ট্রান্সজেন্ডার শব্দ সরানোর দাবিতে ঢাবিতে গণ-অবস্থানের ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি বিজ্ঞপ্তি থেকে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ শব্দটি সরানোর দাবিতে গণ-অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার (৩ জানুয়ারি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিকেল ২ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেন তারা।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ। ঘোষণা অনুযায়ী আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা। আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য এ গণ কর্মসূচিতে সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
১৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত ২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে কোটার অংশে হিজড়া কোটায় ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি উল্লেখ করায় এ নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এরপর থেকে 'ট্রান্সজেন্ডার' বিতর্কিত একটি শব্দ, এটি উল্লেখ করে লাগাতার আন্দোলন করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে মোসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মাননীয় উপাচার্য মহোদয় আমাদেরকে জানিয়েছিলেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ট্রান্সজেন্ডার শব্দ দ্বারা হিজড়াদেরকেই সম্বোধন করেছেন। আমরাও হিজড়াদের অধিকার রক্ষার জন্যই আন্দোলন করে যাচ্ছি। কিন্তু ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি নিয়ে বিভ্রান্তির অবকাশ রয়েছে। কেননা ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি দ্বারা হিজড়াদের বুঝায় না। বুঝায় সমকামী তথা রূপান্তরকামীদের মতো বিকৃত মানসিকতার মানুষকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এ ব্যাপারে একমত যে তারা চায় না এই ধরনের বিকৃতি মানসিকতার মানুষকে ভর্তি করাতে। কিন্তু শব্দটি হিজড়া অর্থের সাথে মিসম্যাচ করে। আমরা তাদের অধিকার রক্ষার জন্যই আন্দোলন করে যাচ্ছি। কিন্তু হিজড়াদের প্রতি আমাদের সিম্পাথিকে কাজে লাগিয়ে একদল অসাধু চক্র এদেশে ট্রান্সজেন্ডারের মতো বিকৃত চিন্তাধারাকে এদেশে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অক্সফোর্ডসহ অসংখ্য ডিকশনারিতে ট্রান্সজেন্ডার শব্দের যে অর্থ দেওয়া হয়েছে তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। বাংলা একাডেমির বাংলা-ইংরেজি অভিধানে তো ট্রান্সজেন্ডার শব্দের অস্তিত্বই নাই। ট্রান্সজেন্ডার হাজার হাজার বছরের প্রতিষ্ঠিত লিঙ্গভিত্তিক সিস্টেমকে ওলট-পালট করে দিচ্ছে। একে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার ফলে এক যুগ কম সময়ের মধ্যেই শিশু-কিশোরদের মাঝে ট্রান্সজেন্ডার আইডেন্টিটি নেওয়ার হার ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। ট্রান্সজেন্ডারকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয় তাহলে বাংলাদেশের মতো ঘনবসতি পূর্ণ দেশে এইচআইভি ভাইরাস দ্রুত সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে যেয়ে এই দেশে এক ভয়াবহ মহামারি নেমে আসতে পারে।
ট্রান্সজেন্ডার শব্দের ভয়াবহতা তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা জানান, কারাগারে ট্রান্সজেন্ডার নারী কর্তৃত্ব প্রকৃত নারী ধর্ষণের ঘটনায় স্কটল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগে বাধ্য হন। কানাডার পাঠ্যক্রমে ট্রান্সজেন্ডারকে অন্তর্ভুক্ত করণের ফলে লাখো অভিভাবক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে। হ্যাংগেরি-উগান্ডার মতো দেশগুলো ট্রান্সজেন্ডারদের লিগালাইজেশন বন্ধ ঘোষণা করেছে। কারণ দেশগুলোর জনগণ এর ভয়াবহতা জানে। অথচ আমাদের দেশে ট্রান্সজেন্ডারের মতো বিকৃতি বিষয়কে পাঠ্যবই ও ঢাবির ভর্তি কোটায় স্থান দেওয়া হল।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, ট্রান্সজেন্ডারকে প্রোমোট করা হলে দেশের পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে এক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। নারীরা চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের স্বীকার হবে। বিগত অলিম্পিকগুলো থেকে দেখা যায় প্রকৃত নারীরা ট্রান্সজেন্ডারদের কারণে ক্রীড়া-প্রতিযোগিতায়, এমনকি বিউটি কন্টেস্টেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারীরা জেলখানায়, হোস্টেল, টয়লেটে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঝুঁকিতে পড়বে যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ পশ্চিমা দেশগুলো। দেশে এইচআইভিসহ বিভিন্নত ভাইরাসের সংক্রমণ হলে ভয়াবহ মহামারি হয়ে যেতে পারে।
এসময় শিক্ষার্থী সমকামিতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ উল্লেখ করে বলেন, Old Testament (Chapter 20, verse 13 of Leviticus), Holy Bible (Romans 1:26-28) the Surah Al Araf (80-81), the Holy Quran সহ পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্মগ্রন্থ ট্রান্সজেন্ডার তথা সমকামিতাকে নিষিদ্ধ ঘোষোণা করেছে। বাংলাদেশের সকল পর্যায়ের ধর্মপ্রাণ মানুষ এর বিরোধী। বাংলাদেশের দণ্ডবিধি ৩৭৭ ধারা অনুসারে সমকামিতা তথ্য ট্রান্সজেন্ডারকে প্রকৃতি বিরুদ্ধ মনে করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি প্রদান করা হয়। কেননা এটি আমাদের ধর্মীয় ও আইনের পরিপন্থি এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির বিকৃত বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত ২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে কোটার অংশে হিজড়া/ ট্রান্সজেন্ডার কোটার কথা উল্লেখ করা হয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম নেয়। গত ২১ ডিসেম্বর ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন পালন ও উপাচার্য বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করে শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল শিক্ষার্থীদেরকে স্পষ্ট করেন ট্রান্সজেন্ডার কোটায় শুধু হিজরারাই স্থান পাবে, চিকিৎসার মাধ্যমে রূপান্তরিত কেউ এই কোটার যোগ্য হবে না। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তখন ভর্তি বিজ্ঞপ্তি থেকে বিতর্কিত ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি বাতিলের দাবি জানায়। গত ৩০ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ১জানুয়ারি পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেয় তারা।