মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পর ঢাবি ভর্তিতেও মেয়েদের চেয়ে পিছিয়ে ছেলেরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। এর আগে মেয়েরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিকেও সংখ্যার দিক দিয়ে আগে ছেলেদের পেছনে ফেলেছে। উচ্চমাধ্যমিক কলেজেও অংশগ্রহণের দিক দিয়ে ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরাই এগিয়ে রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পিছিয়ে ছিল। সে ধারায়ও ধীরে ধীরে ছেদ পড়ছে।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। গত তিন বছরের সমীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। আর পুরুষ শিক্ষার্থী ছিল ৪৮ শতাংশ। এছাড়া এসএসসি-এইচএসসি নারী শিক্ষার্থীরাই সফল হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নারী শিক্ষার্থী বাড়ার এটাও একটা কারণ বলে মনে করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির তথ্যে দেখা যায়, সর্বশেষ ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া ছয় হাজার ৬০ শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ভর্তি হয়েছেন তিন হাজার ১০৫ জন। অর্থাৎ ভর্তি হওয়া মোট শিক্ষার্থীর ৫১ দশমিক ২৩ শতাংশই নারী। অথচ এক যুগ আগে ২০১০-১১ সেশনে নারীদের ভর্তির এই হার ছিল ৩৬ দশমিক ৯১ শতাংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর তুলনায় নারীরাই এগিয়ে আছে। বর্তমানে পুরুষদের তুলনায় আমাদের দেশে নারীরা অনেক এগিয়ে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত তিন বছরের সমীক্ষায় নারী শিক্ষার্থী ৫২ শতাংশ এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ৪৮ শতাংশ।
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া ছয় হাজার ৬০ শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ভর্তি হয়েছেন তিন হাজার ১০৫ জন। অর্থাৎ ভর্তি হওয়া মোট শিক্ষার্থীর ৫১ দশমিক ২৩ শতাংশই নারী। অথচ এক যুগ আগে ২০১০-১১ সেশনে নারীদের ভর্তির এই হার ছিল ৩৬ দশমিক ৯১ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন পুরস্কার, শিক্ষক নিয়োগসহ সব ধরনের প্রতিযোগিতায় নারীরা এখন এগিয়ে। শুধু শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেই নয়, আমার উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) থাকাকালীন সময়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও ৫৬ শতাংশ নারী দেখেছি। সুতরাং নারীরা এখন সব দিক থেকেই এগিয়ে রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধান জরুরি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরগুলোর ভর্তির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১০-১১ সেশনে ভর্তি হওয়া ৫ হাজার ৫৪৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে দু’হাজার ৪৮ জন নারী। ২০১১-১২ সেশনে ছয় হাজার ১২ জনের মধ্যে দু’হাজার ৯৭ জন নারী ভর্তি হয়েছেন। ২০১২-১৩ সেশনে পাঁচ হাজার ৮০২ জনের মধ্যে ভর্তি হয়েছেন দু’হাজার ১৯৮ জন নারী।
২০১৩-১৪ সেশনে ছয় হাজার ২৩০ জনের মধ্যে দু’হাজার ১৬৯ জন; ২০১৪-১৫ সেশনে ছয় হাজার ৪৩৬ জনের মধ্যে দু’হাজার ২৮১ জন এবং ২০১৫-১৬ সেশনে সাত হাজার ১৩৭ জনের মধ্যে দুহাজার ৯৩৪ জন নারী ভর্তি হয়েছেন।
এ ছাড়া ২০১৬-১৭ সেশনে সাত হাজার ২৪৭ জনের মধ্যে দু’হাজার ৭২১ জন নারী; ২০১৭-১৮ সেশনে ৭ হাজার ৩৬৫ জনের মধ্যে দু’হাজার ৬৭৩ জন; ২০১৮-১৯ সেশনে সাত হাজার ৪১৩ জনের মধ্যে দু’হাজার ৮২৫ জন; ২০১৯-২০ সেশনে সাত হাজার ৪৩১ জনের মধ্যে তিন হাজার ৬০৫ জন; ২০২০-২১ সেশনে সাত হাজার ৫৩৫ জনের মধ্যে তিন হাজার ৪১৪ জন; ২০২১-২২ সেশনে ছয় হাজার ২০৪ জনের মধ্যে দু’হাজার ৯২১ জন; ২০২২-২৩ সেশনে ছয় হাজার ৬০ শিক্ষার্থীর মধ্যে তিন হাজার ১০৫ জন নারী শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শীর্ষ ফলাফলধারীদের মধ্যে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। শিক্ষকরা বলছেন, সময়ের সঠিক ব্যবহার করার কারণে ঢাবির মেয়েরা ছেলেদের থেকে ফলাফলে এগিয়ে রয়েছে এটা সত্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর ছেলেদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া এবং আবাসিক হলে প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীদের গণরুমে থাকার কারণে শুরুতেই পিছিয়ে পড়েন তারা। তবে সার্বিকভাবে নারীদের এগিয়ে আসা দেশের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে
২০২২ ও ২০২৩ সালে প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কয়েকটি বিভাগে যুগ্মভাবে প্রথম হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। স্নাতক পর্যায়ে বিভাগে প্রথম হয়েছেন ছেলে ৪১ জন, মেয়ে ৫৪ জন এবং স্নাতকোত্তরে ছেলে ৪৭ জন, মেয়ে ৫৭ জন। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরে বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন মেয়ে ১১১ জন এবং ছেলে ৮৮ জন। ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা ২৩ জন বেশি।