জাহাঙ্গীরনগরের ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি নিখোঁজ!
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনকে অবাঞ্ছিত করার ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে নির্ধারিত সময়ের পর ২০ দিন পার হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি তদন্ত কমিটির সদস্যরা। ফলে তদন্ত কমিটি 'নিখোঁজ' হয়েছেন বলে মন্তব্য করছেন অনেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৩ জানুয়ারি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের বিরুদ্ধে অন্য হলের নেতাকর্মীদের খোঁজ না রাখা, হল কমিটি না দেওয়া, জমি দখলসহ নানা অভিযোগ তুলে তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তারই অনুসারী ছয় হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় ২৭ জানুয়ারি তদন্ত কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে সরেজমিন প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সে হিসেবে ৭ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা। তবে নির্ধারিত সময়ের পর ২০ দিন অতিবাহিত হলেও তদন্ত কমিটির সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাজিয়া সুলতানা কথা ও এনামুল হক তানান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক শিশির ও উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সাফরিন সুরাইয়া।
এদিকে হাবিবুর রহমান লিটনকে অবাঞ্ছিত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার পদত্যাগের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন বিক্ষুব্ধরা। এর মধ্যে ৩১ জানুয়ারি রাতে সিনিয়র নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় না করে হল কমিটি দেওয়ায় মিছিল বের করে লিটনের হলের সামনে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধরা। এছাড়া লিটনের পদত্যাগের দাবিতে চলতি মাসের ২ তারিখে কালো পতাকা মিছিল ও ৩ তারিখে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ছাত্রলীগ নেতা জানান, 'সাধারণ সম্পাদককে অবাঞ্ছিত করার ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কর্তৃক তদন্ত কমিটি আইওয়াশ ছিল। তারা লোক দেখানো তদন্ত কমিটি করে আমাদেরকে শান্ত রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তদন্ত কমিটির স্বাভাবিক কার্যক্রমের নিয়ম ভঙ্গ করেছেন।'
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফারহান আনজুম তানজিল বলেন, 'সাধারণ সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণার এতদিন পরেও নির্দ্বিধায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলও নির্বিকার আছেন। অন্যায়-অনাচারে জর্জরিত এই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি এতদিনেও বহাল থাকা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে আহ্বান জানাই, তারা যেন দ্রুত তদন্ত কমিটির প্রতিবদেন জমা দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে জাবি ছাত্রলীগের কলঙ্ক মুক্ত করে।'
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক তানান বলেন, 'তদন্ত প্রতিবেদন কমিটি গঠিত হওয়ার দশ কার্যদিবসের মধ্যে জমা দেওয়ার কথা ছিল। তবে জাহাঙ্গীরনগরে সাম্প্রতিক ধর্ষণকান্ডে উদ্ভূত অস্থীতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় আনঅফিসিয়ালি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় বর্ধিত করেছি। এছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসে বসন্তবরণ, সাংগাঠনিক সফরসহ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নানা ব্যস্ততা ছিল। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে পারবে বলে আশা করছি।'
এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।