ইন্টারনেটে ঘুরছে রাবির ৮ লোগো, ভুল করছে প্রশাসনও
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অফিসিয়াল ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে হরহামেশাই ব্যবহার হচ্ছে ভুল ও বিভ্রান্তিকর লোগো। অন্যান্য ওয়েবসাইট, সার্টিফিকেট, স্টুডেন্ট আইডি কার্ড, আরইউ কন্টাক্টস অ্যাপ, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যানার-নোটিশ এবং বাসগুলোয় দেখা মিলছে এমন দৃশ্যের। খোদ প্রশাসনই এমন লোগো ব্যবহার করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়াগুলোও দীর্ঘদিন ধরে ভুল এবং বিকৃত লোগো ব্যবহার করছে। বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উইকিপিডিয়া, গুগল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আট ধরনের লোগো ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে সাতটিই ভুল ও বিভ্রান্তিকর। চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারির আগে উইকিপিডিয়ায় রাবির চার ধরনের লোগো দেখা যায়। এর সবগুলোই বিভ্রান্তিকর ও ভুল। শুধু অনলাইনে না, খোদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবহার করছে এসব বিভ্রান্তিকর লোগো। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা হারাচ্ছে বলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মনে করছেন।
গত ১ মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে আয়োজিত ভর্তি পরীক্ষা-সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছিল। সে লাইভে রাবির তিন ধরনের লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোয় দু’ধরনের লোগোর সংযুক্তি আছে। ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্রেও দু’টি লোগোর ব্যবহার দেখা গেছে।
উইকিপিডিয়া, গুগল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আট ধরনের লোগো ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে সাতটিই ভুল ও বিভ্রান্তিকর। চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারির আগে উইকিপিডিয়ায় রাবির চার ধরনের লোগো দেখা যায়। এর সবগুলোই বিভ্রান্তিকর ও ভুল। শুধু অনলাইনে না, খোদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই ব্যবহার করছে এসব বিভ্রান্তিকর লোগো।
লোগোতে ব্যবহৃত রঙের তারতম্য ঘটলেই সেটি ভুল হিসেবে গণ্য হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোর ব্যাখ্যা দেখলেই বোঝা যাবে রং কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বৃত্ত ও মূল গ্রন্থের রং কোবাল্ট ব্লু; যা আকাশ, নদী ও উদারতার রং। যদি ভিন্ন রং ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেটা আকাশ, নদী ও উদারতাকে প্রকাশ করবে না। এছাড়া গ্রন্থের বহিঃরেখা রক্তলাল না হলে জাতীয় পতাকার রং প্রকাশ করবে না। আবার গ্রন্থের মধ্যরেখা সোনার মতো রঙ না হলে তা শিক্ষার গুণগত মান নির্দেশ করবে না।
এসব ভুল লোগোর ব্যবহার বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের পরিচালিত ফেসবুক পেজ ‘আরইউ ইনসাইডার্স’। মূল লোগো ব্যবহার নিশ্চিত করতে তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে প্রচার করে আসছেন। সবশেষ উইকিপিডিয়ায় মূল লোগো সংযুক্ত করতে উইকিপিডিয়া বাংলাদেশ নির্বাহী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাসুম আল হাসান রকির সাথে যোগাযোগ করেন তারা।
তাদের উদ্যোগে দীর্ঘ ৯ বছর পর উইকিপিডিয়ায় সংযুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লোগো। রকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হওয়ায় কাজটা সহজ হয়েছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠাকাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কাঠামোর লোগো পাওয়া যায়। একটি স্বাধীনতার আগে ব্যবহৃত হয়েছে। সেটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন লোগো। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসে ১৯৭৪ সালে তোলা একটি ছবিতেও লোগোটি পাওয়া যায়। অন্যটি দেশ স্বাধীনের পর, যা বর্তমানে রয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাকালীন লোগোয় ছিল পাঁচটি তারকা। হরিণের মাথার আকৃতি এবং সবুজ ও নেভি-ব্লু রং। এর ওপরে ছিল পবিত্র আল কুরআনের সূরা ইউসুফের আয়াত ‘ওয়া ফাওকা কুল্লি জি ইলমিন আলিম’। নিচে ব্যানারে ছিল বাংলায় লেখা ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’।
স্বাধীন রাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রতীকের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। শিল্পী গোলাম সারোয়ারের আঁকা মূল নকশা নির্বাচনের পর কিছুটা পরিবর্তন করে বর্তমান প্রতীকে রূপ দেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও শিল্পী হাশেম খান।
বতর্মান প্রতীকে রয়েছে একটি বৃত্ত। তা বিশ্বের প্রতীক। একটি উন্মুক্ত গ্রন্থ যা জ্ঞানের প্রতীক এবং আকাশদৃষ্টি থেকে শাপলা ফুল; যা সৌন্দর্য, পবিত্রতা ও জাতীয় প্রতীক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের স্মারকে উল্লেখ্য করা হয়েছে, একটি সূর্য অর্থাৎ প্রাণ ও শক্তির উৎস। প্রতীকের রং বৃত্ত ও মূল গ্রন্থ কোবাল্ট ব্লু; তা আকাশ, নদী ও উদারতার রং।
এছাড়া গ্রন্থের বহিঃরেখা রক্তলাল; যা জাতীয় পতাকার রং। গ্রন্থের মধ্যরেখা সোনার মতোই মূল্যবান শিক্ষার গুণগত মান নির্দেশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের স্মারক থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুজন সেন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোর সঙ্গে রং খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লোগোতে রং পরিবর্তন হয়ে গেলে তা ব্যাখ্যার সঙ্গে মেলে না। তাই সঠিক লোগো ব্যবহারে সচেতন হওয়া জরুরি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটে লোগো নামে ফাইল খোলা দরকার। এতে সবাই সঠিক লোগো সেখান থেকে পেতে পারেন।
লোগোর বিষয়ে ফেসবুক পেজ ‘আরইউ ইনসাইডার্স’ জানায়, ‘লোগো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডেন্টিটি প্রকাশ পায়। কিন্তু প্রশাসন কর্তৃক নিত্যনৈমিত্তিক কাজে একেকদিন একেক লোগো ব্যবহার করে, যার ফলে এটি সবার মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। একটি প্রতিষ্ঠানের এতগুলো লোগো থাকতে পারে না। কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের লোগো আমরা প্রথম ওয়েবসাইটেই খুঁজি।’
আরো পড়ুন: লাইব্রেরিতে মারামারি করেন ঢাবি ছাত্রীরা, জবি ছাত্রীরা কিচেনে
ওয়েবসাইটে ঠিক থাকলেও অন্যান্য কাজে রাবি প্রশাসনেই নানা সময়ে একাধিক লোগো ব্যবহার করতে দেখা যায়। বিষয়টি সবার মাঝে ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তি। তাদের চেষ্টায় উইকিপিডিয়ায় রাবির লোগো আপডেট হয়েছে। এবার পালা রাবি প্রশাসনের। তাঁরাও উদ্যোগ নেবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, যত্রতত্রভাবে লোগো ব্যবহার করা ঠিক না। অনেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লোগো সম্পর্কে জানেন না। ফলে ভুলটা হয়। মূল লোগো ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেব।