১৩ মার্চ ২০২৪, ১৭:২৬

মসজিদে রোজা নিয়ে আলোচনা, ঢাবি ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

মসজিদে রোজা নিয়ে আলোচনা, ঢাবি ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসের মসজিদে রোজা নিয়ে আলোচনার জেরে ‘শিবির আখ্যা’ দিয়ে ঢাবি ছাত্রদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এতে আইন বিভাগের ৫ ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছেন। বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের বাসভবন বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের গেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন— সাকিব আজাদ তুর্য, শাহিনুর আলম রাসেল, রাফিদ হাসান সাফওয়ান, ফাহিম দস্তগীর, রেজোয়ান আহমেদ রিফাত। প্রত্যেকেই ঢাবির আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। হামলার সময় তারা একসঙ্গে থাকলেও সাফওয়ান ও ফাহিম সামনে থেকে সবচেয়ে বেশি মার খাওয়ার পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে ধর্মীয় আলোচনার সময় টাওয়ার কল্যাণ সমিতির সভাপতি সিরাজুল হক এসে তাদেরকে চলে যেতে বলে এবং একই সময় শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল সুজন এসে তাদেরকে হুমকি ধামকি দিলে তারা বের হয়ে যাওয়ার সময় ভবনের মূল ফটকের সামনে থেকে প্রায় ৪৫-৫০ জন তাদের ওপর হামলা করে এবং পরে বাইক নিয়ে চলে যায়।

ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে সুজনের ছবি দেখালে ভুক্তভোগীরা তাকে চিনতে পারে এবং জানান সুজনই মূলত সামনে থেকে এ হামলার লিড দিয়েছে। তাওহীদুল সুজন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডুর অনুসারী। 

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী আবু তালহা বলেন, আমরা ১২-১৩ জন জোহরের নামাজ বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদেই পড়ার পর রোজার ফজিলত নিয়ে আলোচনা করছিলাম। এটা কোনো দলীয় বা রাজনৈতিক কোনো কিছু ছিল না। তখনই বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কল্যাণ সমিতির সভাপতি পরিচয়ে একজন এসে আমাদেরকে বলল এখানে আলোচনা করা যাবে না। উনার কথা শেষ না হতেই আরেকজন এসে আমাদেরকে হুমকি-ধামকি দিতে থাকলে আমরা বের হয়ে যাওয়ার কথা বলি।

তিনি আরও বলেন, আমরা যখন গেইট দিয়ে বের হই এমন সময় প্রায় ৫০ জনের মত বাইক নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা কাউকেই চিনতে পারি নি। আমাদের পাঁচ থেকে ছয়জন গুরুতর আহত হয়েছে। এখনও আমরা সাফওয়ান ও ফাহিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। ওরা সামনে থেকে মার খেয়েছে।

আহত রেজোয়ান আহমেদ রিফাত দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রমজান উপলক্ষ্যে রমজান কীভাবে কাজে লাগাতে পারি, এ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিল। সেখানে হঠাৎ একজন এসে কল্যাণ সমিতির পরিচয় দিয়ে বললেন এখানে এগুলা করা যাবে না। তারপর আমরা বের হচ্ছিলাম এমন সময় বাইরে ১৫-২০ টা মোটরসাইকেলে করে এসে  তারা যেভাবে পারছে আমাদেরকে  মারধর করছে। কোন বিভাগ এটা জানার পর থেকে হামলা করেছে। আমাকে মাটিতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেছে।

বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের সিকিউরিটি গার্ড কবির হোসেন বলেন, ছাত্ররা বের হয়ে যাচ্ছিলো এমন গেটের বাইরে থেকে কারা যেন হামলা করলে তারা ভেতরের ঢুকার চেষ্টা করছিল কিন্তু হামলাকারীরা তাদেরকে টেনে বাইরে বের করে মারছিল।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কল্যাণ সমিতির সভাপতি সিরাজুল হক বলেন, তিনি সুজনকে চেনেন না। তবে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন তিনি সুজনকে চেনেন এবং সুজন সেখানে উপস্থিত ছিল। শিক্ষার্থীদেরকে বের হয়ে যেতে বলেন বলেও জানান তিনি। তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এ ঘটনায় সভাপতি সিরাজুল হকের সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে। 

এ ঘটনায় অভিযুক্ত তাওহীদুল সুজন সম্পূর্ণ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় আমি কোনো ভাবেই সম্পৃক্ত না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে আমি কেন মারতে যাবো। আমি শুনলাম ফেইসবুক থেকে আমার নাম ছবি নিয়ে আমার নামে এগুলো ছড়ানো হচ্ছে। এর পেছনে তাদের কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে তবে আমি কিছুই জানি না।