ফাইনাল ম্যাচে হামলা, পণ্ডর পর ঢাবি-রাবিকে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা
ক্যাচ ধরাকে কেন্দ্র করে চলমান আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ পণ্ড হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টিমের মধ্যকার এই খেলায় ঢাবি টিমের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিমের অন্তত ৬ খেলোয়াড় গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। পরে এক পর্যায়ে আলোক স্বল্পতার কারণ দেখিয়ে খেলাটি স্থগিত করে ও পরে উভয় দলকে যৌথভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন ম্যাচ রেফারি।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ১২টায় শুরু হওয়া খেলার দ্বিতীয় ইনিংসে এ বিশৃঙ্খলার সূচনা হয়। জানা গেছে, প্রথম ইনিংসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০ ওভারে ১৫০ রানের টার্গেট দেয়। বেলা ৩টায় দ্বিতীয় ইনিংসের খেলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৭ উইকেটে ১৮ ওভারে ১২৮ রান করে। অর্থাৎ জয়ী হতে তখন রাবির প্রয়োজন ছিল ১২ বলে ২০ রান। এ সময় একটি ক্যাচ ধরাকে কেন্দ্র করে রাবির শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমে পড়ে এবং ঢাবির খেলোয়াড়দের প্রতি মারমুখী হয়ে উঠে।
এ সময় রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ প্রটোকল ও শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলকে নিরাপত্তা দিয়ে বাসে তুলে দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেটে টিম অভিযোগ জানিয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী মাঠে ঢুকে ঢাবি ক্রিকেট টিমের খেলোয়াড়দের উপর অতর্কিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং হামলা চালায়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিমের ৫/৬ জন খেলোয়াড় গুরুতর আহত হয়। এদিকে এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে রাবি প্রশাসন জানায়, মাঠে বিশৃঙ্খলা হলেও কোনো খেলোয়াড়কে মারধরের ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে রাবির মার্কেটিং বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আকাশ বলেন, খেলায় জয়-পরাজয় থাকবেই। আমাদের আরও সচেতন হওয়া উচিত। উভয় দলেরই কিছু ভুল ছিল। যৌথ বিজয়ী ঘোষণা ভালো সিদ্ধান্ত ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একাধিক শিক্ষক বলেন, এটি একটি লজ্জাজনক ঘটনা। আমরা এমন ঘটনা প্রত্যাশা করি না। উভয় টিমের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। এখন আর কোনো সমস্যা নেই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ বলেন, আজকের খেলায় যা ঘটেছে, তা আসলেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। গ্যালারিতে বসে খেলা দেখতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিল কিন্তু শিক্ষার্থীরা সবাই মাঠে চলে আসছিল। ঘটনার পর আমরা ঢাবি শিক্ষার্থীদের তাদের বাসস্থানে পৌঁছে দিয়েছি এবং একজনকে ঢাকার ফ্লাইটে তুলে দিয়েছি। এ ঘটনায় যৌথভাবে দুই দলকেই চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়েছে।
ঢাবি একাদশের খেলোয়াড় ও ফারসি বিভাগের হানিফ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, খেলার তখন বাকি ১ ওভার চার বল এবং লাস্ট উইকেটের খেলা চলছিলো। এমন সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে মাঠে নেমে আসে সাথে রাবির খেলোয়াড়রাও আমাদের উপর চড়াও হয়। তারা স্টাম্প, লাঠি দিয়ে আঘাত করে। আমাদের প্রায় ছয় থেকে সাতজন আহত হয়েছেন। আমরা কোনো মত পালিয়ে ড্রেসিংরুমে গেলে সেখানেও হামলার শিকার হলে আমরা দ্রুত কোয়ার্টারে চলে এসেছি।
তিনি আরও জানান, আম্পায়ার মাঠের মধ্যে নানা ধরণের পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে। তিনি আমাদেরকে গালিগালাজ ও করেছেন। তিনি আমাদেরকে গালি দিয়ে বলেছেন ‘তোরা আজকে বাসায় যেতে পারবি না’। এছাড়া খেলার মাঝে পুরাতন বল রেখে রাবি একাদশকে নতুন বল দিয়েও সহায়তা করে আম্পায়ার আমরা সেটা ধরে ফেললে কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেয় আর কোনো ধরণের সমস্যা হবে না।
ঢাবির শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. শাহজাহান আলী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এর আগে তারা এসে আমাদের এখানে খেলে গেছে কোনো ঝামেলা হয়নি আমরাও সেই বিশ্বাসে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। খেলা শুরুর আগে রাবি উপাচার্য আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন কোনো ঝামেলা হবে না। কিন্তু যখন তারা দেখলো আমাদের টিম জিতে যাচ্ছে তখন আমাদের উপর তাদের শিক্ষার্থীরা হামলা করে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ঢাবির মাননীয় উপাচার্য রাবি উপাচার্যকে ফোন করে ভদ্র ভাষায় যতটুকু বলা সম্ভব বলেছেন এবং আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে বলেছেন পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাসে চলে আসতে। আর ধরনের টুর্নামেন্টে ঢাবি শিক্ষার্থীরা আর বাইরে যাবে না।