০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:৫৮

৫ টাকায় যেভাবে ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম গেলেন জাবি শিক্ষার্থী

জাবি শিক্ষার্থী তাসনিম হাসান  © সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী তাসনিম হাসান। তার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী। আসন্ন ঈদুল ফিতরে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য ২৪ মার্চ সৃকাল পৌনে ৮টা থেকে টিকেট বিক্রির ওয়েবসাইটে ঢুকে বসে থেকে ৮টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে চেষ্টা করেও কোনও টিকিট পোননি তিনি। 

ট্রেনে বাড়ি যাওয়া অনিশ্চিত হওয়ার পর এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে ঠিক করেছিলেন কোনো টাকা খরচ ছাড়ায় বাড়ি যাবেন তিনি। রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মাধ্যমে মাত্র পাঁচ টাকা খরচে ৩৫০ কিলোমিটার পেরিয়ে কুড়িগ্রাম পৌঁছান তাসনিম। 

এক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাসনিমে জানান, তার এই রোমাঞ্চকর এই যাত্রাটি শুরু হয় ৩ এপ্রিল সকালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে বেড়িয়ে মূল ফটকে দাঁড়িয়ে এক হাতে ‘টাঙ্গাইল’ লেখা প্ল্যাকার্ড আর অন্য হাত দিয়ে গাড়ি থামার সংকেত দিতে থাকেন। 

এভাবে আধঘণ্টা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকার পর কোনো বাস না থামলেও তার ইশারায় সাড়া দেন এক ট্রাক চালক। ট্রাক চালক তাকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত নিয়ে যেতে চাইলেও ভাড়া দাবি করেন। কিন্তু টাকা দিয়ে তো যাবেন না তাসনিম। তাই আবারও অপেক্ষা করতে লাগলেন কাঙ্ক্ষিত গাড়ির জন্য। 

এরপর প্রায় ১ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর সিমেন্টবাহী একটা ট্রাকের চালক তাকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত নিতে রাজি হন ট্রাক চালক। কালিয়াকৈরে ট্রাক থেকে তাকে নামিয়ে দিলে সেখান থেকে আরেকটি পিকআপে করে পৌঁছে যান টাঙ্গাইলে। 

তবে সেখানে একটু সমস্যায় পড়েন তাসনিম। নতুন প্ল্যাকার্ড তৈরির জন্য একটা দোকানে প্যাকেজিং বক্স (কার্টন) চাইলে দোকানদার বিনামূল্যে দিতে রাজি না হওয়ায় পাঁচ টাকা দিতে হয় তাকে। এই সেই পাঁচ টাকা, যা দিয়ে ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী পর্যন্ত আসতে খরচ হয়েছে তাসনিমের। 

তারপর কয়েক ধাপে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা এবং সেখান থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে চালককে ম্যানেজ করে বগুড়া আসেন। এরপর পূর্ব পরিচিত এক বড় ভাইয়ের সহায়তায় বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের মেসে রাত কাটানোর ব্যবস্থা হয় তার।

রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে আবারও প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়েন তাসনিম। বগুড়ার চারমাথা থেকে দুই অপরিচিত বাইকের রাইডে রংপুর, সেখান থেকে কাউনিয়া এবং সবশেষে এক আখভর্তি পিকআপের ছাদে পা ঝুলিয়ে পৌঁছে যান কুড়িগ্রামের রায়গঞ্জে।

তবে কেন এমনভাবে বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাসনিম সে বিষয়টি জানিয়েছেন তিনি। তিনি মূলত টিকেট পেতে বিড়ম্বনার জন্য হিচ-হাইকিংকে বেছে নেন। হিচ-হাইকিং শব্দটি বাংলাদেশে পরিচিত না হলেও ইউরোপে ব্যাপক পরিচিত একটি শব্দ। হিচ-হাইকিং বলতে বোঝায় একজন অচেনা বা অপরিচিত ব্যক্তির সহায়তা নিয়ে, বিনা পয়সায়, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমণ। 

তাসনিম বলেন, ‘হিচ-হাইকিং করার ইচ্ছে আগে থেকেই ছিল তবে টিকেট না পাওয়ায় হুট করেই প্ল্যান করে বেড়িয়ে পরি।যদিও হিচ-হাইকিংয়ে সবসময় প্ল্যান মতো সবকিছু হয় না, তবু বের হওয়ার আগে নিজের মতো করে একটা প্ল্যান সাজিয়েছিলাম। কোথায় কোথায় থামতে হবে, কোথায় গাড়ি পরিবর্তন করতে হবে, কত সময় লাগবে ইত্যাদি। সম্পূর্ণ ফলপ্রসূ না হলেও আমার প্ল্যান মোটামুটি কাজে দিয়েছে।’