ঢাবিতে যত্রতত্র দেয়াল লিখন-পোস্টার ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করবে প্রশাসন
দেশে মুক্তবুদ্ধি চর্চার অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এ ক্যাম্পাসকে রাজনীতির আঁতুড়ঘরও বলা হয়। তবে ছাত্র সংগঠনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যানার, পোস্টার ও দেয়াল লিখনে সৌন্দর্য নষ্টের অভিযোগ বহু পুরোনো। এ অবস্থায় ক্যাম্পাসে পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে যত্রতত্র পোস্টার, ব্যানার বা ফেস্টুন সাঁটানো থেকে বিরত রাখতে উদ্যোগ নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিরুৎসাহিত করা হবে।
প্রশাসন বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়েও নানাভাবে ছাত্র সংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে তাদের মত প্রকাশ করে থাকে। তবে তারা ক্যাম্পাসের দেয়ালে দেয়ালে কিংবা যত্রতত্র পোস্টার, ব্যানার বা ফেস্টুন সাঁটে না। ক্যাম্পাসের নির্দিষ্ট একটি জায়গায় এটি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ছাত্র সংগঠনগুলো এরকম নির্দিষ্ট একটি জায়গায় পোস্টার-ব্যানার ব্যবহারের সুযোগ দেয়া যেতে পারে।
তবে ছাত্র সংগঠনগুলোর ভাষ্য, ক্যাম্পাসে দেয়াল লিখন খুবই গণতান্ত্রিক এক পন্থা। যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশের যেকোনো আন্দোলনের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে এটি। এগুলো বন্ধ করা হলে শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের জায়গাটাকে সংকুচিত করা হবে।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস একাডেমিক কার্যক্রমের সঙ্গে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের বহুমুখী কার্যক্রমও একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা ব্যক্তিগত ব্যানার, ফেস্টুন বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের সামনে ও হলগুলোতে টানিয়ে রাখে। একইসঙ্গে তাদের দাবিগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দেয়ালে লিখে প্রকাশ করে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, এসব কর্মকাণ্ডের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ইমেজের চেয়ে পলিটিক্যাল কার্যক্রমের একটা ইমেজ দাঁড়ায়। উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, যত্রতত্র না লিখে বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্ট একটা ফ্রেম তৈরি করে দেবে, সেখানে তাদের দাবি-দাওয়া লেখার পরামর্শ দেন তিনি।
জানা গেছে, গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে ‘স্মার্ট ক্যাম্পাস’ হিসেবে গড়ে তুলতে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ৮ দফা নির্দেশনা দেন। সেখানে ক্যাম্পাস ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলো থেকে সব ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নামিয়ে ফেলার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস একাডেমিক কার্যক্রমের সঙ্গে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের বহুমুখী কার্যক্রমও একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা ব্যক্তিগত ব্যানার, ফেস্টুন বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের সামনে ও হলগুলোতে টানিয়ে রাখে। একইসঙ্গে তাদের দাবিগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দেয়ালে লিখে প্রকাশ করে।
তবে বিভিন্ন আবাসিক হলের প্রধান ফটকে ছাত্রলীগ নেতাদের ব্যক্তিগত পোস্টার রয়ে গেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসভবনের দেয়াল, একাডেমিক ভবনসহ ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠনে পোস্টার, লিফলেট বা ফেস্টুন। সম্প্রতি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ক্যাম্পাসের সার্বিক অবস্থার পাশাপাশি ছাত্র সংগঠনগুলোর দেয়াল লিখন নিয়ে কথা বলেছেন।
ক্যাম্পাসের ছাত্র সংগঠনগুলোকে কি বার্তা দিতে চান? জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ছাত্রসংগঠনগুলোর সব সময় চিন্তা করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন শিক্ষার পরিবেশ বজায় থাকে। কোনো কারণে যেন পরীক্ষা বন্ধ না হয়, সেশনজট তৈরি না হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম যেন মানসম্মত থাকে। এ দাবিগুলো আমরা বলেছিলাম। সার্ভিসগুলো যেন মানসম্মত হয়।
তিনি বলেন, ‘এখনও বলছি, ছাত্র সংগঠনগুলোর কাছ থেকে এ একই প্রত্যাশা। সম্প্রতি আমাদের একদল ছাত্র এসে স্মারকলিপি দিয়েছে। সেখানে তারা উল্লেখ করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মার্টকার্ড দেওয়ার জন্য। এটি একটি ন্যায্য দাবি। এভাবে একজন শিক্ষার্থীর বেসিক যে প্রয়োজনগুলো আছে, সেগুলো যেন দিতে পারি সে-বিষয়টি দেখতে হবে। আর ছাত্র সংগঠনগুলো যদি তৎপর থাকে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে তারা যদি সামগ্রিক সহায়তা করে, তাহলে কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়টি আমরা খুঁজে পাব।’
আরো পড়ুন: ঢাবিতে কোরিয়ান ভাষা বিভাগ চালুর সম্ভাব্যতা নিয়ে দু’পক্ষের আলোচনা
উপাচার্য বলেন, ‘তাদের কাছে আমার এটি দাবি। আরেকটি বড় দাবি হলো- আমরা সব সময় দেখি আমাদের দেয়ালগুলোতে বিভিন্ন স্লোগানে লেখা থাকে। আমরা যখন রং করি তার পরের দিনই দেখি, দেয়ালগুলোয় লেখা হয়ে গেছে। পৃথিবীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া যাবে না যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়ালে লেখা থাকে। এ লেখার মাধ্যমে দেয়ালের সৌন্দর্য নষ্ট হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার ছাত্রজীবনে ১৯৮৫ সালে গিয়েছিলাম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন দেখেছি, সেখানের একটি উডেন ফ্রেম লেখা আছে ‘রাজীব দূর হ’। আসলে রাজীব গান্ধী ক্ষমতায় থাকাকালীন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো এগুলো লিখে রেখেছিল। কিন্তু এ লেখাটা তারা কোনো দেয়ালে লেখেনি। আমরা আমাদের ছাত্র সংগঠনের সাথে আলোচনা করে সে সুযোগ করে দেব।’
অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘যদি যে কোনো দেয়ালে লেখা, পোস্টার লাগানো, ব্যানার লাগানো এসব থেকে ছাত্র সংগঠনগুলো বিরত থাকে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে। কেননা পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস অর্থই হলো পরিচ্ছন্ন মন। আর পরিচ্ছন্ন মন যদি শিক্ষার্থীর থাকে, তাহলে তার মন এবং মননের বিকাশে উৎসাহ পাবে। এ জন্য আমাদের ছাত্র সংগঠনগুলো আমাদের শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের সঙ্গে মিলে কাজ করলে ভালো হয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দেয়াল লিখন খুবই গণতান্ত্রিক। যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশের যেকোনো আন্দোলনের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে দেয়াল লিখন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে দেয়াল লিখনগুলো হয়, সেখানে মানুষের কথা লেখা থাকে, ছাত্রদের কথা লেখা থাকে। কিন্তু সারাদেশে যেমন গণতন্ত্রকে জাদুঘরে পাঠানো হচ্ছে, তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়াল লিখন বন্ধ করা হলে সেটা হবে শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের জায়গাটাকে সংকুচিত করা।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ তানভীর হাসান সৈকত দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা উপাচার্য মাকসুদ কামাল স্যারের সঙ্গে একমত। যেখানে প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছেন এবং আমরা স্মার্ট ক্যাম্পাস গড়তে চাই, সেখানে এমন অযথা পোস্টার বা লেখা থাকার প্রয়োজন নেই।’