রাবি অধ্যাপক নয়, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের গলা টিপে ধরা হয়েছে
ক্যাম্পাসে মানববন্ধনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
- রাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭:৫৩ PM , আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:১১ PM
নগরীর তালাইমারি এলাকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজার উপর দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। এই ঘটনায় মারধর ও হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসময় হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তারা।
আজ শনিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই মানববন্ধন করা হয়।
এসময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, এই ঘটনায় দুর্বৃত্তরা ব্যক্তি অধ্যাপক আলী রেজার গলা টিপে ধরেনি বরং পুরো বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের গলা টিপে ধরা হয়েছে। তাই এ জাতীয় ঘটনা পুনরাবৃত্তি যেন না হয় তার প্রতি আহ্বান জানান তারা৷
মানববন্ধনে ‘শিক্ষককে লাঞ্ছনা আর না, আর না’, ‘শিক্ষক তোমার ভয় নাই, ছাত্রসমাজ ঘুমায় নাই’, ‘ছাত্র সমাজ জেগে ওঠো, শিক্ষক কেন নির্যাতিত’, ‘শিক্ষকদের হুমকি প্রশাসনের ভূমিকা কী?’, ‘আমার শিক্ষক লাঞ্ছিত কেন জবাব চাই, সহ বিভিন্ন প্লাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সাতটি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো—জড়িতদের অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনা, অভিযুক্ত আরেক আসামিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা, দল মত নির্বিশেষে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, প্রশাসনের জবাবদিহিতার নিশ্চিত করা, শিক্ষক সমাজের ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং যথাযথ শাস্তির মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।
আরও পড়ুন: গাড়ির গতিরোধ করে রাবি অধ্যাপককে হত্যার চেষ্টা, একজন গ্রেপ্তার
বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. তুষারের সঞ্চালনায় বক্তারা বলেন, বিভাগের শিক্ষক আলী রেজা স্যারের উপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে এবং তাকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনায় দুর্বৃত্তরা ব্যক্তি আলী রেজা স্যারের গলা টিপে ধরেনি বরং পুরো বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের গলা টিপে ধরা হয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, ড. আলী রেজা স্যারকে লাঞ্ছনার মাধ্যমে পুরো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে লাঞ্ছনা করা হয়েছে এবং প্রত্যেকের আত্মসম্মান আঘাত করা হয়েছে। প্রায় সময়ই এ ধরনের ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়। অনেক সময় দুই-তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়৷ কিন্তু পরবর্তীতে কমিটির তদন্তের আর কোনো অগ্রগতি হয় না৷ দ্রুত অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর বাইরে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের কাছে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, পুলিশ প্রশাসন সকলের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বক্তারা। পাশাপাশি এ জাতীয় ঘটনা পুনরাবৃত্তি যেন না হয় তার প্রতি আহ্বান জানান৷
বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোলাইমান চৌধুরী বলেন, আলী রেজা স্যারের সাথে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি খুবই নিন্দনীয়। এটা অনভিপ্রেয় আমরা প্রত্যাশা করি না। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, পুরো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমরা প্রত্যাশা করি এ ঘটনার সাথে জড়িত সকলেই আইনের আওতায় আসুক। তাকে সুষ্ঠু বিচারের আওতায় আনা হোক।
নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয় উল্লেখ করে এই অধ্যাপক আরো বলেন, একইসাথে আমাদের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক। আমাদের পুরো শিক্ষক-শিক্ষার্থী যেন এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন না হয় আমরা সেটিই প্রত্যাশা করি। আমরা একটি সুন্দর সুষ্ঠু পরিবেশ চাই। আমাদের উপর আক্রমণ করবে, আমাদের ভয়-ভীতি দেখাবে এরকম পরিস্থিতি আমরা চাই না। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট যারা আছে তারা এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার নিশ্চিত করবে যেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি।
প্রসঙ্গত, গতকাল শুক্রবার রাতে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের বিপরীতে মিষ্টিবাড়ি দোকানের সামনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজাকে (৫৩) পথরোধ করে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর ও হত্যাচেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা।