বিতর্কিত নির্বাচন হলে দেশ দীর্ঘস্থায়ী সংকটে পড়বে: সাদা দল
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং ‘একতরফা’ নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দল সমর্থিত শিক্ষকরা। আজ শনিবার (১৮ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল কর্তৃক তফসিল ঘোষণা এবং নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে দেশের মানুষের দাবি এবং আন্তর্জাতিক মহলের পরামর্শ উপেক্ষা করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান তারা। আবারো একটি বিতর্কিত নির্বাচন হলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ কেবল সংঘাতময়ই হবে না, বরং দেশ দীর্ঘস্থায়ী সংকটের আবর্তে নিপতিত হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।
সাদা দলের আহবায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমা এবং যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও অধ্যাপক আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এ বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছে। মানবাধিকার ও সুশাসন আজ সুদূরপরাহত।
আওয়ামী লীগ এবং তাদের জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলসমূহ ছাড়া এদেশের ক্রিয়াশীল সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গণতান্ত্রিক বিশ্ব, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। এ কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে এদেশের মানুষ বুঝতে পেয়েছে, এ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরের দুটি উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রকাশ্যে ভোট জালিয়াতির ঘটনায় এটি আবারো প্রমাণিত হয়েছে যে, তাদের অধীনে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়। এ ঘটনা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর একটি দল-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের আন্দোলনের যৌক্তিকতাকে আরো জোরালো করেছে।
কিন্তু জনদাবি এবং আন্তর্জাতিক মহলের একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ সরকার আবারো একটি প্রহসনের একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের অপচেষ্টা করছে উল্লেখ করে সাদা দল সমর্থিত শিক্ষকরা বলেন, গত ২৮ অক্টোবর পরিকল্পিতভাবে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড করা এবং পরবর্তীতে বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং নেতা-কর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করে কারাগারে আবদ্ধ করেছে।
বস্তুত বিএনপি এবং বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের কারারুদ্ধ করে তারা ফাঁকা মাঠে একতরফা নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ ঢাবি শিক্ষকদের একাংশের। তাদের দাবি, এরই অংশ হিসেবে বর্তমান আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা মনে করি, সরকার কম্বোডিয়ান স্টাইলে একটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতে চাইছে।
আরো পড়ুন: বিএনএমে যোগদানের গুঞ্জন ক্রিকেটার সাকিব ও মেজর হাফিজের
সরকারের এ ধরণের ‘হীন রাজনৈতিক অপকৌশলের’ তীব্র নিন্দা জানান তারা। রাজনৈতিক সমঝোতার পথ পরিহার করে তফসিল ঘোষণা এবং একতরফা নির্বাচন আয়োজনে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, এটি দেশের রাজনৈতিক সংকটকে আরো ঘনীভুত করবে এবং এতে দেশে নৈরাজ্য আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে তারা মনে করেন। এ অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
শিক্ষকেরা বলেন, বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক নাজুক। আবারো একটি বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ কেবল সংঘাতময়ই হবে না, বরং দেশ দীর্ঘস্থায়ী সংকটের আবর্তে নিপতিত হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।
দেশের বৃহত্তর কল্যাণে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে একটি দল-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানান তারা।