সিদ্ধান্ত বদল, রমজানে রাবির হলে চলবে গরুর গোশত
সনাতনী ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সৈয়দ আমীর আলী হলে রমজান মাসে সেহরিতে গরুর গোশত রান্নার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় হল প্রশাসন। এমন সিদ্ধান্তকে ঘিরে দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। ফলে ফের আলোচনার মাধ্যমে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় হল কর্তৃপক্ষ। ফলে সেহরিতে গরুর গোশত রান্নায় থাকছে না কোনো বাঁধা। তবে যেদিন গরুর গোশত রান্না হবে সেইদিন হাড়ি-পাতিল, থালাবাসন, চামচ, জগ-গ্লাসসহ সকল তৈজসপত্র ভাড়া করে আনা হবে।
শুক্রবার (৯ মার্চ) রাতে ১০টায় সনাতনী ও মুসলিম শিক্ষার্থীসহ প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর উপস্থিততে এমন সিদ্ধান্ত নেয় হল কর্তৃপক্ষ।
গতকালের সিদ্ধান্তকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখা যায় পক্ষে-বিপক্ষে নানা তর্ক-বিতর্ক। বাহাউদ্দীন নামক এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন ‘তারা (হিন্দু ভাইয়েরা) যেসব হোটেলে খাবার খায় সেসব হোটেলে কি গরুর গোশত রান্না করা হয় না?’
সিফাত তালুকদার নামক আরেক শিক্ষার্থী লিখেন, ‘ঘুম থেকে উঠে বেলা ১২টায় আর টেনশন করতাছে রাত ৩টায় মুসলিমরা কি খাবে তাই নিয়ে। এটা উগ্রপন্থী চিন্তাভাবনা ছাড়া আর কিছুই না।’ কেউ কেউ ‘তলে তলে দেশটা মদির’ এমন মন্তব্যও করেছেন।
এ বিষয়ে আবিদুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, হিন্দু ধর্মে গরুর গোশত খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ইসলাম ধর্মে তো নাই। তাহলে আমরা কেন গরুর গোশত খেতে পারব না? যাহোক হল প্রশাসন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করায় আমরা খুশি। আমরা চাই হিন্দু, মুসলিম ভাই ভাই হিসবে থাকতে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনু মোহন বাপ্পা বলেন, আমাদের হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সকলের সাথেই সম্প্রীতির সম্পর্ক। আজ সকাল থেকে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এখন যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাতেও আমরা খুশি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান টুটুল বলেন, আসলে বিষয়টি মোটেও এমন নয়। রমজান মাসে যেহেতু সব হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকে সেহেতু সনাতনী শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে সবাই মিলে গরুর গোশত রান্না না করার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ সনাতনী শিক্ষার্থীরা সেহরির সময়ে খাবার নিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কিছু শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুলভাবে বিষয়টিকে উপস্থাপন করেছে। ফলে দেশব্যাপী সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। দু’শয়ের অধিক শিক্ষার্থীর নিয়ে আজ আমরা আবারও আলোচনায় বসে সকলের মতামতের ভিত্তিতে গরুর গোশত রান্নার উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, তবে যেদিন গরুর গোশত রান্না হবে সেদিন সনাতনী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা রান্না হবে। তার জন্য যাবতীয় তৈজসপত্র ভাড়া করে আনা হবে। যার ব্যয়ভার হল প্রশাসন বহন করবে। আমাদের সনাতনী ও মুসলিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেয়, সকলেই সম্প্রীতির সাথে থাকে। যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিংবা না বুঝে বিষয়টিকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে প্রবাহিত করেছেন তাদের কাছে অনুরোধ এমন ঘৃণিত কাজ করবেন না। আগে সত্যতা যাচাই করবেন।