০৩ মে ২০২৪, ২৩:৫০

ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে শিবির ট্যাগ দিয়ে হল ছাড়ার নির্দেশ ছাত্রলীগ কর্মীর

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী জুলকারনাইন মাহিন  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকায় দুই শিক্ষার্থীকে শিবির ট্যাগ দিয়ে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় ছাত্রলীগ কর্মী জুলকারনাইন মাহিন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন হলেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। 

১ মে বুধবার ঢাবি বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে দুই শিক্ষার্থীকে শিবির অ্যাখ্যা দেয় এই ছাত্রলীগ কর্মী। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী জুলকারনাইন মাহিন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুইরেন্স বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এবং বিজয় একাত্তর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। 

ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী হলেন- আমজাদ মিয়াজি এবং ইফতেখারুল হুদা মজুমদার। তারা উভয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এবং বিজয় একাত্তর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তবে আমজাদ মিয়াজি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে দাবি করেন।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, বিজয় একাত্তর হলের ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের গ্রুপের প্রথম বর্ষের সবাইকে বাধ্যতামূলক মিনি গেস্টরুমে আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়। গ্রুপের মোট শিক্ষার্থী ২১ জনের নামের তালিকা দেয়া হয় ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে। তবে গতকাল গেস্টরুমে ১১ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে দুজনকে নির্দিষ্ট করে শিবির আখ্যা দেন জুলকারনাইন মাহিন। 

উল্লখ্য, গত পহেলা মে মিনি গেস্টরুমে অনুপস্থিত থাকায় আমাজাদ মিয়াজি এবং ইফতেখারুল হুদা মজুমদারকে অভ্যন্তরীণ ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে মেনশন করে জুলকারনাইন মাহিন লিখেন, 'আজ থেকে আপনাদের দায়িত্ব আর আমরা নিব না। ছাত্রলীগের কর্মকান্ডে জড়িত না থাকায় আপনাদের শিবির হিসেবে ধরে নেয়া হল। আজকের পর আপনাদের হলে দেখা গেলে পরিণতি খারাপ হবে।'

জানা যায়, হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহমেদ ফয়সাল, সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিরুল ইসলাম সাকিব এবং গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক উপ-সম্পাদক সাকিবুল সুজন এই গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের নির্দেশেই মূলত গেস্টরুম হয়। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী। সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিরুল ইসলাম সাকিবের নির্দেশেই মাহিন ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে এই নির্দেশনা দিয়েছে বলে অভিযোগ উটেছে। 

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও তাকে শিবির আখ্যা দেওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমজাদ মিয়াজি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি আগে নিয়মিত প্রোগ্রাম করতাম। তবে গত কয়েকদিন ধরে আমি প্রোগ্রাম করতে পারিনি। এজন্য হয়তো এমনটা বলা হয়েছে।আমার বাবা নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি কি কারণে আমাকে শিবির আখ্যা দিয়েছে তা আমার জানা নাই। 

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী জুলকারনাইন মাহিনকে একাধিকবার ফোন দেওয়া সত্ত্বেও ফোন রিসিভ করেন নি।

বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, পদ প্রত্যাশী সাকিরুল ইসলাম সাকিব দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতিতে গেস্টরুম বলে কোন শব্দ নেই।আমরা আমাদের কর্মীদের নিয়ে মাঝে মাঝে আড্ডা দিই। সেটাও গরমের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। এ বিষয়টি অনেকটা মিমাংসা হয়ে গেছে। তবে শিবির ট্যাগ দিয়ে কাউকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া সত্যিই দুঃখজনক। আমরা চেইন অব কমান্ড বজায় রেখে রাজনীতি করি। কেউ পরিকল্পিত ভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে মনে করি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত দেশের বাইরে অবস্থান করায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।