ঢাবি অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিচারের দাবি ছাত্র ইউনিয়নের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে বিভাগেরই এক নারী শিক্ষার্থী দ্বারা আনীত যৌন হয়রানির অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে বিচারের দাবি করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অকার্যকর’ যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলকে পুনরায় সক্রিয় করার আহবান জানান। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনের সামনের পায়রা চত্বরে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তারা এ দাবি জানান।
প্রতিবাদ সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবির সহ-সভাপতি মাশফিয়া আক্তার মৌমি বলেন, একজন শিক্ষার্থী এখানে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চান্স পাবার পরে হলগুলোতে নিদারুণ কষ্টের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠে। এসবের মাঝে তারা একটি সেইফ জোন খুঁজতে থাকেন। আমি মনে করি, একজন শিক্ষার্থীর সেইফ জোন হবার কথা একজন শিক্ষক। কিন্তু একজন শিক্ষক রিসার্চ বাদ দিয়ে, পড়াশোনা বাদ দিয়ে, শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তা বাদ দিয়ে, একটা মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার দিকে ঝুঁকে যান। এত কাজের মাঝে তারা কিভাবে ভাবেন যে তারা একজন ছাত্রীর সাথে যৌন সম্পর্ক করবেন?
তিনি বলেন, এই নাদির জুনাইদ একটা নাম শুধু। এমন ঘটনা আমরা অহরহ দেখতে পাচ্ছি। ঢাবিতেই এমন ঘটনা কম না। বর্তমানে একজন নারী রাস্তায়, ক্যাম্পাসে কিংবা ক্লাসেও নিরাপদ না। এই সমস্যা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে কিন্তু এসবের কোন সুরুহা হয় না। যা একটি দুটি ঘটনা সামনে আসে কিন্তু তার সমাধান হয় না। প্রশাসন বারবার বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করে৷ তাহলে আমাদের প্রশ্ন থেকে যায়, এই প্রশাসনের কাজ কি?
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবির সাংগঠনিক সম্পাদক অর্নি আঞ্জুম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল রয়েছে। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক কথা হলো এই সেলটি বর্তমানে অকার্যকর। যার ফলে এতদিনে এই সেলে মাত্র ৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে কিন্তু তার একটিরও কোন সুরাহা হয়নি। আমরা এমন যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল চাই, যেখানে নারীরা সরাসরি গিয়ে অভিযোগ দিতে পারবে এবং শিক্ষকরা দ্রুত বিষয়টির সমাধান করবেন।
তিনি বলেন, আমরা এমন ঘটনার সম্মুখীন হওয়া শিক্ষার্থীদের বলবো, তারা যেনো ঘটনার সাথেসাথেই অভিযোগ জানান এবং প্রতিকারের দাবি করুন। আপনারা যদি প্রতিবাদ না করেন, তাহলে এসব ঘটনার বিচার হয় না, কাউকে শাস্তির আওতায় নিয়েও আসা হয় না। আপনারা যদি শক্ত না হন, প্রতিবাদের কণ্ঠ উঁচু না করেন তাহলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
প্রতিবাদ সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবির একাংশের সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, আজকে নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যেই অভিযোগ সেটা কোন একক ঘটনা নয়। মাঝেমধ্যে বলা হয় এমন ঘটনার জন্য পোশাক দায়ী কিন্তু আমরা মনে করি, এতে পোশাক দায়ী নয় বরং দায়ী হলো ক্ষমতা। এর আগেও সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ইন্সটিটিউটেও এমন ঘটনা ঘটেছে। যেখানে শিক্ষক দ্বারা নারীকে যৌন হয়রানির করা হয়। কিন্তু সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বড় কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ক্ষমতার কারণে এসব যৌন নিপীড়করা বরাবরই পার পেয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রশাসন যতদিন এভাবে দায়সারা মনোভাব দেখাবে, ততদিন এদেশে যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণ কমবে না বরং এদেশে ধর্ষক তৈরি হবে। তাই আমরা চাই দ্রুত নাদির জুনাইদের বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে তাকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হোক।