ঢাবির ছাত্রী হলে নেই মিল সিস্টেম, ভোগান্তির সঙ্গী বাড়তি খরচও
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মেয়েদের পাঁচটি হলের কোনোটিতেই নেই মিল সিস্টেমে তিনবেলা খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা। ছাত্রদের হলগুলোতে এ ধরনের ব্যবস্থা থাকলেও বঞ্চিত ছাত্রীরা। খাবারের জন্য হলের ক্যান্টিন বা ডাইনিংয়ের ওপর নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এগুলোর খাবার মানসম্পন্ন না হলেও সুলভ বিকল্প নেই ছাত্রীদের কাছে। ফলে অনেক ছাত্রী পুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছেন। অথচ খাবারের পেছনে ছেলেদের তুলনায় বাড়তি খরচও গুনতে হচ্ছে তাদের। সঙ্গে আছে নানা ভোগান্তি।
মেয়েদের পাঁচটি হলের মধ্যে রয়েছে- রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল এবং কবি সুফিয়া কামাল হল। এসব হলে আট হাজারের বেশি শিক্ষার্থী থাকেন। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী খাবারের জন্য নির্ভর করেন হল ক্যান্টিনের ওপর। কিন্তু খাবারের নির্ধারিত সময়কালের শেষ দিকে ক্যান্টিনে গেলে প্রায় সময়ই না খেয়ে ফিরতে হয় ছাত্রীদেরকে। আর কিছু শিক্ষার্থী নিজেরাই রান্না করেন খাবার।
রোকেয়া হলের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী শ্রাবস্তী বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘শুনেছি ছেলেদের হলে মিল সিস্টেম থাকায় খরচ তুলনামূলক কম। পাশাপাশি খাবারের মান ডাইনিংয়ের তুলনায় ভালো। তাছাড়া হলে মেয়ে বেশি থাকলেও মাত্র একটি ক্যান্টিন ও একটি ডাইনিং৷ ৭ মার্চ ভবনের ক্যান্টিন বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে খাবার দ্রুত ফুরিয়ে যায়। মিল সিস্টেম থাকলে খাবারের সংকটটাও মনে হয় কমতো।’
রোকেয়া হল
ঢাবির ছাত্রী হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডাইনিং ও ক্যান্টিনের মালিক খাবারের মেন্যু ও দামের তালিকা টানিয়ে রাখেন। ছাত্রীরা সেখান থেকে পছন্দমতো কিনে খান। এতে অনেক বাইরের হোটেলের কাছাকাছি খরচ পড়ে। খাবারও দ্রুত শেষ হয়ে যায়।
তবে ছেলেদের হলের মতো মিল সিস্টেম থাকলে সারা মাসের খাবারের খরচ একবারে দিতে হয়। এতে খরচ তুলনামূলক কম পড়ে। ক্যান্টিনের তুলনায় অন্তত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম খরচ হয়। ফলে কম খরচেই সারা মাসের খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যায়। ছাত্রী হলে এ ধরনের ব্যবস্থা না থাকায় বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে তাদের।
আবাসন সংকটের সঙ্গে খাবারের বাড়তি খরচের কারণে কষ্টে দিন কাটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের ছাত্রীদের। হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তানজিলা বলেন, ‘মেস সিস্টেম থাকলে ভালোই হতো। এতে আমাদের পছন্দের খাবারটা নিতে পারতাম সহজে। অনেক সময় ক্যান্টিনের মেন্যু পছন্দ হয় না। মিল সিস্টেম চললে এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতো। দুপুর ৩টা ও রাত ১০টার পরে ক্যান্টিনে খাবার পাওয়া যায় না। এর আগেই শেষ হয়ে যায়। কখনো কখনো না খেয়ে থাকতে হয়।’
ছেলেদের হলের মতো মিল সিস্টেম থাকলে সারা মাসের খাবারের খরচ একবারে দিতে হয়। এতে খরচ তুলনামূলক কম পড়ে। ক্যান্টিনের তুলনায় অন্তত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম খরচ হয়। ফলে কম খরচেই সারা মাসের খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যায়। ছাত্রী হলে এ ধরনের ব্যবস্থা না থাকায় বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে তাদের।
ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেয়েদের হলে ভাত ৫-১০ টাকা, মুরগির মাংস ৩০, মাছ ৩০-৩৫, খাসির মাংস ৪০, সবজি প্রতিটি ১০ এবং ডাল ১০ টাকা দিয়ে কিনে খেতে হয়। এতে ভাত, মাছ বা মাংস, সবজি ও ডাল মিলিয়ে একবেলা খেতে ৬০ থেকে ৭০ টাকা গুনতে হয় তাদের। পাতলা ডাল এর সঙ্গে ফ্রি থাকে।
অপরদিকে ছেলেদের হলে মুরগির মাংসের প্যাকেজ ৫০-৫৫, গরুর মাংস ৭০ এবং মাছ দিয়ে ৪০-৫০ টাকায় একবেলা খেতে পারেন শিক্ষার্থীরা। আর মিল সিস্টেমে একবেলা খেতে সর্বোচ্চ খরচ পড়ে ৫০ টাকা। এ খাবারের মানও ক্যান্টিনের তুলনায় ভালো হয়। মিল সিস্টেমের খাবারের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকেন শিক্ষার্থীরাই।
বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল
জানা গেছে, হলের ক্যান্টিন বা ডাইনিংয়ের খাবারের ওপর নির্ভরশীল থাকায় অনেক শিক্ষার্থী খাবার পায় না। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত একই ধরনের খাবার খেতে হচ্ছে। হলের ক্যান্টিন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খাবার পরিবেশন করে। কোনো শিক্ষার্থী সে সময়ের মধ্যে না যেতে পারলে না খেয়েই থাকতে হয়। অথচ ছেলেদের মিল সিস্টেমে নিয়মিত মেন্যু পরিবর্তন হয়। দেরিতে গেলেও তার জন্য নির্ধারিত খাবার প্রস্তুত থাকে।
এসব কারণে ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের খরচও বেশি হয় বলে জানান কবি সুফিয়া কামার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মাইশা। তিনি বলেন, ‘হলের ক্যান্টিনগুলোতে খাবারের স্বাদ ও মান কোনোটাই ভালো না। নিজেদের ব্যবসায়িক মুনাফা লাভই মালিকদের উদ্দেশ্য। যদি হলে মিল সিস্টেম চালু হয়, তবে খাবারের মেন্যু ও মান ভালো থাকবে। মাসিক টাকা বরাদ্দ আগেই দিয়ে দেওয়া যায়। এতে মাস শেষে অর্থকষ্টে পড়লেও খাবার নিয়ে চিন্তা থাকবে না।’
আরো পড়ুন: ইতিহাসে ফেল, দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হলো সুরাইয়ার লাশ
তবে ছাত্রীরা কখনও এ ধরনের বিষয়ে কিছু বলেননি বলে জানান শামসুন নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল। তিনি বলেন, এ ধরণের সিদ্ধান্তগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়ে থাকে। যদি এ ধরনের ব্যবস্থা মেয়েদের জন্য ভালো হয়, তাহলে অবশ্যই তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে দেখবেন।
কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী বলেন, মেয়েদের হলে মিল সিস্টেম নেই। তবে ক্যান্টিনে তাদের কম খরচে খাবার দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে তারা সন্তুষ্ট বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, হলগুলোর সঙ্গে তার কোনও সম্পৃক্ততা নেই। এ বিষয়ে উপাচার্য বলতে পারবেন। পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।