রাবির ‘অথরিটি’ নির্বাচনে হলুদ ও সাদা প্যানেলে বড় বিভক্তি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক সমিতি ও বিভিন্ন অথরিটিতে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৭ ডিসেম্বর। আসন্ন এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামীপন্থী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের হলুদ প্যানেল এবং বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সাদা প্যানেলে বড় ধরনের বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, হলুদ প্যানেলের মধ্য থেকে বড় একটি অংশ বিভক্ত হয়ে আলাদা প্যানেলে নির্বাচন করার গুঞ্জন উঠেছিল ক্যাম্পাসজুড়ে। তবে সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় আলাদা প্যানেল প্রকাশ না করে হলুদ প্যানেল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন শিক্ষকদের একাংশ।
অন্যদিকে আসন্ন এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক গ্রুপ সমর্থিত সাদা প্যানেলের মধ্যেও দেখা দিয়েছে বিভক্তি। এ সংগঠনের একাংশের শিক্ষকরা নির্বাচন অংশ নিলেও আরেকটি অংশ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে তুলে ধরে বর্জন করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচনে পাঁচটি পদের বিপরীতে হলুদ প্যানেল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চারজন শিক্ষক নির্বাচন করছেন। তারা হলেন- প্রাধ্যক্ষ ক্যাটাগরিতে ড. মোছা. হাসনা হেনা, অধ্যাপক মো. মাহমুদুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক মোহা. সোলাইমান চৌধুরী এবং সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে তানজিল ভূঞা।
হলুদ প্যানেলের মধ্য থেকে বড় একটি অংশ বিভক্ত হয়ে আলাদা প্যানেলে নির্বাচন করার গুঞ্জন উঠেছিল ক্যাম্পাসজুড়ে। তবে সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় আলাদা প্যানেল প্রকাশ না করে হলুদ প্যানেল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন শিক্ষকদের একাংশ।
ডিন নির্বাচনে হলুদ প্যানেল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন দু’জন। তারা হলেন- সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মো. আমিনুল ইসলাম ও প্রকৌশল অনুষদের ডীন হিসেবে নির্বাচন করছেন ড. মো. রোকানুজ্জামান।
শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে হলুদ প্যানেল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন দু’জন। তারা হলেন সাধারণ সম্পাদক পদে ড. সৈয়দ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আল-আমিন।
দলের মধ্যে এমন বিভক্তি জাতীয় নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা। তারা বলছেন, নিজেদের মধ্যে এমন বিভক্তি দলের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। নিজেদের মধ্যে এমন চলতে থাকলে বিএনপি-জামায়াত সুযোগ নিতে চাইবে। তবে নিজেদের মধ্যে কেন এমন হচ্ছে, সে জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে বসা উচিত ছিল মনে করছেন তারা।
দলের মধ্যে বিভক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে হলুদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত বর্তমান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. বোরাক আলী বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি ও অথরিটি নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে যে ফাটল দেখা দিয়েছে, সেটি অবশ্যই দলের জন্য ভালো নয়। সামনে জাতীয় নির্বাচন। ফলে আমাদের এখন ঐক্যবদ্ধ থাকা খুবই জরুরি।’
তিনি বলেন, দলের নীতিনির্ধারণী বা সিনিয়র শিক্ষকদের উচিত ছিল, যারা হলুদ প্যানেল থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন তাদেরকে নিয়ে আলোচনায় বসা। তারা কেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন? তাদের অসন্তুষ্টির জায়গাটি কোথায়? এগুলো জেনে নিরসন করার চেষ্টা করলে এমন অবস্থার অবসান হতো বলে মনে করছেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুনের সাথে। তিনি বলেন, ‘একটি পজিশনে প্রার্থী থাকে অনেক। সেখান মনোনয়ন দেওয়া হয় একজনকে। অন্যদিকে নিজেকে যোগ্য মনে করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান অনেকেই। আমাদের প্রার্থী নির্বাচনের সময় স্টিয়ারিং কমিটির কোনো সদস্য ভিন্নমত প্রকাশ করেনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে সবারই আলাদা দল গঠন ও ভিন্ন মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে।’
আরো পড়ুন: ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু ১৮ ডিসেম্বর, যেভাবে করবেন
স্টিয়ারিং কমিটির অনেক সদস্য ভিন্নমত প্রকাশ করলেও তাদের মতামতকে উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানিয়ে হলুদ প্যানেলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ড. সৈয়দ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বলেন, ‘এখানে বিল্ডিং ও অঞ্চল দেখে প্রার্থী বাছাই করা হয়। নীতি ও আদর্শকে বিবেচনা করা হয় না। দলের আদর্শের মধ্য থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। দলের স্টিয়ারিং কমিটির উচিত ছিল সাধারণ সদস্যের চাওয়াকে সম্মান করা, মূল্যায়ন করা। কিন্তু তারা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা নির্বাচিত হলে দলকে ঐক্যবদ্ধ করব এবং সাধারণ শিক্ষকদের জন্য কাজ করব।’
আসন্ন এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক গ্রুপ সমর্থিত সাদা প্যানেলের মধ্যেও দেখা দিয়েছে বিভক্তি। এ সংগঠনের একাংশের শিক্ষকরা নির্বাচন অংশ নিলেও আরেকটি অংশ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে তুলে ধরে বর্জন করেছেন।
এদিকে নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়ে গত মঙ্গলবার বিকেলে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে সাদা প্যানেলের একাংশ। এতে ৫৭ শিক্ষকের স্বাক্ষর রয়েছে। তাঁরা বলছেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিরোধী দলসমূহের দেশব্যাপী হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও অথরিটি নির্বাচনসহ কোনো ধরনের নির্বাচন করার পরিবেশ নেই। এ ছাড়া বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহলে সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের জন্য বলা হয়েছে। তাই তারাও নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সাদা প্যানেলের নেতারা বলছেন, হাইকমান্ড থেকে তাঁরা কোনো চিঠি পাননি। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের কার্যনির্বাহী কমিটির অধিকাংশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাঁরা। একটি পক্ষ তাঁদের পছন্দের প্রার্থী না পাওয়ায় অপপ্রচার চালাচ্ছে।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক এফ. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অথরিটি ও শিক্ষক সমিতির নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা প্রশাসন বরাবর আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সার্বিক দিক বিবেচনায় ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করে। এ সিদ্ধান্তটি কার্যনির্বাহী কমিটির দুজন মেনে নিতে পারেননি। তারা এ তারিখে নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে জানান। আর তারা যে হাইকমান্ডের কথা বলছেন, এরকম কোনো লিখিত ডকুমেন্টস আমরা পাইনি। যদি আসে তখন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’