ভিসির নেতৃত্বে মেট্রোরেল ভ্রমণ, উচ্ছ্বাসিত ঢাবি শিক্ষকরা
রাজধানীতে মেট্রোরেল প্রকল্প শুরুর সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস দিয়ে যাওয়া এবং টিএসসিতে স্টেশন হওয়া নিয়ে ছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা। হয়েছিলো বিভিন্ন আন্দোলন ও প্রতিবাদ।বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি পাশ দিয়ে যাওয়ায় মেট্রোরেলের শব্দ এবং টিএসসিতে স্টেশনের ফলে অধিক মানুষের সমাগমের আশঙ্কায় সেসময় শিক্ষার্থীরা নানাবিধ আলোচনা-সমালোচনা ও আন্দোলন করলেও সবকিছু ছাপিয়ে চলতি বছরের শেষের দিকে চালু হয়েছে মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ। এরপর গত ১৩ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি স্টেশনও চালু হয়েছে।
শুরু থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর দিয়ে মেট্রোরেল যাওয়াকে সমর্থন করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এবার পাঁচ শতাধিক শিক্ষক এবং কর্মকর্তা নিয়ে মেট্রোরেল ভ্রমণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তারা মেট্রোরেলের টিএসসি স্টেশন থেকে উত্তরা পর্যন্ত ভ্রমণ করেন। এসময় বাংলাদেশে প্রথমবার মেট্রোরেলে চড়ছেন এমন শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের সংখ্যাই ছিল বেশি।
মেট্রোরেলে চড়তে পেরে চরম উচ্ছ্বাসিত ঢাবি শিক্ষক-কর্মকর্তারা। একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, মেট্রোরেল বাংলাদেশকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক যুগান্তকারী উপহার। মেট্রোরেলের মাধ্যমে প্রায় ২ ঘন্টার রাস্তা খুব সুন্দর ভাবে ৩০ মিনিটে চলে যাওয়া যায়। এজন্য তারা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মেট্রোরেল একটি যুগান্তকারী স্থাপনা। আমাদের শিক্ষার্থীরা যারা উত্তরা বা মিরপুর থেকে আসে তাদের জন্য অনেক বেশি সাহায্য করবে মেট্রোরেল। এজন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই।
ভ্রমণ অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি জানান, এটি অত্যন্ত আরামদায়ক ভ্রমণ ছিল। এজন্য মাননীয় উপাচার্য মহোদয়কে আমি ধন্যবাদ জানাই। তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য ভাড়া কমানোর একটা দাবি তুলেছেন সেটি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীরা আরও উপকৃত হবে।
ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সকালে মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের নেতৃত্বে আমরা মেট্রোরেল ভ্রমণ করেছি। এটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বড় অবদান। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। মেট্রোরেলের মাধ্যমে এখন দুই ঘণ্টার পথ ৩০ মিনিটে চলাচল সম্ভব হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য মাননীয় উপাচার্য মহোদয় ভাড়া কমানোর দাবি করেছেন এবং তার পক্ষ থেকে আমরাও এই দাবি জানাই যাতে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী মেট্রোরেলের সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। সর্বশেষ স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরিতে মেট্রোরেল যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।
সমাজকল্যাণ এবং গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং কবি জসীম উদদীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহীন খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মেট্রোরেল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত চমৎকার। আমার মনে হচ্ছিলো আমি বাইরের কোনো দেশের মেট্রোরেলে বসে আছি এতোটাই উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্যও মেট্রোরেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে যারা উত্তরা থেকে আসে তারা একটা নির্দিষ্ট সময় হাতে রেখে টাইম টু টাইম ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে পারবে। এতে করে শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনা কমবে। এছাড়া মাননীয় উপাচার্য ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য ভাড়া কমানোর দাবি জানিয়েছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত শিক্ষা বান্ধব তিনি এই দাবি রাখবেন বলে আমরা আশাবাদী।
এদিকে, টিএসসি স্টেশন থেকে মেট্রোরেল ভ্রমণ শেষে উত্তরা দিয়াবাড়ি স্টেশনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, মেট্রোরেল রাজধানীবাসীর দ্রুত ও আরামদায়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক মাইলফলক। কর্মজীবী মানুষের যাতায়াত সহজ হওয়ায় শ্রম ও সময় সাশ্রয় হচ্ছে। ফলে কর্মক্ষেত্রে তারা সর্বাধিক সেবা প্রদান করতে পারছেন। এছাড়া, মেট্রোরেলে যাতায়াতের ফলে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের প্রবণতা কমছে এবং এতে করে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারও কমার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ যোগাযোগ, অবকাঠামোসহ সর্বক্ষেত্রে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। শেখ হাসিনা সরকার হচ্ছে উন্নয়নের সরকার। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন আজ সারাবিশ্বের কাছে বিস্ময় ও রোল মডেল।
উপাচার্য আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করার জন্য নানাবিধ যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছেন। দেশে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বড় বড় মেগা প্রকল্প ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। যা বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বহুলাংশে বাড়িয়ে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ফার্মেসি অনুষদের ডিন ও ঢাবি নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহিম।