০২ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:৫০

জাবি ছাত্রের সঙ্গে প্রেম-লিভ টুগেদার, অতঃপর বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে ধর্ষণের অভিযোগ

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বান্ধবীর সঙ্গে লিভ টুগেদার থেকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাঈমুর রহমান নাঈমের বিরুদ্ধে। 

সোমবার (১ এপ্রিল) বিকেলে ভুক্তভোগী নিজেই গণমাধ্যমে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় গত ৩১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ কমিটির সভাপতি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তিনি।

ভুক্তভোগী সাভার সরকারি কলেজ থেকে সম্প্রতি স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে নাঈমুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি তাজউদ্দীন আহমদ হলের ৫২৫ নম্বর কক্ষে প্রায়ই থাকেন বলে জানা যায়।

আরও পড়ুন: জাবি ক্যাম্পাসে মাভাবিপ্রবি ছাত্রকে দফায় দফার মারধর

অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত নাঈমের সঙ্গে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর প্রায় ৭ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক। প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হলেও তাদের মধ্যে পরবর্তীতে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। একপর্যায়ে নাঈমুর রহমান কুরআন শরীফ নিয়ে শপথ করে ভুক্তভোগীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত ২ মাসে একাধিকবার ধর্ষণ করে অভিযুক্ত নাঈমুর। সর্বশেষ গত ১১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জামসিং এলাকায় একটি বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। এরপর বিয়ে করার কথা জানালে নাঈমুর অস্বীকৃতি জানান বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

সম্প্রতি ২৯ মার্চ রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া চত্বরে ভুক্তভোগীকে ডেকে এনে চারুকলা বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের অথি সরকার ঐশী নামের এক নারী শিক্ষার্থীকে দিয়ে নাঈমুর মারধর করেন বলেও অভিযোগপত্রে বলা হয়। এসময় নাঈমুরের সাথে তার বন্ধু প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ৪৬ ব্যাচের আবুবকর রাশেদ ওরফে রাশু উপস্থিত ছিলেন।

ভুক্তভোগী বহিরাগত ওই ছাত্রী বলেন, আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি না দিলে কখনোই আমি নাইমুরের সাথে লিভ টুগেদারে যেতাম না। সে মূলত বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে। এমনকি বিয়ের কথা জানালে সে আমাকে জাবিতে ডেকে নিয়ে তার বন্ধুদের দিয়ে বেধড়ক মারধর করেছে। আমি এর ন্যায়বিচার চাই।

তবে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে নাঈমুর রহমান নাঈম বলেন, পারিবারিক ব্যবসা ও নিজের ব্যস্ততার কারণে ওর সাথে আমার রিলেশন কন্টিনিউ করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাকে আমি কখনোই জোর করে ধর্ষণ করিনি। তবে সে তার আত্মীয়ের বাসায় আমাকে লিভ টুগেদারের জন্য ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। আমি কখনোই তাকে ধর্ষণ করিনি। সে এভাবে অভিযোগ না দিয়ে চাইলে আমার পরিবারের সাথে আলোচনা করতে পারতো।

অন্যদিকে মারধরে বিষয়ে জানতে চাইলে নাঈমুর রহমান বলেন, সে ওইদিন নিজে ক্যাম্পাসে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীর সাথে মারামারিতে জড়ায়। পরে তাকে থামাতে গেলে আমাকে ব্লেম দেওয়া শুরু করে। আমি তাকে মারধর করিনি।

মারধরের ঘটনার বিষয়ে আবু বকর রাশেদ ওরফে রাশু বলেন, ওইদিন ওই মেয়ের সাথে মারামারি করেছে ঐশী। আমি মোটেই তার গায়ে হাত দেইনি। বরং মেয়েটিকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি।

তবে মারামারির কথা স্বীকার করে অন্য অভিযুক্ত অথি সরকার ঐশী বলেন, বহিরাগত মেয়েটিকে আমি চিনতাম না। পরে জেনেছি সে নাঈম ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড ছিল। প্রথমে আমাকে বহিরাগত মেয়েটি ঘুসি মারে। পরে আমি তাকে মেরেছি। সেসময় রাশু ভাই-ও উপস্থিত ছিল। তবে তিনি মেয়েটির গায়ে হাত দেননি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ কমিটির সভাপতি ও লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক জেবউননেছা বলেন, বহিরাগত একজন মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু ভুক্তভোগী এবং ঘটনাস্থল ক্যাম্পাসের বাইরের হওয়ায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারবো না। কারণ, এটা একটা পুলিশ কেইস। ভুক্তভোগী চাইলে সাভার বা আশুলিয়া থানার শরণাপন্ন হতে পারে।