ঢাবিতে চান্স পেয়েও ভর্তি অনিশ্চিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জাকারিয়ার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তিযুদ্ধে ‘খ’ ইউনিটে মেধাতালিকায় ৪১৫তম হয়েছেন মো. জাকারিয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে জন্ম থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এই শিক্ষার্থীর। ঝালমুড়ি বিক্রেতা বাবা ও গৃহকর্মী মায়ের উপার্জনে জীবনকে শিক্ষার আলোয় রাঙাতে দীর্ঘ সংগ্রাম করলেও টাকার অভাবে তাঁর ভর্তি ও পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবার।
জাকারিয়ার বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কাকনী ইউনিয়নের বাগুন্দা গ্রামে। তাঁর বাবা মোখলেছুর রহমান ও মা জোবেদা খাতুন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয় জাকারিয়া।
জন্মের পর মাত্র ৯ মাস বয়সে তাঁর অন্ধত্ব ধরা পড়ে। এর পর ময়মনসিংহের একটি চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা দিলে ডান চোখে আলো ফেরে। এক মাসের মধ্যে চিকিৎসক বাঁ চোখ অপারেশনের পরামর্শ দিলেও রিকশাচালক বাবা টাকার জোগান দিতে না পারায় পাঁচ মাস পর নেওয়া হয় হাসপাতালে। অপারেশন করলেও বাঁ চোখে পুরো আলো ফেরেনি জাকারিয়ার।
এরপর ২০১৬ সালে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় ফের চোখের আলো কমতে থাকে। ওই সময় চিকিৎসকরা জানান, রেটিনা ছিঁড়ে যাওয়ায় তাঁর চোখ আর স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ নেই। এর পর ২০১৭ সালে ময়মনসিংহ নগরীর এডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশনে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন জাকারিয়া। সেখান থেকে মানবিক বিভাগে ২০২১ সালে এসএসসি ও আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করেন। চলতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
জাকারিয়ার মায়ের ইচ্ছা ছিল ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন তাকে। জাকারিয়া বলেন, প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা আর বাবা-মায়ের কষ্টের টাকায় পড়ালেখা করে যাচ্ছেন। এখন দুই চোখে ঝাপসা দেখেন তিনি। শিক্ষাজীবনের শুরুটা বইয়ের রঙিন পাতায় শুরু হলেও মাঝপথে ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়া শুরু করতে হয়।
বাবা মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘সন্তানদের জন্য বাড়ি ছেড়েছি। আমার সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেও তার পড়া কীভাবে চালিয়ে নেব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’