চবির নতুন ভিসি নিয়োগে অগ্রাধিকারে চার ডিন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার চার বছর মেয়াদ পূর্ণ করেছেন গত ৩ নভেম্বর। এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নেতিবাচক ইস্যুতে সামনে আসে অধ্যাপক শিরীণের নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কর্তা নিয়ে জানতে চাইলে বন্দর নগরীর এই উচ্চশিক্ষালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি পদে নিয়োগ দিতে একাধিক শিক্ষকের নামের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। শিগগির সে তালিকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন ভিসির নাম ঘোষণা আসতে পারে।
দেশের স্বায়ত্বশাসিত এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরবর্তী ভিসি কে হবেন— তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে নানা আলোচনা চলছে। জানা গেছে, নতুন ভিসি হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ চার শিক্ষক আলোচনায় রয়েছেন।
বর্তমান প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান নিম্নমুখী। এখানে অনেক সংকট তৈরি হয়েছে। এটি কাটিয়ে উঠা কষ্টসাধ্য। আমাদের প্রত্যাশা, উচ্চশিক্ষায় চবিকে শীর্ষ তালিকায় রাখতে কাজ করতে পারেন এমন যোগ্য কেউ ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পাবেন—অধ্যাপক আবদুল হক, সাধারণ সম্পাদক, চবি শিক্ষক সমিতি।
দেশের স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন অনুযায়ী, ভিসির মেয়াদ শেষের আগে সিনেটের বিশেষ অধিবেশনে সদস্যদের ভোটে তিন সদস্যের ভিসি প্যানেল নির্বাচন হওয়ার কথা। পরে সেই তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় যাবে। প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর তথা রাষ্ট্রপতি সেই তালিকা থেকে একজনকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেবেন। তিনি চাইলে প্যানেলের বাইরে থেকেও ভিসি নিয়োগ দিতে পারেন। তবে বিগত কয়েকবার এ আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
এ সময়ে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ হয়েছে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, ভিসি নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বা শিক্ষকদের একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাবনা আলোকে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ, নির্দেশনা বা অনুশাসনের আলোকে ভিসি নিয়োগের প্রস্তাবনা রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি নিয়োগের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার পর চ্যান্সেলরের সাচিবিক দায়িত্বে থাকা শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়োগের আদেশ প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে থাকা উচ্চশিক্ষালয়টির ভিসি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন চারটি অনুষদের চারজন সাবেক ও বর্তমান ডিন। এর মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী, সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহামেদ, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী এবং বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নাসিম হাসান।
এর আগে অস্থায়ী দায়িত্ব পালনের পর ২০১৯ সালের ১৩ জুন থেকে প্রো-ভিসি পদে থাকা বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শিরীণ আখতার রুটিন দায়িত্ব পালন করছিলেন ভিসি হিসেবে। এরপর একই বছরের ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পান অধ্যাপক শিরীণ আখতার। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন ১৯৯৬ সালের জানুয়ারিতে। ২০০৬ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি ও ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ প্রো-ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান এই শিক্ষক।
তিনি ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ১৯৮১ সালে একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। এছাড়াও তিনি পিএইচডি ডিগ্রি নেন ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও প্রশাসনের নানা অনিয়ম, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বারবারই সংবাদের শিরোনাম হয়েছে উচ্চশিক্ষালয়টি। বর্তমান প্রশাসনের ব্যর্থতা দেশের এ বিদ্যাপীঠ কে তলানিতে পৌঁছে দিয়েছে জানিয়ে সেখানকার শিক্ষকরা প্রত্যাশা করছেন, ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পাবেন দেশের উচ্চশিক্ষায় চবিকে শীর্ষ তালিকায় রাখতে কাজ করতে পারেন এমন যোগ্য কেউ।
ভিসি নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক বলেন, শিক্ষক সমিতি এবং আমার ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে আমরা একজন সৎ, শিক্ষা ও গবেষণায় যারা দক্ষতার সাথে অবদান রেখেছেন—এমন কাউকে ভিসি হিসেবে প্রত্যাশা করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্ষদে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং শিক্ষকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে এমন একজন ব্যক্তিত্ব প্রয়োজন এ বিদ্যাপীঠের। ইতোমধ্যে বর্তমান প্রশাসনের ব্যর্থতা বিশ্ববিদ্যালয় পিছনে নিয়ে গেছে বলেও মনে করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান জানিয়ে শিক্ষক সমিতির এই নেতা বলেন, বর্তমান প্রশাসনের কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান নিম্নমুখী। ফলে এখানে অনেক সংকট তৈরি হয়েছে। এটি কাটিয়ে উঠা কষ্টসাধ্য। সেজন্য যারা বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির সাথে যুক্ত, যাদের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন আছে, যারা আইনের শাসন মানেন না, যাদের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন আছে এমন কেউ ভিসি হলে বিশ্ববিদ্যালয় আরও অধঃপতনের দিকে যাবে বলেও মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহামেদ জানিয়েছেন, ভিসি হওয়ার তালিকায় তার নাম থাকার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে তাকে দায়িত্ব প্রদান করা হলে তিনি চবিকে প্রথম সারির উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়তে কাজ করবেন। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্টরা যদি তাকে এ পদে যোগ্য মনে করেন তাহলে দায়িত্ব গ্রহণ করে কাজ করতে তার কোনো আপত্তি থাকবে না।
এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছে প্যানেলে থাকা অন্য শিক্ষকদের সঙ্গেও। তবে তারা আপাতত বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন: ডলার সংকটে জটিলতায় বিদেশে উচ্চশিক্ষা, পথ দেখাচ্ছে দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) আবু ইউসুফ মিয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নিয়োগের প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। এ সংক্রান্ত কোনো ফাইল যদি পরবর্তীতে আসে তাহলে যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আপাতত বর্তমান ভিসিকে তার দায়িত্ব চালিয়ে নিতে বলা হয়েছে। নতুন ভিসি নিয়োগ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। প্যানেলে যেসব নাম থাকবে— তা থেকেই কাউকে মনোনীত করা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন ইউজিসির এ সদস্য।