ছাত্রীকে আটকে নেতাদের দিয়ে পেটানোর হুমকি রাবির ৫ ছাত্রলীগ নেত্রীর
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একটি আবাসিক হলে কক্ষের দরজা লাগিয়ে এক ছাত্রীকে মারধরের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ৫ ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে। বুধবার (৬ মার্চ) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হলের ৩২৩ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাটি জানাজানি হয়। ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বিকেলে হল ফটকে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
হুমকির ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রীরা হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তামান্না আক্তার, রহমতুন্নেছা হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা আশরাফী ওরফে রিমি, ছাত্রলীগ কর্মী লামিয়া ইসরাত, নওরীন শৈলী ও রিয়া।
তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। অপরদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রোজিনা আক্তার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, গত তিন মাস আগে বিশেষ সুপারিশে আবাসিকতা ছাড়াই হলের ৩২৩ নম্বর কক্ষে ওঠেন ছাত্রলীগ কর্মী লামিয়া ইসরাত। কিন্তু হলে ওঠার তিন মাস হলেও তিনি ওই কক্ষে অবস্থান করেন মাত্র দুই থেকে তিন দিন। ছাত্রী হলের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী নিয়মিত কক্ষে না থাকলে তিনি কক্ষে কোনো অতিথি রাখতে পারবেন না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নিজের আসনে দুজন পরীক্ষার্থীকে থাকতে দেন লামিয়া। কক্ষে থাকাকালীন ওই দুই অতিথির সঙ্গে রোজিনা (ভুক্তভোগী) অসদাচরণ করেন বলে লামিয়ার কাছে অভিযোগ করেন তারা (অতিথিরা)।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ছাত্রলীগ নেত্রী ফাতেমা আশরাফী, নওরীন শৈলী ও রিয়াকে নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করেন লামিয়া। প্রবেশ করেই দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে মারধরের হুমকি দিয়ে শাসাতে থাকেন। তিনি চিৎকার করলে আশপাশের কক্ষ থেকে কয়েকজন ছাত্রী গিয়ে প্রতিবাদ করেন।
এ সময় ছাত্রলীগ নেত্রীদের সঙ্গে যোগ দেন তামান্না আক্তার। তখন শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ নেতাদের দিয়ে পেটানোর হুমকি দিয়ে কক্ষ ত্যাগ করেন তারা। এ ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী হলে প্রবেশ করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে রোকেয়া হলের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয় হলের প্রায় অর্ধশত আবাসিক ছাত্রী। এ সময় তারা ছাত্রলীগ নেত্রী কর্তৃক হুমকি ও মেয়েদের হলে ছাত্রলীগ নেতাদের প্রবেশের সুষ্ঠু বিচার এবং সুষ্ঠু আবাসনব্যবস্থার দাবি জানান। আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা ‘হলে কেন নিয়ম নাই, বৈধভাবে সিট চাই’ এমন স্লোগান দেন।
অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে হলের আবাসিক শিক্ষক দুলাল চন্দ্র কবিরাজসহ আরও বেশ কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা কর্মসূচি চালিয়ে যান। একপর্যায়ে সেখানে আসেন হল প্রাধ্যক্ষ জয়ন্তী রানী বসাক। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন।
তবে শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব।
তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হলে প্রবেশকারী ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ করেন।
ভুক্তভোগী রোজিনা আক্তার বলেন, এ ঘটনার পর তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপত্তা চান। কারণ, তার পরিণতিও বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মতো হতে পারত।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ কর্মী লামিয়া ইসরাত কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। এছাড়া ছাত্রলীগ নেত্রী তামান্না আক্তার তন্বীরও মোবাইলফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
আর হল প্রাধ্যক্ষ জয়ন্তী রানী বসাক ]বলেন, ঘটনাটি তদন্তে আবাসিক শিক্ষক দুলাল চন্দ্র কবিরাজকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আশা করছেন, তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার আসল সত্যতা উঠে আসবে। আর তদন্ত রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নেবেন।