শেষ সময়ে এসে শিক্ষক নিয়োগে তোড়জোড় চবি উপাচার্যের

  © ফাইল ফটো

গত ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার চার বছর মেয়াদ পূর্ণ করেছেন। এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নেতিবাচক ইস্যুতে সামনে আসে তাঁর নাম। এবার শেষ সময়ে এসে বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির ‘না’ করা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও আইন বিভাগে নতুন শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের বিরুদ্ধে। 

জানা গেছে, পরিকল্পনা কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আজ রবিবার আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনী বোর্ড বসার কথা রয়েছে। এ বিভাগেও পরিকল্পনা কমিটি থেকে নতুন শিক্ষক লাগবে না জানানো হলেও গত ১২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে দুটি পদে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন: চবির নতুন ভিসি নিয়োগে অগ্রাধিকারে চার ডিন

আইন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির মতামত চেয়ে গত ২৩ মার্চ রেজিস্ট্রার একটি চিঠি পাঠান। পরবর্তীতে বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির সভায় বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি না দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিষয়টি ৯ এপ্রিল রেজিস্ট্রারকে এক চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেন বিভাগের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক সিফাত শারমিন।

রেজিস্ট্রারকে দেয়া সেই চিঠি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে। সেই চিঠিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রচলিত নিয়ম সেখানে শিক্ষকদের সাপ্তাহিক ন্যূনতম ক্লাস লোড হলো- অধ্যাপক ১০টি, সহযোগী অধ্যাপক ১২টি এবং সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক ১৪টি ক্লাস নেবেন। 

এদিকে আইন বিভাগে অধ্যাপক আছে ১১ জন এবং ছুটিতে আছেন দুজন। ১১ জন অধ্যাপক প্রতি সপ্তাহে সর্বমোট ৭১টি ক্লাস নেন। গড়ে একজন অধ্যাপক প্রতি সপ্তাহে ৬.৪৫টি ক্লাস নেন। একইভাবে দুজন কর্মরত সহযোগী অধ্যাপক (একজন ছুটিতে) প্রতি সপ্তাহে সর্বমোট ১২টি ক্লাস নেন। অনুরূপভাবে সাতজন সহকারী অধ্যাপক প্রতি সপ্তাহে সর্বমোট ৫৮টি ক্লাস নেন। 

এছাড়া সপ্তাহে ৮টি ক্লাস অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকরা নিয়ে থাকেন। বিভাগে বর্তমানে অনার্সে ১৩৬ ক্রেডিট কোর্স চালু আছে। ভবিষ্যতে OBE (Outcome Based Education) চালু হলে অনার্সে ন্যূনতম ক্রেডিট দাঁড়াবে ১৪০, যা বর্তমানের চেয়ে মাত্র ৪ ক্রেডিট বেশি। ছুটিতে থাকা শিক্ষক কাজে যোগদান করলে শিক্ষকদের ক্লাসলোড আরও কমে যাবে। এসব দিক বিবেচনা করে বর্তমানে প্রভাষক দুইটি স্থায়ী শূন্য পদে বিজ্ঞাপন প্রদান না করার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।

তবে এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ তালুকদার এবং ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ভিন্নমত পোষণ করেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগের সাবেক সভাপতি সিফাত শারমিন বলেন, আমরা চিঠিতে হিসেব করে দেখিয়েছিলাম যে আমাদের শিক্ষক প্রয়োজন নেই। আমি এখনো সে সিদ্ধান্তেই একমত যে আমাদের বিভাগে এখনো নতুন শিক্ষকের প্রয়োজন নেই। তবুও কেনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তা আমি বলতে পারবো না। আমরা অফিশিয়ালি ই-ডকুমেন্টস পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের পরিকল্পনা কমিটির সিদ্ধান্তকে বিবেচনায় না নিয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন।

অন্যদিকে বাংলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে জানা গেছে, বাংলা বিভাগের পরিকল্পনা কমিটি থেকে নতুন শিক্ষকের প্রয়োজন নেই বলে জানানো হয়। তবে সে সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করেই চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সেখানে ৭ পদের নিয়োগ বিষয়ে বিভাগকেও জানানো হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষক নিয়োগে যে যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে সেটিতেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা মানা হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এ বিভাগের নির্বাচনী বোর্ড আগামীকাল সোমবার বসবে বলে জানা গেছে। তবে কালকের নির্বাচনী বোর্ডে না বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলা বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির এক বিশেষজ্ঞসহ দুই বোর্ড সদস্য। 

নিয়ম অনুযায়ী, চবিতে কোনো বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হলে নিয়মানুযায়ী প্রথমে বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির সভায় তা অনুমোদন করাতে হয়। অনুমোদিত হলে তা রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠাবেন বিভাগের সভাপতি। পরবর্তীতে রেজিস্ট্রার বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে উপাচার্যের সম্মতি নিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবেন।

উপাচার্যের ‘বিশেষ’ ক্ষমতায় নিয়োগের বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার হাছান মিয়া গণমাধ্যমকে জানান, অতীতের সিন্ডিকেটের একটি সিদ্ধান্ত দেয়া আছে, কোনো বিভাগের কোনো পদ শূন্য হলে সেই পদের জন্য পরিকল্পনা কমিটি যদি ৩ মাসের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি দিতে সুপারিশ না করে, সেক্ষেত্রে উপাচার্যকে পদটি পূরণে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাঝেমধ্যে কোনো কোনো উপাচার্য ক্ষমতাটি প্রয়োগ করেছেন। এ ক্ষেত্রেও (আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি) সেটিই ঘটেছে। এখানে দুটি পদ শূন্য হয়েছে।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার গণমাধ্যমকে জানান, সিন্ডিকেটের নির্দেশনা মোতাবেক সবকিছু আইন মেনেই হচ্ছে। কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। আমরা একটা কমও নেব না, বেশিও নেব না।


সর্বশেষ সংবাদ