বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জাহাঙ্গীরনগরে
রাজধানী ঢাকার অদূরেই সৌন্দর্যের রানী খ্যাত ৭০০ একরের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন বিভিন্ন স্থানের দর্শনার্থী-বহিরাগতরা। তবে আজ শুক্রবার ছুটির দিনে দেখা গিয়েছে তার ভিন্ন চিত্র। অপেক্ষাকৃত কম ছিল দর্শনার্থী ও বহিরাগতদের আগমন। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন অনেকে।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি ধর্ষণকাণ্ডে ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এটি। এ নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকগুলোতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এতে বহিরাগতদের এই সংখ্যা কমে এসেছে। বহিরাগত প্রবেশ শতভাগ নির্মূল করতে কর্তৃপক্ষের এমন কার্যক্রম চলমান রাখার কথাও জানান তারা।
আমরা সিন্ডিকেটের নির্দেশনা পালন করার চেষ্টা করছি। যদিও আজ সন্ধ্যার দিকে বাইরের মানুষদের কিছু আনাগোনা ছিল। এক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থীর মা-বাবা ও খুব কাছের আত্মীয়-স্বজন আসলে তাদের মানা করা যায় না। -ফিরোজ-উল-হাসান, প্রক্টর
শুক্রবার ছুটির দিনে সরেজমিনে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের দর্শনীয় অন্যতম স্থান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, মুরাদ চত্বর, মুন্নি স্মরণী, বটতলা, টিএসসি, সেলিম আল দিন মুক্ত মঞ্চসহ বেশ কিছু স্থানে তাদের আনাগোনা ছিল হাতে গোনা। যদিও সন্ধ্যার দিকে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বহিরাগত কিছু পরিবারের ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়।
সাভারের ব্যাংক কলোনি থেকে পরিবারসহ ঘুরতে আসা এক দম্পতি জানান, জাহাঙ্গীরনগর বাসা থেকে কাছাকাছি হওয়া সপ্তাহের ছুটির দিনে তিনি ঘুরতে এসেছেন। তার সঙ্গে পারিবারের সদস্যদেরও নিয়ে এসেছেন। বাচ্চারা ক্যাম্পাসে হাঁটাহাঁটি করছে। এছাড়া তার ভাতিজা জাবির ছাত্র। তবে সম্প্রতি আলোচিত ঘটনায় বহিরাগত প্রবেশে প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি মেনে চলা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী শফিউজ্জামান বলেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ বহিরাগতদের সংখ্যা খুবই কম। তবে বিকেলের দিকে কেউ কেউ এসেছেন। সন্ধ্যার আগে পর্যন্ত শহীদ মিনার এলাকায় জমায়েত দেখা গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ কমাতে ও শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে ক্যাম্পাসের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা জরুরি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রধান সুদীপ্ত শাহীন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্যাম্পাসে কোনো বহিরাগত এবং অনিবন্ধিত অটোরিকশা চলাচল না করার সিদ্ধান্ত হয়। সেদিন থেকেই আমরা পুরো টিম নিয়ে মাছে নেমেছি।
তিনি বলেন, আজ প্রতিটি গেটে বাইরে থেকে আসা প্রত্যেককে কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়েছে। তারপরেও কিছু বহিরাগত ক্যাম্পাসের পকেট গেট দিয়ে এসেছে। সেগুলোতে নিরাপত্তা প্রহরী থাকে না। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ সকলের সচেতন থাকলে প্রশাসনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন সহজ হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, আমরা সিন্ডিকেটের নির্দেশনা পালন করার চেষ্টা করছি। যদিও আজ সন্ধ্যার দিকে বাইরের মানুষদের কিছু আনাগোনা ছিল। এক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থীর মা-বাবা ও খুব কাছের আত্মীয়-স্বজন আসলে তাদের মানা করা যায় না। এখানে একটু শিথিল হতে হয়। তবে যারা অহেতুক ঘোরাফেরার জন্য আসেন, তাদের কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
ধর্ষণকাণ্ডে ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এটি। এ নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকগুলোতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এতে বহিরাগতদের এই সংখ্যা কমে এসেছে।
এর আগে, গত শুক্রবার (০২ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশে জঙ্গলে বহিরাগত এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/০৩) এর ৯(৩) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী নারীর স্বামী। তার প্রেক্ষিতে মূল অভিযুক্তসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
এ ঘটনার জেরে গত ৫ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, ক্যাম্পাস বহিরাগতদের প্রবেশ ও অস্থায়ী দোকানপাট নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া অছাত্র ও পোষ্যদের আবাসিক হল থেকে বের হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। তারা বের না হলে বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।