না খেয়ে কিনেছেন বই, ৬০০ বইয়ের লাইব্রেরি বানালেন রাবির আকরাম
আজ বিশ্ব বই দিবস। অনলাইনের এই যুগে বই পড়ার অভ্যাস অনেকটাই হারিয়ে ফেলতে বসেছে তরুণ সমাজ। তবে এক্ষেত্রে অনেকটাই ব্যতিক্রম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আকরাম হোসেন। বই পড়ার প্রতি ভালোবাসা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সোহরাওয়ার্দী হলের নিজ কক্ষটিকেই বানিয়ে ফেলেছেন একটি ক্ষুদ্র লাইব্রেরি। আকরাম হোসেনের সংগ্রহে আছে প্রায় ছয় শতাধিক বই।
শহিদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রথম ব্লকের তিন তলায় ৩৬২ নম্বর কক্ষে থাকেন মো. আকরাম হোসেন। বই সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজে পড়ার সময় থেকেই বই পড়ার আগ্রহটা শুরু হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর এই আগ্রহটা অনেকাংশে বেড়ে যায়। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষকগণ বলতেন যেন আমরা প্রচুর বই পড়ি। স্যারদের উপদেশগুলো শুনার চেষ্টা করতাম। লাইব্রেরিতে গিয়েও বই পড়েছি; আগ্রহটা আসলে এভাবেই অনেক বেড়ে গেছে।’
কোন কোন ক্যাটাগরির বই তার সংগ্রহে আছে?—এমন প্রশ্নের উত্তরে আকরাম জানান, আমার সংগ্রহে বিশ্বসাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, রাজনীতি, লোকসাহিত্য, বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস, নাটক, ছোট গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, রম্য রচনা, জীবনী, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ধর্ম, স্মৃতিকথা, সাহিত্য সমালোচনা, তথ্য প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, শিক্ষা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামিক, আত্ম উন্নয়নমূলক, বাংলা ও ইংরেজি ডিকশনারিসহ বিভিন্ন ধারার বই রয়েছে।
অনেক সময় বই কিনে রাতে না খেয়ে থেকেছেন উল্লেখ করে আকরাম বলেন, ‘আমি নতুন নতুন বই কিনতে খুব পছন্দ করি। বই কেনার পর দেখা গেছে হাতে আর অবশিষ্ট কোনো টাকা নেই। এরকম করে বই ক্রয় করতে করতেই আমার সংগ্রহটা বৃদ্ধি পেয়েছে।’
আকরাম হোসেনের জন্ম ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ডু উপজেলার জোড়াদহ গ্রামে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ সেশনে ভর্তি হন ইতিহাস বিভাগে।শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে নিতে চান তিনি। এ লক্ষ্যে তিনি বিসিএস, নিবন্ধনসহ চাকরির প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিতরণ করতে হলে নিজের জ্ঞানকে শানিত করতে হয়; আর পর্যাপ্ত বই পড়া ছাড়া জ্ঞান অর্জনের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন আকরাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বই পড়ার পরামর্শ দিয়ে এ বইপ্রেমী বলেন, বর্তমান সময়ে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা পিডিএফ কপি সংগ্রহ করতেই বেশি আগ্রহী। আমি মনে করি, হার্ডকপি পড়াটাই ভালো। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি বই পড়লে হতাশা দূরীভূত হয়, জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি মানসিকভাবেও সুস্থ থাকা যায়।