০৬ মার্চ ২০২৪, ১১:৩৩

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবিদ তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা

মুহাম্মদ আবু আবিদ  © সংগৃহীত

কল্পনা বিলাসী একজন মানুষ। কল্পনায় কখনও আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখেন, কখনও বা মাটিতে বসে রাজত্ব করার। তবে পুরো কল্পনাটুকু যেন মানবিকতার সূত্র গাঁথা। তার স্বপ্নের যেন কোন শেষ নেই। স্বপ্নটাকে লালন করে নিজের মধ্যে। মনের অভ্যন্তরে। মানবসেবায় সদা প্রস্তুত। মানুষের ভালোবাসা প্রাপ্তিই তার পারিশ্রমিক। খুব তাড়াতাড়ি মানুষকে কাছে টেনে নিতে পারাটাই তার ক্ষমতা।

বলছি সামাজিক সংগঠন দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবু আবিদের কথা। এছাড়াও তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। চট্টগ্রামের হালিশহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পৈতৃক নিবাস পটুয়াখালীতে। ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিচরণ ছিল তার।

মুহাম্মদ আবু আবিদ ২০১৪ সালে দেশব্যাপী রিয়েলিটি শো মার্কস অলরাউন্ডার প্রতিযোগিতায় জাতীয় সম্মাননা অর্জন করে। তারপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পাশাপাশি সামাজিক কাজ করতে আরম্ভ করেন মুহাম্মদ আবু আবিদ। তারপর প্রায় ৫ বছর পর প্রতিষ্ঠা করেন 'দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশন' নামক একটি সামাজিক সংগঠন। 

দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশন ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও একের পর এক ব্যতিক্রম আইডিয়ার বাস্তবায়ন ও সামাজিক কাজে শৈল্পিকতা তুলে ধরায় খুব অল্প সময়ে তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ইতিমধ্যে তাদের ফ্রী ঈদ শপি, আমরা মালি, ডাল-ভাত, শীতের রাতে গরম খাবার, অন্যরকম ভ্যালেন্টাইন ডে, অন্যরকম থার্টি ফাস্ট নাইটসহ বেশ কয়েকটি প্রজেক্ট দেশ-বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে। সামাজিক কাজকে ব্যতিক্রমভাবে উপস্থাপন করে তরুণদের সম্পৃক্ত করাই যেন মুহাম্মদ আবু আবিদ এর নেশা ও পেশা। 

সামাজিক কাজগুলোকে নতুনভাবে উপস্থাপন করার জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানান সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি। তারমধ্যে ভারত থেকে মহাত্মা গান্ধী আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার-২০২৪, নেপাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল আইকনিক এক্সিলেন্সি এওয়ার্ড-২০২৩, বাংলাদেশ ইয়ুথ ভলেন্টিয়ার এওয়ার্ড-২০২৩, করোনা সম্মুখ যোদ্ধা এওয়ার্ড বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মানবিক কাজের জন্য তিনি বহুবার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পেয়েছেন গণসংবর্ধনা। 

মুহাম্মদ আবু আবিদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দেশ ও পৃথিবী দুটোই আগাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে সামাজিক কাজগুলো যুগের সাথে আগাচ্ছে না। স্মার্ট বাংলাদেশে সামাজিক কাজগুলোই স্মার্টলি করতে হবে। আজকের তরুণ সমাজকে তাদের চাহিদা ও মানসিকতা অনুযায়ী সামাজিক কাজে যুক্ত করতে হবে। যেমন- অনেক তরুণ সাংবাদিক আমার সহযোদ্ধা রয়েছেন। তারা আমাদের সংগঠনের সামাজিক কাজগুলো প্রচারণা করে স্বেচ্ছাসেবী কাজে অংশ নিচ্ছেন।

এটাতেও তো আমাদের কাজ ত্বরান্বিত হয়। উপকার হয়। ঐ শ্রমটা তিনি বিনামূল্যে দিচ্ছেন। ওটার পারিশ্রমিক দিয়ে আমি আরও ২ টা মানুষকে সহযোগিতা করতে পারছি। অর্থাৎ আপনি যে জায়গায় আছেন সেখান থেকেই আমাদের সহযোগিতা করুন। আপনি অর্থ ছাড়া সামাজিক কাজ করতে পারবেন না, এমন ধারণাকে আমি ভুল প্রমান করার জন্যই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। 

তিনি আরও জানান, আমি যখন সংগঠন শুরু করেছি তখন কোন ফান্ড এর ব্যবস্থা করার মতো লিংক বা লবিং কোন কিছুই আমার ছিল না। আমি কেবল চিন্তা করেছি এমন কনসেপ্ট দাঁড় করাতে হবে, যেন সামাজিক কাজে অনুদানকারীরা টাকা নিজ থেকে দান করেন। আমি বোধহয় ঐ জায়গায় পৌঁছাতে সফল হয়েছি। প্রতি মাসে আমরা লাখ লাখ টাকা প্রজেক্টগুলোতে খরচ করি কিন্তু আমাদের কোন স্পন্সর থাকে না। আবার সাধারণ মানুষ থেকেও অধিকাংশ সময় আমরা টাকা নেই না।

মূলত সময় অনুযায়ী আমি একটা কনসেপ্ট প্রনয়ন করি এরপর তা নিয়ে আমাদের পরিচিত বিভিন্ন দাতার নিকট যাই। যিনি রাজি হন, তার অর্থায়ন দিয়েই সম্পূর্ণ প্রজেক্ট সম্পন্ন করে ফেলি। তবে এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা একটি বড় জিনিস। বেশিরভাগ সময়ই অনুদানকারীকেই আমরা সব আয়োজন করতে বলি, স্বেচ্ছাসেবক থাকি আমরা। আর যদি তাদের ব্যস্ততার কারণে তারা অর্থ আমাদের নিকট তুলে দেয়, তাহলে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার ১ থেকে ২ ঘন্টার মধ্যে হিসাব ও অবশিষ্ট অর্থ তাকে প্রেরণ করা হয়। 

দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশনের প্রতিটা প্রজেক্টই ব্যতিক্রম। গাছের পরিচর্যা বৃদ্ধির সচেতনতা 'আমরা মালি' প্রজেক্টটি নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিদেশের বেশ কয়েকটি বড় বড় এনজিও। দেশ ছাড়িয়ে সামাজিক কাজে তার নতুন নতুন ধারণাগুলো আলোচনা হচ্ছে বিদেশের মাটিতে। দেশের প্রায় ১৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশন এ আবিদের নেতৃত্বে।

সামাজিক কাজের পাশাপাশি তিনি সামাজিক আন্দোলনের বিষয়ও সোচ্চার। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি 'ড্রেস কোড' এর বিপক্ষে একটি মৌন আন্দোলন চালাচ্ছে বলে জানান। তিনি মনে করেন যে-ই পৃথিবীতে খাদ্যের অভাব, সে-ই পৃথিবীতে অধিক মূল্যের ড্রেস ব্যবহার বিলাসিতা। তিনি বরাবরই বড় বড় অনুষ্ঠানে কিংবা এওয়ার্ড শোগুলোতে সাধরণভাবে পোশাক পরিধান করে এই সামাজিক আন্দোলন চালাচ্ছেন।

সমাজ বিশ্লেষকরা মনে করেন, আবিদের সাধারণ পোশাক পরিধান কিংবা স্বাভাবিক চলাফেরা, মানুষের ভালোবাসার প্রাপ্তির পরিধি বাড়িয়ে অসাধারণ করে তুলছে।