রাবিতে স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ খাবার থেকে বঞ্চিত অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও হলগুলোতে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ খাবার প্রদানের ব্যবস্থা করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন। তবে মানতে হচ্ছে বিশেষ কিছু শর্ত। বঞ্চিত করা হয়েছে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এই বিশেষ খাবার সর্বজনীন না করায় তা বর্জন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল সাতটি ছাত্রসংগঠন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাধীনতা দিবসের এই বিশেষ খাবার দেওয়া বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে প্রতিটা হল কর্তৃপক্ষ। তবে তাতে জুড়ে দেওয়া হয়েছে কয়েকটি শর্ত। ১৯ মার্চ থেকে ২৪ মার্চের মধ্যে হলের নির্ধারিত কক্ষে ৩০ টাকা জমা নিয়ে টোকেন নিতে হবে। এ সময় আবাসিক পরিচয়পত্রও দেখাতে হবে। আবাসিক শিক্ষার্থী হলেও টোকেনবিহীন কাউকে খাবার দেওয়া হবে না। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের কেউই এই বিশেষ খাবার পাবেন না।
এমন শর্তযুক্ত নোটিশকেন্দ্রীক সমালোচনা হতে থাকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। আবাসিক-অনাবাসিক সকল শিক্ষার্থীকে এই বিশেষ খাবার দেওয়ার সুযোগের আবেদন জানিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল সাত ছাত্র সংগঠন।
যৌথ বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হল প্রশাসন স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে কেবল আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্যে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করে থাকে। যদিও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের আবাসিকতা না পাওয়াটাও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরই ব্যর্থতা। বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের এমন বৈষম্যমূলক আচরণ প্রশ্ন তৈরি করে, তাহলে স্বাধীনতা দিবস কি শুধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য? এই বৈষম্য প্রমাণ করে প্রশাসন মুখে স্বাধীনতার কথা বললেও অধিকারে সর্বজনীন হোক এটা চায় না। অথচ প্রতি বছর ইন্টারনেট ফি থেকে শুরু করে হলের যাবতীয় ফি অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের পরিশোধ করতে হয়।
তারা আরো জানান, একদিকে যেমন বিপুল সংখ্যক অনাবাসিক ছাত্রদের নিয়ম-মাফিক আবাসন দিতে ব্যর্থ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, তার উপর বিভিন্ন বিষয়ে এ ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার তৈরি করছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার তীব্র নিন্দা জানাই। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি সব ধরনের মূল্যমান পরিহার করে ভর্তুকি দিয়ে অবিলম্বে স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ খাবারে সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২৩ মার্চ সকালে আবারো যৌথ বিবৃতি দিয়ে বিশেষ খাবার বর্জন করে ওই ছাত্রসংগঠনগুলো।
মো. সুমন নামের এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, স্বাধীনতা দিবসের খাবার কি আমাদের দান করা হচ্ছে নাকি? হলে লোক কম, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার নেই। কিন্তু হলের আবাসিক হয়েও ৩০ টাকার একটা টোকেন নিতে গিয়ে এক প্রকার আলাদা ভাইভা দিতে হচ্ছে যেন জাকাতের খাবার কিংবা চুরি করতে গেছি। প্রতিটা আবাসিক শিক্ষার্থীর সব তথ্য থাকার পরও রোল জানতে চাওয়া, নাম জানতে চাওয়া আর সে সময় হলের বই ঢেকে রাখা যেন চুরি করতে গেছি এই ধরা পরে যাব।
এ বিষয়ে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে এই ধরনের আয়োজন দেখা যায়। তবে রাবিতে দেখলাম যে, শুধু আবাসিক শিক্ষার্থীদের এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তাও আবার নানা শর্তে। এটা অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে এক ধরনের উপহাস করার মতো হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা আবাসিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। একটা বিশেষ দিবসে একবেলা ভালো খাবারের সুবিধা থেকেও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। শুধু আবাসিক শিক্ষার্থীকে বিশেষ খাবার দিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মনে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের উচিত ছিল আরও উদার হওয়া। উদার হতে না পারলে এ ধরনের আয়োজন থেকে বিরত থাকা উচিত।
এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক একরামুল ইসলাম বলেন, এই খাবারটা মূলত আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্যই আয়োজন করা হয়। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য হল সমাপনীর আয়োজন করা হয়। হল সমাপনীতে আবাসিক-অনাবাসিক উভয় শিক্ষার্থীদের জন্যই আয়োজন করা হয়। এটা নিয়ে জটিল করার কিছু নেই।