০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:২৬

কারাগার ছিল যে ঢাবি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কেন্দ্র

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ও প্রতীকী ছবি  © ফাইল ছবি

কারাগার এক অসহনীয় যন্ত্রণার নাম। উঁচু দেয়াল ঘর, নেই কোনো জানালা। মোটা লোহার শক্ত গ্রিলের ওই পাশে অনেক স্বপ্নই শেষ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতেও ঢাবির কিছু শিক্ষার্থী তাদের অ্যাকাডেমিক জীবনের পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে কারাগারকেই বেছে নিয়েছেন। গত দশ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং এর অধিভুক্ত কলেজ থেকে কারাগারে পরীক্ষা দিয়েছেন ৮৩ জন। তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১ জন, অধিভুক্ত কলেজ থেকে ৩৬ জন এবং বিভিন্ন ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকৃত ৬ জন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন সূত্রে এই তথ্য জানা যায়। এতে ২০১৩-১৪ সেশন থেকে ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থীদের তথ্য রয়েছে। 

শিক্ষার্থীদের সম্মান বিবেচনায় ছবি ও নাম প্রকাশ করা হয়নি। প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল থেকে ৩ জন, সার্জেন্ট জহুরুল হক হল থেকে ২জন, মাস্টারদা সূর্যসেন হল থেকে ৩ জন, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল থেকে ২ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল থেকে  ১ জন, কবি জসিম উদ্দিন হল থেকে ৩ জন, শহীদুল্লাহ হল থেকে  ২ জন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ থেকে ১ জন ও কলা অনুষদের ১ জনসহ মোট ১৭ জন শিক্ষার্থী জেলে থাকা অবস্থায় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। 

বাকি ২৬ জন শিক্ষার্থীর আবাসিক হল এর পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে বিভাগ অনুয়ায়ী ফার্মেসী অনুষদের ১ জন, আইন বিভাগের ১ জন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৩ জন, ইসলামিক স্টাডিজের ৩ জন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ৪ জন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১ জন, ফিন্যান্স বিভাগের ১ জন, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ১ জন, বাংলা বিভাগের ৩ জন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ১ জন, অর্থনীতি বিভাগের ২ জন, গণিত বিভাগের ২ জন, ইতিহাস বিভাগের ২ জন এবং বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা ৬জন। 

প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ সেশনের সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ১০ জন কারাগার থেকে পরীক্ষা দিয়েছেন। 

বিগত ১০ বছরে অধিভুক্ত কলেজের মধ্যে কারাগারে থাকা অবস্থায় পরীক্ষা দিয়েছেন, ঢাকা কলেজ থেকে ১২ জন, হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে ৩ জন, ইডেন মহিলা কলেজ থেকে ১ জন, সরকারি বাংলা কলেজ থেকে  ৫ জন, সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে  ১০ জন, কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে  ৫ জন সহ মোট ৩৬ জন। 

পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ঢাকা কলেজ থেকে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী কারাগারে পরীক্ষা দিয়েছেন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে সর্বাধিক ৯ জন জেলে পরীক্ষা দেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।  

কারাগারে থাকা সব শিক্ষার্থী পরীক্ষার সুযোগ পায় না 

কারাগারে থাকলেই পরীক্ষার সুযোগ মিলবে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেসব শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার অথবা বহিষ্কার থাকা অবস্থায় কারাগারে থাকবে তাদের পরীক্ষার সুযোগ মিলবে না। শুধু তারাই সুযোগ পাবে সাধারণত যাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার অথবা বহিষ্কারের কোনো আদেশ নেই। 

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম মাকসুদুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ঘটনায় কেউ কারাগারে গেলে তাকে প্রাথমিক অবস্থায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয় পরে তদন্ত করে বহিষ্কার করা হয়। যারা সাময়িক বহিষ্কার অথবা বহিষ্কার হয় তারা কারাগারে থাকলেও পরীক্ষার সুযোগ পায় না।

সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ঘটনায় কেউ কারাগারে গেলে তাকে প্রাথমিক অবস্থায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয় পরে তদন্ত করে বহিষ্কার করা হয়। যারা সাময়িক বহিষ্কার অথবা বহিষ্কার হয় তারা কারাগারে থাকলেও পরীক্ষার সুযোগ পায় না : ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম মাকসুদুর রহমান।

যেসব কারণে কারাগারে গিয়েছে ঢাবি শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে কারাগারে যেতে পারে। যেমন, রাজনৈতিক বিরোধ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সামাজিক বিরোধ, পারিবারিক বিরোধ, নারীঘটিত অপরাধ। 

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষায় দুর্নীতি, ভর্তি পরীক্ষায় অসাদুপায় অবলম্বন, ক্যাম্পাসে ছিনতাই, মাদকসেবন, মারধর, চাঁদাবাজিসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য শিক্ষার্থীদের কারাগারে যেতে হয়। 

যে প্রক্রিয়ায় কারাগারে পরীক্ষা নেওয়া হয়

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, যে শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিবেন তিনি কারাগার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর একটি আবেদন করেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি বোর্ডে (ডিবি) পাঠায়। ডিবি সে শিক্ষার্থী কোনো বহিষ্কার আদেশ আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখে। তারপর সেটি আবার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়। 

তারপর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক একটি চিঠি শিক্ষার্থীর বিভাগে প্রেরণ করে।   

এ বিষয়ে কারাগারে থাকা পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে যুক্ত ম্যানেজমেন্ট এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: আরিফুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পরীক্ষা কমিটি এবং ডিপার্টমেন্ট এই পরীক্ষার আয়োজন করে।  একজন নির্দিষ্ট শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়, যিনি খাতা ও প্রশ্ন নিয়ে কারাগারে গিয়ে পরীক্ষা নেন এবং পরীক্ষা শেষে সেগুলো নিয়ে চলে আসেন। 

পরীক্ষা কমিটি এবং ডিপার্টমেন্ট এই পরীক্ষার আয়োজন করে। একজন নির্দিষ্ট শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়, যিনি খাতা ও প্রশ্ন নিয়ে কারাগারে গিয়ে পরীক্ষা নেন এবং পরীক্ষা শেষে সেগুলো নিয়ে চলে আসেন : সহকারী অধ্যাপক মো: আরিফুল ইসলাম

তিনি আরো বলেন, যেকোনো আইনে মামলা হতে পারে একজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। কেউ যদি অপরাধী সাব্যস্ত না হয় বা মামলার রায় না হয়, তাহলে সে অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছে এটা প্রমাণিত নয়। এ কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সে শিক্ষার্থীর পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেয়, এটির আইনগত বিধান আছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম মাকসুদুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, একজন শিক্ষার্থী নানা কারণে জেলে যেতে পারেন। আমরা এখানে শিক্ষকতা করি শিক্ষার্থীদের জন্য। তাদের যদি কোনো বহিষ্কার আদেশ না থাকে। তাহলে আমরা পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ দেব। এটা মানবিকতার জায়গাও বটে।