ইচ্ছা আছে। পাশাপাশি দেশের বড় বড় চিত্রশিল্পীদের সাথে কাজ করার চেষ্টা করব এবং তাদের নিকট থেকে ধারণা নিয়ে আরো ভালো কাজ করার চেষ্টা করব। বাংলাদেশের একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করতে চাই।