০১ মে ২০২৪, ১৭:০৮

তাপদাহে সশরীরে পরীক্ষা ঢাবিতে, অস্বস্তিতে শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

তীব্র তাপদাহে পুড়ছে দেশ। জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের তাপদাহ থেকে মুক্তি দিতে ২১ এপ্রিল থেকে অনলাইন ক্লাসের ঘোষণা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন। কিন্তু ঘোষণাপত্রে ক্লাস অনলাইনে হলেও সকল পরীক্ষা সশরীরে নেওয়ার ঘোষণা দেয় প্রশাসন। ফলে ঢাবির বেশ কয়েকটি বিভাগে তাপদাহেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে মিডটার্ম, সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই তীব্র গরমের মধ্যেও ঢাবির প্রায় ১৪টি বিভাগে পরীক্ষা চলছে। সমাজ বিজ্ঞান, গণিত, অপরাধ বিজ্ঞান, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, লোক প্রশাসন, লেদার ইনস্টিটিউট, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, দর্শন, ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুরেন্স, ইসলাম শিক্ষাসহ আরও কয়েকটি বিভাগে চলছে পরীক্ষা। তীব্র গরমে হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ব্যতীত অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করা যেন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তীব্র গরমে ঘর থেকে বের হওয়াই যেখানে কষ্টকর, থাকে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা সেখানে অনলাইন ক্লাস নিয়ে অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত। 

ঢাবি শিক্ষার্থী মুন্নি আক্তার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ক্লাস অনলাইন থাকলে পরীক্ষা যদি অফলাইন হয়। তাহলে ক্লাস অনলাইনে কেন নিবে? যারা পরীক্ষা দিতে যায় তাদের তো গরম কম লাগে না। তাহলে সবই অফ রাখা উচিত। তীব্র গরমে আমরা যারা বাইরে থেকে পরীক্ষা দিতে আসি আমাদের বিষয়গুলোও প্রশাসনের ভাবা উচিত বলে আমি মনে করি।

আরো পড়ুন: তীব্র তাপপ্রবাহে অনলাইন ক্লাসে ঢাবি, পরীক্ষা সশরীরে

 শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম খান বলেন, তীব্র গরমে অনলাইন ক্লাসকে আমি যৌক্তিক মনে করি। ইতিপূর্বে করোনার সময়ে আমরা অনলাইন ক্লাসে অনেকটা অভ্যস্ত হয়েছি, যদিও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তবে সকলের মঙ্গলের দিকে তাকিয়ে আমাদেরকে কিছু জিনিস ছাড়তে হবে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র দাবদাহে স্কুল শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। স্কুল শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা আমরা জানি।

এই তীব্র গরমে সেমিস্টার একটু দীর্ঘ করা যায়। পরীক্ষা থাকলে তা পেছানো যায়। এতে একটু পিছিয়ে গেলেও আমাদের জীবন রক্ষা পাবে। যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর দায় কোনো ভাবেই এড়াতে পারেন না।

তবে একই সাথে সেশন জটে না পড়া নিয়ে পরীক্ষাকে সাধুবাদও জানিয়েছে অনেক শিক্ষার্থী। তাদের মতে, গরমে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের যাতায়াত কষ্ট হলেও থেমে নেই জনজীবন। সশরীরে পরীক্ষা হলেও সেটা দেওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের। যাতে করে বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজট এড়িয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে পারবে।

উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী কৌশিক হাসান পরশ বলেন, তীব্র গরমে সশরীরে ক্লাস বন্ধ থাকলেও পরীক্ষা চলমান। এটা ঢাবি প্রশাসনের অন্যতম প্রশংসনীয় একটা সিদ্ধান্ত। নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা হচ্ছে এতে করে আর সেশনজট হওয়ার সম্ভবত নাই। আমার নিজের ও সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলমান। বিষয়টা আমি ইতিবাচক ভাবেই দেখছি, এছাড়া পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এমন সবগুলো কক্ষই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, প্রচণ্ড গরমে বাসে করে আসতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। ভার্সিটির ভাড়া করা বিআরটিসি বাসগুলোতে মাঝেমধ্যে ফ্যান নষ্ট থাকতে দেখা যায়। তাছাড়াও বাসের সংখ্যা কম হওয়াতে অনেক শিক্ষার্থী একই বাসে থাকায় আরো বেশি গরম অনুভূত হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্তকে আমি সাধুবাদ জানাই, সাময়িক ভোগান্তি হলেও সেশনজট কিংবা পরীক্ষা জমে যাওয়ার ব্যাপারগুলো থাকবেনা। আমার মনে হয়, বর্তমান তাপপ্রবাহ সহ্য করার জন্য একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী যথেষ্ট এডাপ্টেড। নিয়মিত পানি পান করা, বাসা থেকে ছাতা নিয়ে বের হলে মনে হয়না কোনো অসুবিধা হবে।

আরো পড়ুন: একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা

এদিকে অনলাইন ক্লাস হওয়ায় যে-সব রুটে বাস চলতো সেসব রুটে বাস সংখ্যা সীমিত করা হয়েছে। পরিবহণ অফিস সূত্রে জানা যায়, ঢাবি থেকে টঙ্গি, গাজীপুর রুটে ক্ষণিকা নামে ৯ টি বাসের মধ্যে ৩ টি বাস চলাচল করছে। ঢাবি থেকে মিরপুর রুটে চৈতালির ৮ টি বাসের মধ্যে ২ টি বাস চলাচল করছে। এরকম প্রতিটি রুটেই ২টি অথবা ১ টি করে বাস চালু আছে। যার ফলে পরীক্ষার্থীদের বাসের জন্য নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা না হলে আগেই চলে আসতে হচ্ছে অথবা পরে লোকাল পরিবহনে আসতে হচ্ছে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা একধরণের ভোগান্তি সৃষ্টি করছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজনীন ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক নির্দেশনা অনুসরণ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে আমরা সেটা মেনেই পরীক্ষা নিচ্ছি।  শিক্ষার্থীরাও আমাদের কাছে জানায়নি তাদের সমস্যার কথা। 

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশচন্দ্র বাছার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অনলাইন ক্লাসের জন্য পরিবহণ সংখ্যা সীমিত করা হয়েছে। পাশাপাশি অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি পরীক্ষাটাও সমন্বয় করা উচিত বলে আমি মনে করি। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে বাস সংখ্যা বাড়ানো যায় কি না আমরা আলোচনা করে দেখব।