১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২:১০

থানায় জিডির পর টিউশনের সব টাকা পেলেন হামলার শিকার চবি শিক্ষার্থী

অভিযুক্ত ডা. উজ্জ্বল কান্তি দেব ও হামলায় আহত চবি শিক্ষাথী  © টিডিসি ফটো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী অলয় দাস মিথুন। দেড় বছর আগে নগরীর গোলপাহাড় এলাকার টিউশন শুরু করেছিলেন তিনি। সেখানকার বাসিন্দা ডা. উজ্জ্বল কান্তি দেবের বড় ছেলেকে মাসিক সাত হাজার টাকা বেতনে সাইন্সের বিষয়গুলো পড়াতেন তিনি। কিন্তু গত জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসের বেতন অলয় দাসকে পরিশোধ করেননি ডা. উজ্জ্বল কান্তি দেব। আর সেপ্টেম্বরে অলয় ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে টিউশনটি বন্ধ হয়ে যায়।

টিউশনের বকেয়া টাকা আনতে গত শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে উজ্জ্বল কান্তি দেবের বাসায় যান অলয়। কিন্তু বেতন না দিয়ে সেসময় তার উপর উল্টো হামলা করে ভয়ভীতিও দেখান ডা. উজ্জ্বল কান্তি দেব। পরে সেদিন রাতে পাঁচলাইশ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।

এ বিষয়ে অলয় দাস মিথুন বলেন, টিউশনি ছেড়ে দেওয়ার দুই মাস পর বেতনের পুরো টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও ২১ হাজার টাকা থেকে মাত্র ১০ হাজার টাকা দেন। বারবার চাওয়ার পরেও স্টুডেন্টের বাবা উজ্জ্বল কান্তি দেব টাকা দিবেন না বলে নানা ধরনের হুমকি ধামকি দেন। পরবর্তীতে ফোনে না পেয়ে গত শনিবার আমি তার বাসায় গেলে আমাকে ভয় দেখায় ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমি প্রতিবাদ করতে গেলে এক পর্যায়ে চেয়ার দিয়ে মাথায় ও হাতে আঘাত করে। পরে থানায় একটি জিডি করা হয়।

আরও পড়ুন: টিউশনির সম্মানী পাওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় হাজারো শিক্ষার্থী

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ডা. উজ্জ্বল কান্তি দেব হামলার ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, অলয় খুব ভদ্র ও ভালো ছেলে। ওকে আমি নিজের ছেলের মতো দেখি। আমাদের মধ্যে সামান্য কথা-কাটাকাটি হয়েছে, কোন মারধরের ঘটনা ঘটেনি। 

তবে তিনি ঘটনার বিষয় স্বীকার করে বলেন, আমি এটার জন্য লজ্জিত। অলয় আমার ছেলেকে পড়াতো। কিন্তু কিছু ক্রাইসিসের কারণে আমি তাকে টাকাটা দিতে পারেনি। সে ২১ হাজার টাকা পেতো আমি তাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। ভেঙে ভেঙে বাকি টাকা পরিশোধ করবো বলেছি কিন্তু সে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ১১ হাজার টাকা বাকি ছিল। সমস্যার কারণে তা দিতে পারিনি। গতদিনের ঘটনার পর আমি কর্জ (ধার দেনা) করে তাকে টাকা দিয়ে দিয়েছি।

তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ভুল হয়ে গেছে। সমস্যায় পড়ে টাকাটা দিতে পারিনি। আমার ছেলেটা সাইন্সে পড়ে। আর্থিক সমস্যার কারণে ওর তিন মাস পড়ালেখা বন্ধ ছিল। অনেক বিষয়ে সে খারাপও করেছে। আমার দোষের জন্য তো আমার ছেলের জীবন নষ্ট হতে পারে না।

পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিল। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে তদন্ত করে এর সত্যতা পেয়েছি এবং অভিযুক্তকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাওনা টাকা পরিশোধ করতে বলেছি। শুনেছি তিনি টাকা পরিশোধ করেছেন। তবে জিডি অব্যাহত আছে। ভিক্টিম জিডি তুলে নিলে তা আর কোর্টে যাবে না। 

চবি শিক্ষার্থী অলয় দাস বলেন, সোমবার সকালে ১১টা ৪৫ মিনিটে তিনি আমাকে বিকাশে টাকা পাঠিয়েছেন। ভুল স্বীকার করে থানায় মাফও চেয়েছেন।

এই ঘটনার সূত্র ধরে সামনে আসে অভিযুক্ত ডা. উজ্জ্বল কান্তি দেবের আগের অপকর্মের বিষয়টি। ২০১১ ও ২০১৩ সালে ভুয়া ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড ভোগ করেছিলেন তিনি। সমাজবিজ্ঞানে পড়েও নামের আগে ডাক্তার, ফিজিওথেরাপিস্ট, বাংলাদেশ এবং ভারত থেকে অর্জিত বিভিন্ন ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার করতেন তিনি। বেশ কয়েক বার গোলপাহাড় মোড়ে উজ্জ্বল কান্তি দেব পরিচালিত হাটহাজারী ফিজিওথেরাপি এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার কে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. উজ্জ্বল কান্তি দেব বলেন, এটি মিথ্যা মামলা। গোলপাহাড়ের একটি জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সেসময় আনোয়ার পাশা তার নামে মামলাটি করেন। বর্তমানে কোর্টে এটি মামলাধীন আছে।