সাম্প্রদায়িকতা রুখতেই মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজিত হয়: চিত্রশিল্পী হাসেম খান
অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে তোলার জন্যই মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়ে থাকে বলে মন্তব্য করেছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক চিত্রশিল্পী হাসেম খান।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুর ২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে মঙ্গল শোভাযাত্রা উপলক্ষ্যে ছবি এঁকে এবছরের কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করার পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
উদ্বোধন শেষে হাসেম খান বলেন, এই চারুকলা অনুষদ থেকে প্রতি বছর বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হয়। সেই পাকিস্তান আমল থেকে এটি শুরু হয়েছিল। তখন পাকিস্তানি সংস্কৃতির নামে এক ধরনের জগাখিচুড়ি আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছিল। তারই তীব্র প্রতিবাদ ছিল এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। এক মাস ধরে আমাদের শিল্পীরা মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নেবে। সমস্ত অশুভ শক্তিকে রুখে দেওয়ার জন্য আমাদের শিল্পীরা প্রস্তুত।
তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তান পেয়েছিলাম। তারা পূর্বাঞ্চলের বাঙালি সংস্কৃতিকে দাবিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার সব করেছে। পাকিস্তানের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বন্দুকের মুখে শহীদ মিনার, আজিমপুরে শহীদের কবর ও চারুকলায় আমরা আলপনা এঁকেছি। এই ধারাবাহিকতায় আজও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে চারুকলা কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, তরুণ বয়সে আমরা রক্তচক্ষুকে তোয়াক্কা করিনি। তাদের নিষেধ সত্ত্বেও আমরা বন্দুকের আলপনা এঁকেছি, শহীদ মিনারের আলপনা এঁকেছি, চারুকলা ভবনের সামনে আলপনা এঁকেছি। চারুকলার তৎকালীন ছাত্র-শিক্ষকরা এ বাংলাকে জাগিয়ে তোলার জন্য ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে যা যা করার দরকার তা সব করেছিলেন। আমরা চাই জনসাধারণ আমাদের সাথে একাত্ম হোক। কারণ এ আয়োজন আমাদের আগামী প্রজন্মের কাছে ইতিহাস তুলে ধরার জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নেসার হোসেনসহ বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক এবং দেশের বিশিষ্ট শিল্পীরা উপস্থিত ছিলেন। এ বছর কবি জীবনানন্দ দাশের ‘তিমির হননের গান’ কবিতা থেকে ‘আমরা তো তিমিরবিনাশী’ বাক্যটিকে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, আমরা এযাবৎ অনেকের বাণীই তুলে ধরেছি। তবে আমাদের সাহিত্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কবি জীবনানন্দের কোনো পঙক্তি সামনে আনিনি। তাই এবার কবির তিমির হননের গান কবিতার একটি লাইন আমরা প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছি। এটি তরুণ প্রজন্মের মুখে উচ্চারিত হবে।