ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেভেন মার্ডারের ৫০ বছর
আজ থেকে ৫০ বছর আগের ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাত খুন বা সেভেন মার্ডারের ঘটনার মতো আর কোনো ঘটনাই সেই সময়ে এমন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেনি। শুধু তাই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ যাবৎ যত খুনের ঘটনা রয়েছে, তা বলতে গেলেই প্রথমেই চলে আসে এই ‘সেভেন মার্ডার’ এর ঘটনা।
১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ জন ছাত্রলীগ নেতা খুন হয়। দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে এই বীভৎস হত্যাযজ্ঞের সংবাদ মুখে মুখে রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর রাজধানী ছাপিয়ে গোটা দেশ। আতঙ্ক তখন চারদিকে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল। সাধারণ ছাত্ররা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে হল ছাড়তে শুরু করে। ৬ এপ্রিলের পত্রিকায় কালো হেডিংয়ে প্রধান শিরোনাম হয়। নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিদেশি গণমাধ্যমগুলো গুরুত্ব সহকারে এ সংবাদটি প্রকাশ করে।
শফিউল আলম প্রধান
সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি আর কেউ নয়; তিনি তৎকালীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধান। প্রতিপক্ষ গ্রুপকে ঘায়েল করতে শফিউল বেছে নেয় খুনের রাজনীতি। শফিউল ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৩-৭৪ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ঘটনার পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগে সৃষ্টি হয় গভীর ক্ষত।
সেদিন যা ঘটেছিল
৪ এপ্রিল ১৯৭৪। দিবাগত রাত ১টা ২৫। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে প্রথম ২/৩ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। শফিউল আলম প্রধানের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী সূর্যসেন হলের পঞ্চম তলায় ওঠে প্রথমে ৬৩৪ নম্বর রুমের দরজায় ধাক্কাধাক্কি করে কোহিনুর নাম ধরে ডাকতে থাকে। রুমের ভেতর থেকে এক ছাত্র পাশের রুমে যোগাযোগ করতে বলার পর অস্ত্রধারীরা পাশের ৬৩৫ নম্বর কক্ষের সামনে গিয়ে দরজা ধাক্কাধাক্কি করতে থাকলে দরজা খুলে দেন নাজমুল হক কোহিনুর। অস্ত্রধারীদের নির্দেশ মতো মাথার ওপর হাত তুলে বের হন কোহিনুরসহ ওই রুমে থাকা আরো ছাত্র। অস্ত্রধারীদের অপর একটি যায় গ্রুপ ৬৪৮ নম্বর রুমে।
ওই রুম থেকে আরও ৩ জন ছাত্রকে একই কায়দায় বের করে নামিয়ে আনতে থাকে হলের নিচে। দোতলা পর্যন্ত নামার পর অস্ত্রধারীরা ২১৫ নম্বর রুমের সামনে গিয়ে আরও একছাত্রের খোঁজ করতে থাকলে বিপদ আঁচ করতে পেরে ওই ছাত্র জানালা ভেঙে দোতলা থেকে নিচে লাফিয়ে পড়েন। অস্ত্রধারীরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পলায়নরত ওই ছাত্রকে জানালা দিয়ে গুলি করতে থাকে। ছাত্রটি পালিয়ে যাওয়ার পর দু’রুম থেকে অস্ত্র তাক করে নিয়ে আসা ৭ সাত জন হতভাগ্য ছাত্রকে সূর্যসেন হল থেকে নিয়ে যাওয়া হয় মুহসিন হলে।
রাত ২টা চার মিনিট। মুহসিন হলের টিভি রুমের সামনের করিডরে ওই ৭ ছাত্রকে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। রক্তে ভেসে যায় পুরো করিডর। রাত ২টা ১১ মিনিটে গুলিবিদ্ধ ওই ছাত্ররা ছটফট করতে করতে সেখানেই প্রাণ হারান। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর অস্ত্রধারীরা ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে রাত ২টা ২৫ মিনিটে ঘটনাস্থল ছেড়ে যায়।
ঘটনাস্থল থেকে সামান্য দূরে পুলিশ ফাঁড়ি। আর অন্যদিকে পুলিশ কন্ট্রোল রুম। অস্ত্রধারীরা হত্যাযজ্ঞ শেষ করে রাত ২টা ২৫ মিনিটে ঘটনাস্থল ছেড়ে যাওয়ার আড়াই ঘণ্টা পর ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ৭ (সাত) ছাত্রের লাশ ময়নাতদন্তের জন্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।
খুন হওয়া ৭ জনের পরিচয়
যে সাতজন খুন হন, তাঁদের পরিচয় ৬ এপ্রিলের সংবাদপত্রে ছাপা হয়। একজন ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের।
১) বসির উদ্দীন আহমেদ, পিতা মৃত মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন ভুঁইয়া, ২৯ ডিস্টিলারি রোড, ঢাকা। প্রথম বর্ষ এম. কম;
২) সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ (বাব্বন), পিতা সৈয়দ নাসির উদ্দীন মাহমুদ, ৩৪ ঠাকুরদাস লেন, বানিয়ানগর, ঢাকা। বিএ অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ;
৩) আবুল হোসেন, পিতা আবদুস সামাদ অ্যাডভোকেট, পাইকপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা। বিএ অনার্স প্রথম বর্ষ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ;
৪) এম এ ইদ্রিস, পিতা মৃত মোহাম্মদ সিদ্দিক, ১১৫ চক মোগলটুলী, ঢাকা। এমকম প্রথম বর্ষ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগ;
৫) মোহাম্মদ নামজুল হক (কোহিনুর), পিতা নুরুদ্দীন আহমদ, চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ। এমএ ফাইনাল পার্ট, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ;
৬) সৈয়দ রিজওয়ানুর রব (সোহেল), পিতা ফজলে রব, ৩৯/২ পাঁচ বাই ষাট লেন, নারিন্দা, ঢাকা। বিএ অনার্স প্রথম বর্ষ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ; এবং
৭) এবাদ খান, পিতা ইব্রাহিম খান, পাইকপাড়া, ধামরাই, ঢাকা। বিএ অনার্স, প্রথম বর্ষ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।
প্রেসনোট, বিবৃতি, প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে প্রেসনোট দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, ‘আজ ভোরের দিকে একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতকারী কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলে প্রবেশ করিয়া জোরপূর্বক ৭ জন ছাত্রকে মহসিন হল এলাকায় লইয়া গুলি করিয়া হত্যা করার সংবাদে সরকার গভীরভাবে মর্মাহত হইয়াছে। এই বর্বরোচিত কার্যের সংবাদ পাইয়া পুলিশ অবিলম্বে মহসিন হলে গমন করে এবং ছাত্রদের লাশগুলো উদ্ধার করে। তাহারা সমগ্র এলাকাটি ঘিরিয়া ফেলে এবং অনুরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধের জন্য প্রহরার ব্যবস্থা করে।’
ওই প্রেসনোটে বলা হয়, সরকার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সরকার ঘটনার তদন্তে নির্দেশ দিয়েছে এবং অপরাধীদের ধরার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আবদুল মতিন চৌধুরী সংবাদপত্রে পাঠানো বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম কামরুজ্জামান এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বিবৃতি দিয়ে ঘটনার নিন্দা জানান। ডাকসুর সহ-সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ছাত্র হত্যার তীব্র নিন্দা জানান।
খুন পরবর্তী ক্যাম্পাসে অবস্থা
সাত খুনের ঘটনায় সারা বাংলাদেশকে স্তব্ধ করে দেয়। নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতন বিদেশি পত্রিকায় খবরটি ফলাও করে ছাপা হয়। ঘটনার পরবর্তী সময় বিভিন্ন সংগঠন এই খুনের বিচার দাবি করে এবং তৎকালীন সরকার বিষয়টাকে বেশ সিরিয়াসলি গ্রহণ করে। মজার বিষয় হল এই খুন যার নেতৃত্বে হয়েছে সেই শফিউল পরের দিন গ্রেফতার এড়াতে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি মনিরুল হক চৌধুরীর সাথে সংগঠন হতে এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করে পত্রিকায় বিবৃতি দেন এবং শোক সভার আয়োজন করে। শোনা যায়, রাতে ৭ জনকে হত্যা করে সকালে ঢাকা মেডিকেলে লাশের পায়ের কাছে বসে এই ঘাতক শফিউল আলম প্রধানকে অনেকে কাঁদতে দেখেছিলো!
পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে মহসিন হল, সূর্যসেন হল ও জহুরুল হক হলে পুলিশ, বিডিআর ও রক্ষীবাহিনী একসাথে তল্লাশি পরিচালনা করে। অন্যদিকে ছাত্রলীগ সারা দেশে শোক দিবসের আহ্বান করে। শফিউল আলম প্রধানসহ ছাত্রলীগের তিন কর্মীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে তৎকালীন ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে। সাত খুনের বিচারের দাবি, খুনি সম্পাদকের মুক্তির দাবিতে ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এর মধ্যে ক্যাম্পাসে গ্রেনেড হামলায় ছাত্র ইউনিয়নের এক ছাত্রী আহত হয়! ৪ এপ্রিলের সাত খুনের পর ও ৮ এপ্রিলের ক্যাম্পাসে গ্রেনেড হামলায় ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৬ জুন পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে।
এছাড়া সারাদেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ হরতাল পালন করে। ছাত্রলীগ শুধু গ্রেফতারকৃতদের মুক্তিই দাবি করেনি; তারা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যান এবং সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দেয়। একজন খুনি সম্পাদকের জন্যে ছাত্রলীগ কতটা সংগ্রাম করেছে তা আমরা পত্রিকা পাতাতে দেখতে পাই।
তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন মনসুর আলী যিনি মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে (প্রথমে যোগাযোগ ও পরে স্বরাষ্ট্র এবং যোগাযোগ মন্ত্রী) দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের গ্রেফতার প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই শফিউল আলম প্রধানকে গ্রেফতার করেছে। ছাত্রলীগ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্যেও বিরোধিতা করে।
শফিউল আলম প্রধান গ্রেপ্তার
একদিন সাদাপোশাকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধানকে একটি গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যান। পরে পুলিশ এক বিজ্ঞপ্তিতে বলে, মুহসীন হলে সাত ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় ৮ এপ্রিল তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন শফিউল আলম প্রধান, কামরুজ্জামান ওরফে কামরুল ও মাহমুদুর রহমান ওরফে বাচ্চু।
দলের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুল হক চৌধুরী বিবৃতি হয়ে শফিউল আলম প্রধানের মুক্তি দাবি করেন। স্বরাষ্ট্র ও যোগাযোগমন্ত্রী এম মনসুর আলী বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শফিউল আলম প্রধানকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিক্ষোভের কোনো অবকাশ নেই।
শফিউল আলম প্রধানের মুক্তির দাবিতে ছাত্রলীগের পাঁচজন নেতা ও একজন নেত্রী আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অনশন শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে এবং তিন দিনের মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হল ছাড়তে বলা হয়।
বিচার ও মুক্তি
পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে এই হত্যাযজ্ঞে শফিউল আলম প্রধান সরাসরি জড়িত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই নারকীয় ঘটনা ঘটে বলে পুলিশের তদন্তে বলা হয়।
হত্যার ঘটনার বিচার শুরু হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগেই। মুহসীন হলে ছাত্রলীগের কমিটিতে ৩৭ জন ছিলেন। তাঁদের ২২ জন এই মামলার আসামি ছিলেন। একজন আসামির নাম ছিল ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী। তিনিসহ চার থেকে পাঁচজন দেশ থেকে পালিয়ে যান।
বিচারে খুনিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এর মধ্যে ঘটে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে প্রথমে সাজার মেয়াদ কমিয়ে ১০ বছর করেন। এর কিছুদিনের মধ্যে সবাইকে সাধারণ ক্ষমা দেখিয়ে কারাগার থেকে ছেড়ে দেন।
মুক্ত শফিউল আলম প্রধান মূলত বিএনপির আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে রাজনীতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। ১৯৮০ সালে গড়ে তোলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি বা জাগপা নামে নতুন রাজনৈতিক দল। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনীতি করে গেছেন। তিনি ২০১৭ সালে মারা যান।
কেন এই হত্যাকাণ্ড
তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুল হক চৌধুরী তাঁর বাসায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঘটনার একটি নির্মোহ বর্ণনা ও ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘এটা ছিল ইনসিডেন্ট’।
মনিরুল হক চৌধুরী বারবার বলেছেন, এটা কোনো পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ছিল না। তখন ছাত্রলীগের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। সুতরাং এই হত্যাকাণ্ড অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কোনো বহিঃপ্রকাশ হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
তাহলে কেন এতগুলো প্রাণ গেল? মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, ছাত্রদের একজনের বান্ধবী বা দুটো গ্রুপের কোনো এক গ্রুপের সদস্যের গার্লফ্রেন্ডকে টিজ করার ঘটনা ঘটেছিল। সেখানেই ঘটনার বীজ।
এস এম বাহালুল মজনুন (চুন্নু) তখন মুহসীন হলের ছাত্র, বিভাগ সমাজবিজ্ঞান। তিনি তখন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগেরও সদস্য। এস এম বাহালুল মজনুন বলেন, ৪ এপ্রিল মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের একজন ছাত্র নিগৃহীত হন ওই সাতজনের কারও দ্বারা। এর বিচার চান তিনি। শফিউল আলম প্রধান রাত ১০টায় মুহসীন হলে এসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়ো করেন এবং প্রস্তুত হয়ে আসতে বলেন। এরও আগে কোহিনুরদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ ছিল।
এস এম বাহালুল মজনুন বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কেউ কেউ কোনো কোনো আওয়ামী লীগ নেতাকে হয়ত একটু বেশি বা কম পছন্দ করতেন। সেটা সব সময় হয়। এখনো তা আছে। তাই বলে বলা যাবে না যে ছাত্রলীগের মধ্যে দুটো ধারা ছিল।
তবে অনেকেই বিশ্বাস করেন যে শেখ ফজলুল হক মনি ও তোফায়েল আহমেদের অনুসারীরা ছাত্রলীগের মধ্যে দুটি ধারা তৈরি করেছিলেন। যাঁরা খুন হয়েছিলেন, তাঁরা একটি ধারার। যাঁরা খুন করেছিলেন, তাঁরা বিপরীত ধারার। তবে এই দুই ধারা কখনো প্রকাশ্য হয়নি।