২৬ নভেম্বর ২০২৩, ১৮:৩৭

উচ্চশব্দে গানবাজনায় নিষেধ করায় সাংবাদিক-শিক্ষার্থীদের পেটাল ছাত্রলীগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলে মধ্যরাতে উচ্চশব্দে গানবাজনায় নিষেধ করায় সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে হল ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। রোববার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বরাবর এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে শাস্তির দাবি জানিয়েছে ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল তিন সাংবাদিক সংগঠন।

এ ব্যাপারে চানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঘটনাটি শুনেই হল প্রশাসনকে ডেকেছি। তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি। 

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রায়হান ইসলাম। অন্যদিকে অভিযুক্ত হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আল আমিন আকাশ এবং ছাত্রলীগকর্মী সম্রাট, ইমরান, নাফিজ ও আমির হামজা। তারা সবাই আকাশের অনুসারী। কিন্তু ক্যাম্পাস রাজনীতিতে সক্রিয় নন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত দেড়টার দিকে শহীদ হবিবুর রহমান হলের ২১৬ নম্বর কক্ষে বিকট আওয়াজে গানবাজনা, লাফালাফি ও হইচই হচ্ছিল। শব্দ সহ্য করতে না পেরে উপরতলার ৩১৫ নম্বর কক্ষ থেকে আবাসিক শিক্ষার্থী শাহাদত হোসেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মঞ্জুরুল ইসলামকে নিয়ে নিচতলায় আসেন।

তখন ২১৬ নম্বর রুম থেকে হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আকাশকে দেখে গান কোথায় বাজে তা জিজ্ঞেস করেন। এ কথা জিজ্ঞেস করতেই শাহদতের ওপর চড়াও হন এবং তুইতোকারি শুরু করেন আকাশ। উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। তখন ২১৬ নম্বর কক্ষ থেকে বের হন ইমরান ও সম্রাট এবং বাকবিতণ্ডা এক পর্যায়ে শাহদতের কানে সজোরে থাপ্পড় দেন ইমরান।

তখন পাশের কক্ষের (২১৭ নম্বর) রায়হান ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে উচ্চশব্দে গান বাজাতে নিষেধ করেন এবং উভয়পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেন। তখন তাকেও ধাক্কা দেন ইমরান ও সম্রাট। একপর্যায়ে টিশার্ট পড়তে ২১০ নম্বর কক্ষের দিকে গিয়ে অন্য সহযোগিদের ডাকেন আকাশ। তখন ২০৮ নম্বর কক্ষের নাজিম ও আমির হামজাসহ কয়েকজন মিলে অতর্কিতভাবে রায়হানকেও মারধর করেন। এতে তিনি মাথায় ও চোখে আঘাত পান। এ ঘটনায় নিজেদের নিরাপত্তা ও অভিযুক্তদের শাস্তি দাবি জানান তারা। 

অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা আকাশ জানান, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি। অন্যরাও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এদিকে, গণমাধ্যম কর্মীর ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল তিন সাংবাদিক সংগঠন। তদন্ত সাপেক্ষে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তদের হল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং মারধরের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আল্টিমেটাম দেন তারা। 

এ ব্যাপারে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিককের গায়ে হাত খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এটা কোন ছাত্রলীগের দায়িত্বশীলের কাজ নয়। অভিযোগ প্রমাণ হলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। এতে হবিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষক ড. গৌতম দত্তকে আহ্বায়ক এবং ছালেকুজ্জামান, ড. ছাইফুল ইসলাম, ড. আরমান হোসেন ও ড. আশিক শাহরিয়ার। 

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামীকাল উভয়পক্ষকে ডেকে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ শোনা হবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।