বানান ভুলের ছড়াছড়ি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে
দেশের চার স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। শিক্ষা ও গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যাপক অর্জন ও সুনাম রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে আলোচনা-সমালোচনাও। বিশ্ববিদ্যালয়টি বিভিন্ন সময় যেভাবে ভালো কাজে সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে, একইভাবে নেতিবাচক কাজেও হচ্ছে সমালোচিত। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়টির তেমনটি এক আলোচিত বিষয় বানান বিভ্রাট।
বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিগত ৪ বছরে চবির বিজয় দিবস, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, পরীক্ষার প্রশ্নপত্রসহ বহু বানানে ভুল রয়েছে। সম্প্রতি ২০২৪ সালের ডায়েরিতে বঙ্গবন্ধু টানেলের ছবির স্থলে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া প্রদেশের এলিজাবেথ রিভার টানেলের ছবি ছাপিয়ে ভুলের বিষয়টি নতুন করে সামনে আনে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
আলোচিত ভুলগুলোর মধ্যে টানেলের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া অন্য কোনো বানানে অসঙ্গতি বা ভুল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার মতো শব্দগুলোও বিভিন্ন সময় ভুল করা হয়েছে। ভুল থেকে বাদ যায়নি বিজয় দিবসের ব্যানারও। আলোচিত এসব ভুলের চিত্র নিচে তুলে ধরা হলো-
বঙ্গবন্ধু টানেলের স্থানে এলিজাবেথ টানেল
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বছরের অফিসিয়াল ডায়েরিতে স্থান পায় একটি টানেলের ছবি। ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া প্রদেশের এলিজাবেথ রিভার টানেলের। ডায়েরির শেষ দুই পৃষ্ঠাজুড়ে ব্যবহার করা হয় সেই ছবি।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রথমে জানায়, এটি কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তৈরি বঙ্গবন্ধু টানেলের ভেতরের ছবি। এ নিয়ে চলে সমালোচনা ও বিতর্ক। তবে পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে কর্তৃপক্ষ ডায়েরিটি প্রত্যাহার ও সংশোধনের উদ্যোগ নেয়।
শিল্পীর নাম ভুল
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য তৈরি করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারে ব্যবহৃত এক ছবিতে অঙ্কন শিল্পীর নাম ভুল করা হয়। যা নিয়ে চলে আলোচনা-সমালোচনা। হাতে আঁকা ছবিটির শিল্পী চবির সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হানিফ মিয়ার মেয়ে অদ্রি মিয়ান।
সেখানে তার পরিবর্তে ছবিটিতে শিল্পী হিসেবে উল্লেখ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছাম্মৎ নিশিতা হক মিমহার নাম। এছাড়া প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে পাওয়া ক্রেস্ট এবং সনদপত্রেও শিল্পী এবং তার মায়ের নামের বানানে ভুল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
স্বাধীনতা বানান ভুল
২০২৩ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদ। স্বাধীনতা নামক শব্দটির ভুল বানানে স্বাধীনতা দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বঙ্গবন্ধু পরিষদ।
যেখানে লেখা ছিলো ‘স্বাধীনতনার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি’। অর্থাৎ স্বাধীনতা বানান ভুল করে লেখা হয় ‘স্বাধীনতনা’। যেটি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে সংশ্লিষ্টরা।
বুদ্ধিজীবী বানান ভুল
২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনকালে দেওয়া পুষ্পস্তবকে ‘বুদ্ধিজীবী’ বানানটিও ভুলভাবে লিখে চবির বঙ্গবন্ধু পরিষদ। পুষ্পস্তবকে দেখা যায়, বুদ্ধিজীবী বানানটি এভাবে (বুদ্ধিজীবি) দুইবার লেখা হয়। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের নজরে আসার পর অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
মুক্তিযুদ্ধ বানান ভুল
বুদ্ধিজীবী দিবসের পুষ্পস্তবকে বুদ্ধিজীবী বানানটি ভুলভাবে লেখার দুই দিনের মাথায় বিজয় দিবসের পুষ্পস্তবকে আবারও বড় ধরনের ভুল করে সংগঠনটি। স্বাধীনতা স্মৃতি ম্যুরালে মহান বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনকালে দেওয়া পুষ্পস্তবকে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দটির বানানে লেখা হয় ‘মুক্তিযোদ্ধ’।
পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ভুল
২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষ বিএসএস (সম্মান) ৪০৫ নম্বর কোর্সের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে স্বয়ং চট্টগ্রাম বানানসহ গুরুত্বপূর্ণ ১০টি বানান ভুল করে বিভাগটি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বানানে চট্টগ্রামের বানান ভুল লেখা হয়। যেখানে শুদ্ধ বানান হবে ট+ট= ট্ট, সেখানে লেখা হয়েছে ট+র ফলা= ট্র। এছাড়া আরও ১০টি প্রশ্নে ভুল করা হয়।
বিজয় দিবসের ব্যানারে শহীদ মিনারের ছবি
২০২০ সালে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ অনুষ্ঠানের ব্যানারে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও ভাষা শহীদদের স্মৃতিতে নির্মিত শহীদ মিনারের ছবি স্থান পায়। যা ক্যাম্পাসজুড়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারও।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, শহীদ মিনার বাংলাদেশের চেতনার অংশ হলেও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত সভায় সেটার ছবি বেমানান। কেননা সেটির প্রেক্ষাপট ভিন্ন। যদিও অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের কথা স্বীকার করে কর্তৃপক্ষ।
ভুল বানানে হল উদ্বোধন
গত বছরের ২৭ অক্টোবর একসঙ্গে দুইটি আবাসিক হলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক। এতে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টরা।
এতে দেখা যায়, দুইটি হলের উদ্বোধন ফলকের একটিতে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলের নাম ভুল বানানে লেখা হয়েছে। ফলকটিতে লেখা হয় ‘অতীশ দীপঙ্কর শ্রীঞ্জান হলে ছাত্রদের আবাসনের শুভ উদ্বোধন’। সেখানে ‘শ্রীজ্ঞান’ এর জায়গায় লেখা হয় ‘শ্রীঞ্জান’। এ নিয়েও বেশ সমালোচিত হয় কর্তৃপক্ষ।