কংক্রিটের আস্তরণে বিলুপ্তির পথে ঢাবির সবুজায়ন
ছায়া সুনিবিড় সবুজের মায়ায় জড়ানো অন্যতম স্বায়ত্তশাসিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ব্যস্ত নাগরিক জীবনে তাই একটুখানি সুযোগ মিললেই এখানেই ছুটে আসেন নগরীর অনেকে। সবুজের সান্নিধ্যে খুঁজে পান প্রশান্তির ছায়া। কিন্তু কালক্রমে কোটি প্রাণের প্রিয় সেই ক্যাম্পাস ঢাকা পড়ছে কংক্রিটের আস্তরণে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলো ইট-পাথরের নগরীতে একখণ্ড সবুজের নাম। কিন্তু ঢাবির মল চত্বরে সেই সবুজ উপড়ে ফেলে বসানো হচ্ছে ইট। কোথাও বা মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে কৃত্রিম ফোয়ারা, নির্মাণকাজের সাইনবোর্ডে সৌন্দর্যবর্ধনের কথা বলা হলেও এতে উলটো সৌন্দর্যহানি হচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তারা বলছেন, কনক্রিট দিয়ে মোড়ানো মলচত্বর আমরা কখনো চাই নি। এটি তৈরি করতে ঢাবি প্রশাসন প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। যা অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। পূর্বের মল চত্বরটা অনেক আরামদায়ক ছিল।
ক্যাম্পাসের ভিসি চত্বর, হাকিম চত্বর, দোয়েল চত্বর, মিলন চত্বর ও সমাজবিজ্ঞান চত্বর— এরকম বহু চত্বরের মধ্যকার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ চত্বর হল মল চত্বর। প্রতিবছরই এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে বের হয়ে যায় অসংখ্য শিক্ষার্থী। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের যে স্মৃতিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় বারবার টেনে আনে তার মধ্যে মল চত্বরে গান, আড্ডা, খেলাধুলা আর নানা উন্মাদনার মাতানো সময়গুলো উল্লেখযোগ্য।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সাবেক ফরাসি সংস্কৃতি মন্ত্রী আন্দ্রে মারলোর সম্মানার্থে ক্যাম্পাসের একটি চত্বরের নামকরণ করা হয়। তখন সেটির নাম ছিল মারলো চত্বর। কালক্রমে এটিই বিকৃত হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘মল’ নামে। হয়ত শিক্ষার্থীদের অনেকে জানেও না- আদৌতে না একজন সম্মানিত ব্যক্তির নাম ছিল। মহান ব্যক্তির স্মরণে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ চত্বরে মালরো বাগান নামে একটি বাগানের নামকরণ করা হয়েছে।
সূর্য সেন হলের চতুর্থ বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কনক্রিটের আবরণ দিয়ে মলচত্বরকে নান্দনিক ডিজাইনে মোড়ানোর ফলে পূর্বের সবুজায়ন তার জৌলুস হারিয়েছে। এটি তৈরি করতে গিয়ে ছোট বড় অনেক গাছের ডালপালা ও শিকড় কাটা পড়েছে যা ফলে গাছগুলো তার ভারসাম্য হারিয়েছে। কনক্রিট স্থাপনের কারণে দিন দিন ঢাবি তার সজীবতা হারিয়ে ফেলছে।
কনক্রিটের আস্তরণে মল চত্বর তৈরি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আরবরিকালচার সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শতবর্ষী মনুমেন্ট তৈরি করতে গিয়ে এই যে জায়গাটা ধ্বংস করা হলো, আমার বিশেষ করে অনেক কষ্ট হয়েছে। এটা কনক্রিটের কেন করতে যাব আমরা! পরবর্তীতে আমরা সবুজায়নের কথা চিন্তা করে নকশা পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেক কংক্রিটের স্তূপ ভেঙে ফেলেছি। এটা একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তবে মলচত্বরে শতবর্ষে মনুমেন্ট তৈরি করতে গিয়ে বড় কোনো গাছ কাটা হয়নি।