ঢাবি ভর্তিতে ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিলের দাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্রাজুয়েট (স্নাতক) প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষায় ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে একই দাবিতে প্রতিবাদ র্যালি করে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করতে যায় শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করতে যাওয়ার সময় ঢাবি প্রশাসনের দায়িত্বরত ব্যক্তিগণ পথিমধ্যে আন্দোলনকারীদের র্যালি থামিয়ে উপাচার্যের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি গ্রহণ করতে চান কিন্তু আন্দোলনকারীগণ প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যের সাথে সরাসরি কথা বলার উদ্দেশ্যে এগিয়ে যান। এ সময় আন্দোলনকারীগণ বিভিন্ন ধরণের ট্রান্সজেন্ডার কোটা বিরোধী স্লোগান দেন এবং লিফলেট বিলি করেন। এক পর্যায়ে উপাচার্যের সঙ্গে তাদের কয়েকজন প্রতিনিধি সাক্ষাৎ করার সুযোগ পান।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হলো- অনতিবিলম্বে ভর্তি পরীক্ষায় ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিল করা; দ্রুত সময়ে এই ভর্তি বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা; হিজরা জনগোষ্ঠীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বিঘ্নে পড়াশোনার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া এবং ট্রান্সজেন্ডার পরিচয়ধারীদের কোটা ব্যবস্থায় আনার মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডার মতবাদকে প্রমোট করে আইন এবং সংবিধান বিরোধী কাজ করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্ষমা চাওয়া। তবে তারা জানিয়েছে, আলোচনার ভিত্তিতে এ দাবিগুলো পরিবর্তন করা হতে পারে।
এ শিক্ষার্থীদের দাবি, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী যারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী তাদেরকে কোটার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিতে হবে। সেদিক থেকে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী কোটার সুযোগ পাবে এবং তাদেরকে সুযোগ দেওয়া উচিত। কিন্তু ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার সার্কুলারে কোটার ক্ষেত্রে লেখা হয়েছে তৃতীয় লিঙ্গ অথবা ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা প্রযোজ্য। কিন্তু ট্রান্সজেন্ডারকৃত শিক্ষার্থীরা কোনো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নয় তারা স্বেচ্ছায় তাদের লিঙ্গ রূপান্তর করছে সুতরাং তাদের জন্য কোটা প্রযোজ্য নয়। সেক্ষেত্রে সার্কুলার সংশোধনেরও দাবি শিক্ষার্থীদের।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যনারে আয়োজিত এই মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত জাকারিয়া বলেন, হিজরা এবং ট্রান্সজেন্ডার এক নয়। কিন্তু হিজরা সম্প্রদায়ের সহমর্মিতাকে কাজে লাগিয়ে বিকৃত মস্তিষ্কের ট্রান্সদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। একমাত্র কোটা তারাই দাবি করতে পারে যারা সমাজের পিছিয়ে পড়া জাতি। কিন্তু কি যুক্তির উপরে কোন ধরণের শারীরিক সীমাবদ্ধতা ছাড়া ট্রান্সজেন্ডার কোটা চালু করা হয়েছে তা বোধগম্য নয়। ট্রান্সজেন্ডারদেরকে কোটা দেওয়ার অর্থ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে এলজিবিটিকে সমর্থন দেওয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শামসুন্নাহার হলের এক নারী শিক্ষার্থী তার বক্তব্যে বলেন, “ট্রান্সজেন্ডাররা প্রাকৃতিক ভাবে নারী অথবা পুরুষ নন। তারা মানষিকভাবে রূপান্তরিত। তাদেরকে যদি মেয়েদের হলে থাকতে দেয়া হয় এতে একজন নারী শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের অনেক ধরনের অসুবিধা হবে। আমরা তার সাথে রুম এবং বেড শেয়ার করতে পারব না। ধর্মীয় দৃষ্টিতেও সে একজন পুরুষ হওয়ায় ননমাহরাম তাই তার সামনে আমরা নামাজ আদায় করতে পারব না। প্রশাসনের উচিৎ তাদের মানসিক চিকিৎসার ব্যাবস্থা করে দেয়া তাদেরকে কোটা দিয়ে সুবিধা দেয়া নয়।”