ঢাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কথা ও গোপন ক্যামেরায় ছাত্রীকে নজরদারির অভিযোগ
যৌন হয়রানির অভিযোগে আবারও আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদ। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন এক শিক্ষার্থী। এতে, ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিভিন্ন হয়রানির বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি। এর আগে তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশের জের ধরে বিভাগের একটি ব্যাচের ফলাফল ধসের অভিযোগ উঠে।
প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগে শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষক নাদির জুনাইদ আমাকে প্রায়ই অপ্রীতিকর কথা বলতেন। উনি আমার ব্যক্তিগত বিষয় সম্পর্কে জানতে চান, আমার কারো সাথে কোনো সম্পর্ক আছে কিনা এ নিয়ে জানতে চান। উনি সবসময় জিজ্ঞেস করতেন উনাকে আমার কেমন লাগে ইত্যাদি। এক পর্যায়ে তিনি তাঁর বিয়ের প্রসঙ্গে কথা বলেন এবং স্পষ্টভাবে আমার দিকে ইঙ্গিত করেন। আমি খুব অবাক হই এবং খুব অস্বস্তিতে পড়ি। তবে, আমি কৌশলে তাকে নাকচ করে দিই। উনি আমাকে নিজে থেকে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকতে পারে। আমি সেই সময় হ্যাঁ-তে হ্যাঁ মিলিয়েছি। আবার বলেন, ‘আচ্ছা ভাবতে তো দোষের কিছু নাই। আমরা না হয় ভাবলাম! ধরে নাও না, আমাদের বিয়ে হলে কেমন হবে? ভবিষ্যৎ প্রজনন্ম কেমন হবে?’ এই ধরনের কথাগুলো ছিলো আমার জন্যে প্রচন্ড রকম বিব্রতকর এবং অপ্রীতিকর। কিন্তু শিক্ষক হওয়ায় উনাকে না-ও করতে সাহস পাচ্ছিলাম না। যতটা না বলে পারা যাচ্ছিল না, ততটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছিলাম। আমি আগ্রহ দেখাচ্ছি না দেখে উনি প্রচন্ড বিরক্ত হতেন।’
অভিযোগপত্রে তিনি আরও বলেন, ‘তিনি আমার শারীরিক অবয়র সম্পর্কে নোংরা মন্তব্য করতেন এবং যৌন উত্তেজনা প্রকাশ করতেন। একই সাথে আমাকে উনার সাথে বাজে জিনিস কল্পনা করতে প্ররোচিত করতেন। বলতেন, ‘ধরে নাও তোমার সাথে বিয়ে হলে, তোমার সাথে এটা করলে ওটা করলে কেমন হতো’, ‘মনে কর, আমরা সি-বিচ গিয়েছে, সান- বার্থ’। এছাড়াও বিভিন্ন ডাবল মিনিং কথাবার্তা বলতেন এবং সারাক্ষণ সেক্সুয়াল কথোপকথনে প্ররোচিত করতেন। বিষয়টি সহ্যের সীমার বাইরে যেতে থাকলো। উনি বিভাগের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আমাকে নজরদারি করতেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘উনি আমার সাথে এমন কথাবার্তা বলতেন, এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিতেন আমার প্রতি, যার বেশিরভাগ কথাই সাধারণত স্বামী স্ত্রীর মধ্যে হয়ে থাকে। উনি সাধারণত ১০-১১টার মধ্যে কল দিতেন। কিন্তু যৌন ইংগিতপূর্ণ কথা শুরু করলে গভীর রাত পর্যন্ত কথা বলতে চাইতেন। তিনি বিভিন্ন সময় আমাকে বিয়ের পর তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার ও আর্থিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিতের কথাও বলেছেন। এই ধরনের কথাগুলো ছিল আমার জন্যে তীব্র যন্ত্রণার। আমি কত রাত ঘুমাতে পারিনি, কত দিন এই অস্বস্তি এবং মানসিক কষ্ট নিয়ে রাত দিন পার করেছি কেউ জানে না।’
নিজের মানসিক অবস্থার কথা জানিয়ে ওই শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষকের ব্যক্তিগত আক্রোশ কত ভয়ংকর হতে পারে। যেই ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হতে পারি বলে আমি গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে নিজের উপর হওয়া যৌন হয়রানি মুখ বুজে সহ্য করেছি। আমি বিগত দেড় বছর প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। কিন্তু এ যন্ত্রণার প্রকাশ আমি উনার সামনে করতে পারিনি। এক পর্যায়ে এ যন্ত্রণার পরিমাণ এতটাই বেড়ে যায় যে আমি রাতে ঘুমাতে পারতাম না। গত বছরের শুরুতে আমি কাউন্সিলিং-ও করি। ঘুমানোর জন্য ঘুমের ওষুধ খেতে হত।
অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. মাকসুদুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। এটি ভিসি স্যারের কাছে পাঠানো হবে। পরবর্তী ব্যবস্থা তিনি নিবেন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক নাদির জুনাইদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।