ঢাবির লাইব্রেরিতে দিনে পড়তেন আইনের বই রাতে মোবাইল ল্যাপটপ চুরি, অতপর...
বহিরাগত হয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে প্রায় দুই বছর সূর্য সেন হলে থাকেন ইশতিয়াক আহমেদ। হলের লাইব্রেরি ও রিডিং রুমে আইন বিষয়ক বিভিন্ন বই পড়া এবং রাতে শিক্ষার্থীদের ফোন, মোবাইল, ল্যাপটপ, দামি জুতা এমনকি জামাকাপড় চুরি করাই তার নেশা ছিল। ঘুমানোর জন্য জায়গা না থাকায় মসজিদের ভিতর রাত্রি যাপন করতো এই বহিরাগত।
দীর্ঘদিন ধরে হলের জিনিসপত্র, টাকা, মোবাইল ফোন চুরি হওয়াতে সূর্য সেন হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কে বা কারা চুরি করে সে সম্পর্কে তারা অবগত নয়। এ বিষয়ে হল প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও সাড়া মেলেনি বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
অবশেষে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টায় মসজিদের ভিতরে অবস্থান করা এক শিক্ষার্থীর ফোন চুরি করতে গিয়ে সন্দেহজনক ভাবে ধরা পড়ে বহিরাগত ছাত্র ইশতিয়াক। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে প্রক্টোরিয়াল টিমের কাছে তুলে দেওয়ার হয়।
তার নাম ইশতিয়াক আহমেদ। বাসা সুলতানপুর, বরুড়া, কুমিল্লা। তার বয়স ৩৬ বছর। চাকুরির বয়স পার হলেও সে শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে হলে তার আধিপত্য বিস্তার করে। সূর্যসেন হলের ক্যান্টিনে বাকি খাওয়া থেকে শুরু করে অন্যান্য হলেও বাকি খেয়ে টাকা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, সে হলের লাইব্রেরি রুমে প্রায় ১ বছর আইনের বই পড়তো। তাকে সবাই হলের সিনিয়র মনে করে সম্মান দিয়ে কথা বলতো। কিন্তু সে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতো না, সে কোন সেশনের সেটা জিজ্ঞেস করলে চুপ করে থাকতো।
সূর্য সেন হলের শিক্ষার্থী মোখলেছুর রহমান জাবির দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কারণে পড়ার অনেক চাপ। তাই ঘুমাতে অনেক রাত হয়ে যায় বলে রিডিং রুমে পড়া শেষ করে মসজিদে ঘুমিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি একজন মসজিদে প্রবেশ করে আমার পায়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে এবং আমি ঘুমিয়েছি কিনা দেখছে। সে ফোন চুরি করার আগ মুহূর্তে আমি আমি ধরে ফেলি এবং জিজ্ঞেস করি আপনি ক্যাম্পাসের কিনা! সে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে স্বীকার করে সে ক্যাম্পাসের না। সে চুরি করতেই মসজিদে প্রবেশ করে।
সূর্য সেন হলের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জয় বলেন, কিছু দিন আগে আমার রুম থেকে আইফোন চুরি হয়েছে। অনেক কষ্ট করে টাকা উপার্জন করে ফোনটি কিনেছিলাম। সে এই ফোন চুরি করেছে এবং আমার মানিব্যাগ থেকে ১০হাজার টাকা নিয়ে গেছে । কয়েকমাস আগে থেকে হলে চুরির মাত্রা বেড়ে গেছে। এই চুরির মূল হোতা ইশতিয়াক। এর উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাই। প্রয়োজনে আমি তার বিরুদ্ধে মামলা করবো।
এবিষয়ে সূর্য সেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ভূইয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাাকে বলেন, শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে আমাকে অবগত করেছে, আমরা চোরকে প্রক্টোরিয়াল টিমের হাতে তুলে দিয়েছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে তদন্ত সাপেক্ষে তারা ব্যবস্থা নিবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আজ সকালে অভিযুক্তকে শাহবাগ থানার হস্তান্তর করেছি। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তারপর যদি দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে তাকে জেলে পাঠানো হবে।
গত এক বছরে সূর্য সেন হল থেকে ৩ টা ল্যাপটপ, ২৭টি মোবাইল এর মধ্যে ২টি আইফোন, ১৩ জোড়া দামি সু সহ ১৩ জন শিক্ষার্থীর প্রায় ৫০ হাজার টাকা চুরি হয়েছে। তিনটি ল্যাপটপ, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, আইফোন সহ ২৩টি মোবাইলের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অন্যান্য সবকিছু মিলে এক বছরে সূর্য সেন হল থেকে মোট চুরির পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ টাকা।