যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানিয়ে ঢাবিতে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়া ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সাথে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে পৃথিবী জুড়ে নিপীড়িত, নিষ্পেষিত, শোষিত মানুষের পক্ষে, মানবতার পক্ষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানায় তারা। ৫ মে (রবিবার) বিকেল ৩ টায় দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে তথ্যপ্রমাণবহুল জঘন্যতম গণহত্যা হলো ফিলিস্তিনের গণহত্যা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এতসংখ্যক নারী-শিশু এর আগে কখনও হত্যা হয়নি। অথচ মানবতার ফেরিওয়ালা বলে দাবি করা পৃথিবীর মোড়লরাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ গণহত্যায় মদদ দিচ্ছে।
বিক্ষোভ সমাবেশে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শাখাওয়াত জাকারিয়া বলেন, আজকের এই সংহতি সমাবেশে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি জানান দেয় বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য কতটা মর্মাহত। এ পর্যন্ত ইসরাইলের হামলায় ফিলিস্তিনের ৩৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অক্টোবর থেকে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম চলছে, সারা বিশ্বের মানুষ তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছে, ইসরায়েলের বিরোধিতা করছে৷ এটা শুধু ফিলিস্তিনের পক্ষের লড়াই নয় বরং এটা সারা বিশ্বের আর্ত মানবতার জন্য লড়াই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পাসপোর্টে কিছুদিন আগেও ‘এক্সেপ্ট ইসরাইল’ শব্দ উল্লেখ ছিলো কিন্তু সেটা এখন তুলে দেওয়া হয়েছে৷ আমরা চাই আমাদের পাসপোর্টে আবার ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ শব্দটি যুক্ত করা হয়। আমরা জানতে পেরেছি, ইসরাইলের কোম্পানি থেকে গোপন স্পাইওয়ার কেনা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, এমন আবারও হলে সাধারণ মানুষ এর প্রতিবাদ করবে। যারা ইসসরাইলকে সাহায্য করবে আমরা তাদের বয়কট করবো। আমরা আশা করি ফিলিস্তিন একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, তারা তাদের স্বাধীনতা ফেরত পাবে।
ঢাবির ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টেমেন্টের শিক্ষার্থী মিশকাতুল জান্নাত বলেন, গাজায় এ পর্যন্ত হতাহত হয়েছে ৩৪ হাজার ৬শত জন মানুষ। যারা ইজরায়েলের বাহিনীকে একটি পাথর পর্যন্ত নিক্ষেপ করেনি। বাদ যায়নি শিশু বা নারী। এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হাতে এখন পর্যন্ত শহিদ হয়েছে ১০ হাজার মহিলা। গাজায় ৩৭টি হাসপাতালের মধ্যে ৩০টি হাসপাতালকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। গাজার ৮৭ শতাংশ স্কুলকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
সমাবেশে উপস্থিত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক নকিব নাসরুল্লাহ।তিনি তার বক্তব্যে বলেন,শিক্ষার্থীরা মানবতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের যে আয়োজন আমি তাকে সমর্থন জানাতে এসেছি। আজকে আমাদের অবস্থান নিপীড়িত মানুষের পক্ষে। ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানাতে মুসলিম হওয়ার প্রয়োজন নেই, একজন মানুষ হলেই যথেষ্ট। এমন গণহত্যা পৃথিবীর সমস্ত ইতিহাসকে ভেঙে দিয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কোন যুদ্ধে এত নারী-শিশু এর আগে কখনও হত্যা হয়নি৷
তিনি আরও বলেন, নেতানিয়াহু এবং এই যুদ্ধের সরাসরি মদদদাতা বাইডেন যুদ্ধাপরাধী৷ আমরা আমেরিকার মানুষের বিরুদ্ধে না। কিন্তু আমরা বলতে চাই, ‘নেতানিয়াহু ইজ অ্যা ওয়ার ক্রিমিনাল, বাইডেন ইজ অ্যা ওয়ার ক্রিমিনাল’। ফিলিস্তিনের পক্ষে পুরো বিশ্বে আন্দোলন যে শুরু হয়েছে, বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলেনে শরিক হওয়া উচিত। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের সকল চক্রান্ত শেষ হবে বলে আমি মনে করি।
তিনি আরো বলেন, ফিলিস্তিনের পক্ষে পুরো বিশ্বে আন্দোলন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলেনে জেগে উঠা উচিত। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের সকল চক্রান্ত শেষ হবে ।
সমাবেশে ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক আরিফুল ইসলাম অপু বলেন, আমাদের নতুন কিছু বলার নেই। আমাদের এই আন্দোলন কোন নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য নয়। এই আন্দোলন মানবতার বিরুদ্ধে বিষফোড়া ওইসব রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এত পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে তথ্যপ্রমাণবহুল গণহত্যা এর আগে পৃথিবী কখনও দেখেনি। এই পরিমাণে তথ্যপ্রমাণবহুল গণহত্যা দেখার পরেও পৃথিবীর মোড়লরা তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ফলে এই ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন তুলতে হবে।