ধর্ষককে পালাতে সহযোগীদের জুতাপেটা, রাতে যা ঘটেছে জাবি হলে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে এক ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) থানা পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
শনিবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে নয়টার দিকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে ধর্ষককে পালাতে সহযোগীদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেদিন রাতে ঘটনাস্থলে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের দপ্তর সম্পাদক আহসান হাবিব। রাতের ঘটনা নিয়ে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেন,
‘ধর্ষণের ঘটনায় রাত ১২ টা থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত মীর মশাররফ হোসেন (এমএইচ) হলের সামনে ছিলাম। একটা নাটক দেখার অভিজ্ঞতা হলো। আমি প্রথমেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে এমএইচ হলের কিছু ছেলেকে জিগাইলাম, ধর্ষক মুস্তাফিজ কোথায়? তারা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললো এই হলের কেউ ধর্ষণ করেনাই।প্রভোস্টের কাছে আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখার দাবি জানালাম’
তিনি আরো লেখেন, ‘প্রক্টর- প্রভোস্ট মেইন আসামিকে পালাতে বললো, পালানোর পর তাকে খোঁজার জন্য আমাদের নিয়ে হল রেইট দিল। ভিক্টিমের হাজবেন্ডকে যে কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল, তা দেখলাম একটি টর্চার সেল। এখানে যারে ইচ্ছে হয়, তারে এনে টর্চার করে মুস্তাফিজ-মুরাদ গ্যাংরা। যাইহোক রেপিস্ট মুস্তাফিজকে তো পাওয়া গেল না’
‘তারপর কী করা যায় বুঝছিলাম না! প্রশাসনের নাটক দেখে নিজেদের বলদ মনে হচ্ছিল। সিসিটিভি ফুটেজ চেক করা শুরু করলাম। একটা সময় গিয়ে দেখি ধর্ষক মুস্তাফিজকে হলের পেছনের তালা ভেঙ্গে বের করেছে মুরাদ, হাসান, সাব্বির, সাগর, পরান নামের কিছু পলিটিক্যাল অছাত্র। তাদের তিনজন (সাব্বির-সাগর-হাসান)কে খুঁজে হল থেকে বের করা হলো। তারা কনফিডেন্টলি অস্বীকার করছিল। কিছু নেতা তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছিল। ফুটেজ থাকার কারণে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের জুতার বাড়ি দিল, এবং পুলিশকে বাধ্য করলাম হ্যান্ডকাফ পরিয়ে তাদের থানায় নিয়ে যেতে’
‘উল্লেখ্য আমরা এমন কিছু শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করি, যারা ধর্ষককেও শেল্টার দেয়! যাদের কাছে ধর্ষণ একটা মামুলি ব্যাপার। উনারা হয়ত মনে করেছে কোনো একটা গার্মেন্টস কর্মীকে তো রেইপ করায় যায়, এটা আর কী এমন! তাদের মুখের সামনে বলে আসলাম, স্যার আপনাদের ক্লাস আর করবো না। আপনারা শিক্ষকতা করার নৈতিক যোগ্যতা হারিয়েছেন’
‘যদিও তারা মুখে বলেছে ধর্ষকদের গ্রেফতারে থানা-পুলিশকে তারা সকল ধরনের সহযোগিতা করবেন।
তারপর এমএইচ হলের কিছু গরুর পাল আছে, যারা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এই কেইসটাকে ভ্যালিডিফাই করার চেষ্টা করছিল। এই ভেবে লজ্জা লাগছে যে তাদের সাথে আমাদের ক্লাস করতে হয়, উঠতে বসতে হয়।
এবং লম্বা, সুন্দর কিছু পলিটিক্যাল অছাত্র আছে, যারা ক্যাম্পাসের অনেক মেয়ের হার্টথ্রোব। দেখতে সুন্দর হলেও, এরা ভিতর ভিতর একেকটা রেপিস্ট। সো সাবধান!’
‘মুস্তাফিজকে (আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক -জাবি শাখা ছাত্রলীগ) এক ঘণ্টার মধ্যে বহিষ্কার করে ছাত্র সংগঠনটি বললো, কোনো ব্যক্তির দায় সংগঠন নিবে না। কিন্তু এইসব ব্যক্তিরা যে, সংগঠনের ক্ষমতাবলেই ধর্ষন-চাদাবাজি-গুন্ডামি করে তার দায় এড়াবেন কীভাবে!’
‘ধর্ষণে সেঞ্চুরিয়ান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জসিমউদদীন মানিককেও ড্রামাটিক্সের এক সুপরিচিত অধ্যাপক শেল্টার দিত। সো যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-ছাত্রসংগঠনের কাছ থেকে ধর্ষকরা শেল্টার পায়, সেখানে জসিমউদদীন মানিক নিয়মিত উৎপাদিত হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গায়ে কলঙ্ক লেপে যাবে তাই স্বাভাবিক।
যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের আশ্রয় দিচ্ছে, তাই আমাদের মেয়েদেরই সাবধানে চলতে হবে আর কি। সন্ধ্যার পরপরই হলে ঢুকে যায়েন আপনারা। আর বাহির থেকে কেউ মা-বোন-বউ নিয়ে এখানে ঘুরতে আসিয়েন না। আল্লাহ হাফিজ।’