১০ মার্চ ২০২৪, ১৪:১৬

ট্রেনে বিলম্বে যাওয়া সবাই কি রাবির ভর্তি পরীক্ষা দিতে পেরেছিল?

  © ফাইল ছবি

গত সপ্তাহে রেলের একজন কর্মকর্তার নেয়া বিশেষ উদ্যোগের ফলে পরীক্ষা শুরুর মাত্র ২২ মিনিট আগে একটি ট্রেনে করে শিক্ষার্থীদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছানোর খবর ভাইরাল হয়। তবে পরে এ নিয়ে অনেকে সংবাদ প্রকাশের পর পরীক্ষার্থী সংখ্যা এবং তারা সবাই পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছেন কী-না সামাজিক মাধ্যমে এমন প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।

আগের রাতে ট্রেনটির ঢাকায় আসতে বিলম্ব হওয়ায় এবং যাত্রার দিন ইঞ্জিনে হঠাৎ ত্রুটির কারণে গত ৫ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে নির্ধারিত সময়ে ট্রেনে উঠেও গন্তব্যে পৌঁছাতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল ভর্তিচ্ছুদের। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদগুলোতে বলা হয়, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদারের তাৎক্ষণিক উদ্যোগে ট্রেনের ত্রুটি দ্রুত কাটিয়ে এবং রাবি প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের কারণে প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনিশ্চয়তা লাঘব হয়।

তবে গত ৫ মার্চ ট্রেনের বিলম্বের কারণে ট্রেনে রাজশাহী পৌঁছানোর পর কেউ কেউ বিলম্বে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করলেও কেউ কেন্দ্রে গিয়েও পরীক্ষা দিতে পারেনি এমন তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জানা নেই বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।

দেশের অন্যতম বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার মোট একক আবেদনকারী ছিল এক লাখ ৫৪ হাজার ৯৭৭ জন। তবে এদের মধ্যে অনেকে একাধিক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে এ ইউনিটে ৯১ শতাংশ, বি ইউনিটে ৯০ শতাংশ এবং সি ইউনিটে ৮২ শতাংশ আবেদনকারী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন রাবি জনসংযোগ বিভাগের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘স্পেসিফিক সংখ্যা আমরা হিসেব করিনা। আর সাধারণত কিছু শিক্ষার্থী ইতোমধ্যেই অন্যত্র ভর্তি হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিবছরই আবেদনকারী ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যায় এমন পার্থক্য থাকে।

আরও পড়ুন: ৭০০ ভর্তিচ্ছুর স্বপ্ন বাঁচিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন রেল কর্মকর্তা অসীম

ওইদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি ইউনিটে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা ছিল। মূলত পাঁচ, ছয় এবং সাতই মার্চ তিনদিনের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পাঁচই মার্চ মঙ্গলবার ভোরের ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠেছিলো বহু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক। তবে পাঁচই মার্চ বিকেলে পরীক্ষার কতজন শিক্ষার্থী ওই ট্রেনে ছিল তার সঠিক সংখ্যা রেলওয়ে ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেউই দিতে পারেনি। এটি জানা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষেও সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

তবে রেল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই উপাচার্যকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা জানানোর কারণে ৭০০ জনের কথা আসছে। যদিও ১২৫ জনের একটি তথ্য উপাচার্য দিয়েছেন, যারা নিজেরাই কয়েকটি হলে (পরীক্ষার) এসে দেরির কারণ হিসেবে ট্রেনে আসার কথা জানিয়েছিলো বলে বিবিসিকে জানান পাণ্ডে।

ধূমকেতু এক্সপ্রেস সেদিন সকাল ছয়টায় রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে বেলা বারটার আগেই গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু আগের রাতে ওই ট্রেনটি সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস নামে ঢাকায় আসার সময় রেললাইনে ত্রুটির কারণে ৩ ঘণ্টা বিলম্ব হয়। যার কারণে বেলা সাড়ে তিনটায় রাজশাহী পৌঁছে পরীক্ষা দেয়া কঠিন হবে মনে করে হৈচৈ শুরু করলে, রেলের গার্ডরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানায়।

ভর্তিচ্ছুদের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে যখন ট্রেন ছাড়ার পর মাঝপথে এর ইঞ্জিনেও ত্রুটি দেখা দেয়। তবে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার দ্রুত কাছাকাছি অন্য ট্রেনের ইঞ্জিন নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে এবং রাবি প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে সমন্বয় করার কারণে ট্রেনে থাকা শিক্ষার্থীরা গন্তব্যে পোঁছাতে পারে। তবে কতজন শিক্ষার্থী ট্রেনে ছিল বা এর মধ্যে কতজন পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছে বা পারে নি তার সঠিক ব্যাখ্যা রেল কর্তৃপক্ষ বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেউ দিতে পারেনি।

এ বিষয়ে বিবিসিকে রেল কর্মকর্তা মি. তালুকদার বলেছেন, ‘ছাত্ররা গার্ডকে জানায় যে যেভাবেই হোক তিনটার মধ্যেই তাদের পৌঁছানো যাবে কী-না। আমরা জানতে চেয়েছিলাম কত শিক্ষার্থী আছে ট্রেনে। তারা গার্ডদের মাধ্যমে জানায় যে সাতশোর মতো আছে। গার্ডরাও ট্রেন ঘুরে আমাদের একই ধারণা দেয়ার পর আমরা এ নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম।’

এরপরে মি. তালুকদার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বিষয়টি জানান এবং পরীক্ষাটি কিছুক্ষণ পেছানোর ব্যবস্থা করা যায় কী-না অনুরোধ করেন। পরে উপাচার্যের নির্দেশে অধ্যাপক পাণ্ডের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগ ও কথা হয় রেল কর্মকর্তার।

ভর্তি পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট পর সাধারণ কোন পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষার হলে প্রবেশের অনুমতি দেয় না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে উপাচার্য খুব চাইছিলেন, ওরা যেন পরীক্ষাটা দিতে পারে, জানান অধ্যাপক পাণ্ডে। তিনি বলেন, ‘এরই জের ধরে প্রতি হলে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন যে ট্রেনের শিক্ষার্থীরা আসলে, হলগুলোতে যেন তারা প্রবেশ করতে পারে। এ কারণে রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও ১১ বার কথা বলেছি আমরা।’

তবে পাঁচই মার্চের পরীক্ষায় সেটি শিথিল করা হয়েছিলো এবং যারা এসেছে তারা পরীক্ষা দিতে পেরেছে। কেউ এসেছে, কিন্তু পরীক্ষা দিতে পারেনি - এমন তথ্য তাদের জানা নেই বলে জানান অধ্যাপক পাণ্ডে। তিনি বলেন, ট্রেন পৌঁছানোর পর কেউ কেউ ৩-৪ মিনিটের মধ্যে হলে এসে পড়ে। কারও কারও হয়ত ১০-১৫ মিনিট লেগেছে। কিন্তু আমাদের জানা মতে এখানে আসার পর কেউ পরীক্ষা মিস করেনি।

প্রসঙ্গত, রাবি ভর্তি পরীক্ষার দিন ৫ মার্চ ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি তিন ঘণ্টা বিলম্বে সোয়া নয়টায় ঢাকা ছেড়ে রওনা হয়। ভেতরে উদ্বিগ্ন পরীক্ষার্থীরা আর বিভিন্ন স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া অন্য যাত্রীরা ছিল। ট্রেনটি জয়দেবপুর ছাড়ার পর পুরোপুরি পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্বে এলে মি. তালুকদার পরীক্ষার্থীদের বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে। এরপর উপাচার্য ভর্তি কমিটির সাথে সভা করেন এবং একই সঙ্গে রেল কর্মকর্তাদের অগ্রগতি সম্পর্কে বারে বারে জানাতে নির্দেশনা দেন।

এদিকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌঁছানোর পর সোয়া তিন ঘণ্টা বিলম্বে রওনা দেওয়া ট্রেনটির ইঞ্জিন আবার বিকল হয়ে পড়ে। ট্রেনের চাকাই জ্যাম হয়ে গিয়েছিলো, নড়ানোই যাচ্ছিল না। কর্মকর্তারা তখন আশেপাশে কাছাকাছি কোথায় ভালো ইঞ্জিন আছে কী-না খুঁজতে শুরু করেন। এর মধ্যে কর্মকর্তারা হিসেব করে দেখেন যে ওই অবস্থায় নতুন ইঞ্জিন এনে সেটি জোড়া দিয়ে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী পৌঁছালেও ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে না শিক্ষার্থীরা।

এর মধ্যে চিলাহাটি এক্সপ্রেস নামের আরেকটি ট্রেন উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে সেখানে পৌঁছালে সেই ট্রেনের ইঞ্জিন শিক্ষার্থীদের বহনকারী ধূমকেতু এক্সপ্রেসের সাথে সংযুক্ত করা হয়। ট্রেনের ভিতরে মাইকিং করে অন্য যাত্রীদের বলা হয় পরবর্তী স্টেশনে বা একেবারে রাজশাহী গিয়ে নামতে যাতে ট্রেনকে মাঝপথে আর দাঁড়াতে না হয়।

এরপর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী গতি বাড়িয়ে বেলা তিনটা ৩৮ মিনিটে ট্রেনটি রাজশাহী পৌঁছায়। সেখানে নেমেই শিক্ষার্থী দ্রুত যার যার পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার চেষ্টা করে। অথচ রাজশাহীতে এর পৌঁছানোর কথা ছিল বেলা ১২টার আগেই।

সূত্র: বিবিসি বাংলা