১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩৬

প্রশাসনের জনবল নিয়োগের অজুহাতে হুমকির মুখে নবীনদের শিক্ষাজীবন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের গেল বছরের নভেম্বরের শেষের দিকে অনলাইনে পাঠদান শুরু হয়। অনলাইনে ক্লাস শুরুর এক মাস পেরিয়ে গেলেও এসব শিক্ষার্থীদের এখনো সশরীরে ক্লাস শুরু করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীরাও এ অনলাইন ক্লাস চাচ্ছেন না। তারা বেশ কয়েকবার অনলাইন ক্লাস বর্জন করে কর্মসূচিও করেছেন। এদিকে, এক ব্যাচকে অনলাইন ক্লাসে রেখে পরের ব্যাচের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, বিভিন্ন জটিলতায় নব নির্মিত হলগুলোতে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দিতে না পারায় প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন এবং হল বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া অতি দ্রুত শেষ করতে কাজ চলছে। চলতি মাসের মধ্যেই এ জটিলতা কেটে যাবে। এরপর নবীন শিক্ষার্থীদের হল বরাদ্দ দিয়ে সশরীরে পাঠদান শুরু হবে।

৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন এবং হল এলটমেন্ট জানুয়ারি মাসের মধ্যেই দিয়ে দেব। আশা করছি, নতুন হলগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। -প্রশাসন

জানা গেছে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার পাঁচ মাস পরে এসে গত ৩০ নভেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ নিয়ে কয়েকটি ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছে।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫২ ব্যাচের (নবীন) শিক্ষার্থী ফারাবী বলেন, আমাদের সব শিক্ষার্থীদের আর্থিক অবস্থা একরকম নয়। অনলাইনে ক্লাস করা যেমন অনেকের জন্য ব্যয়বহুল, তেমনি অনেক জটিলতারও। এতে পড়াশোনায় নিয়মিতভাবে ব্যাঘাত ঘটছে। করোনা চলে গেছে, অথচ আমরা করোনার মতো এখনো অনলাইন ক্লাসে আছি।

এদিকে, চলতি জানুয়ারি থেকে নবীন শিক্ষার্থীদের সশরীরে ওরিয়েন্টেশন ও হল বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা থাকলেও এখনও এ বিষয়ে কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নবীন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ভর্তি পরীক্ষার পর আমাদের অনেক শিক্ষার্থীর দ্বিতীয়বার ক্যাম্পাসের মুখ দেখার সুযোগ হয়নি। তার মধ্যেই অনলাইনেই কোর্স বণ্টন ও সাথে চূড়ান্ত পরীক্ষার তারিখ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ২০২৩-২০২৪ সেশনের ভর্তি পরীক্ষার তারিখও দিয়ে দিয়েছে জাবি প্রশাসন। আর এদিকে আমরা এখনো সশরীরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষেই বসতে পারলাম না।

উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী ইয়াকুব ইসলাম শাহেদ বলেন, ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬ মাস পার হলেও এখনও আমাদের শরীরে ক্লাস শুরু করতে পারেনি প্রশাসন। জাবির হলে জনবল সংকটে নভেম্বরে অনলাইন ক্লাস দিয়েছিল। তারপর ২ মাস হয়ে গেলেও এখনও তাদের হলের জনবল নিয়োগ দিতে পারছে না। অথচ বিইউপির ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ২০ জানুয়ারি। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এখনও ক্লাসেই বসতে পারলো না। তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার অজুহাতে আমাদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে।

এদিকে, নবীন শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাসে একাধিক কর্মসূচি পালন করেছেন। এসব কর্মসূচি থেকে তারা বেশকিছু দাবিও জানিয়েছেন। তাদের দাবিগুলো হলো- আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে সশরীরে ক্লাস শুরু করা এবং অফলাইনে ক্লাস চলাকালে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে কোন প্রকার পরীক্ষা না নেওয়া।

ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬ মাস পার হলেও এখনও শরীরে ক্লাস শুরু করতে পারেনি প্রশাসন। হলে জনবল সংকটে নভেম্বরে অনলাইন ক্লাস দিয়েছিল। তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার অজুহাতে আমাদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। -নবীন শিক্ষার্থী

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন এবং হল এলটমেন্ট জানুয়ারি মাসের মধ্যেই দিয়ে দেব। আশা করছি, নতুন হলগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এ সংক্রান্ত একটি মিটিংয়ে হওয়ার কথা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সে মিটিংয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। প্রশাসন নবীন শিক্ষার্থীদের এ মাসের মধ্যেই ক্যাম্পাসে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

এর আগে গত বছরের ১৮ থেকে ২২ জুন জাবির ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৫ মাস পর সবার শেষে শুরু করেও সশরীরে ক্লাস নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে সশরীরে নবীনদের ক্লাস শুরুর আগেই ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তির আবেদন ও পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ১৪ জানুয়ারি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি আবেদন শুরু হয়েছে। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে এই বর্ষের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।