১৫ বছর পর ঢাবির এসএম হলের বারান্দার ‘গণরুম’ উচ্ছেদ প্রশাসনের
দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ঐতিহ্যবাহী সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের (এসএম) বারান্দাগুলো ‘গণরুম’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের ছত্রছায়ায় এখানে বিশ্ববিদ্যালয়টির নবীন ও অনিয়মিত ছাত্রদের পাশাপাশি অবস্থান করতেন বহিরাগতরাও। ১৫ বছর ধরে চলা এই বারান্দার ‘গণরুম’ সংস্কৃতি সম্প্রতি উচ্ছেদ করেছে হল প্রশাসন। এর মধ্যে দিয়ে অবসান ঘটল ঢাবির বারান্দার ‘গণরুম’ সংস্কৃতির।
জানা গেছে, ধারণ ক্ষমতার বেশি শিক্ষার্থীকে বরাদ্দ দেওয়া, ছাত্রজীবন শেষেও দীর্ঘদিন হলে অবস্থান ও বহিরাগতদের অবস্থানের কারণে ঢাবির প্রতিষ্ঠাকালীন হলটির বারান্দাগুলো ২০০৭-০৮ সেশন থেকে ‘গণরুম’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কালের পরিক্রমায় এই হল এখন নড়বড়ে অবস্থায়। হলে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর নতুন করে শিক্ষার্থীদের অ্যাটাচ দেয় বন্ধ হয় ২০২০-২১ সেশন থেকে। পরবর্তীতে ২০২১ সালের শেষের দিকে হলের বারান্দায় ফাটল দেখা দিলে বারান্দাগুলো ‘গণরুম’ রাখা বিছানাপত্র ও খাট সরিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিয়েছিল হল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই প্রশাসনের সেই নির্দেশ অমান্য করে বর্তমানে প্রায় দুইশ শিক্ষার্থী ও বহিরাগত অবস্থান করেছিল।
এদিকে, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়ে গত সোমবার (১৩ নভেম্বর) রাত ১০টায় অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ওই হল পরিদর্শনে আসেন। পরবর্তীতে হলের ২য় তলায় বারান্দাগুলোতে অবস্থান করা সাবেক ও বহিরাগত শিক্ষার্থীদের উচ্ছেদ করা নির্দেশনা দেন তিনি। তবে সেখানে অবস্থান করা হলের বৈধ শিক্ষার্থীদের রুমের ব্যবস্থা করার জন্য হলের প্রভোস্টকে নির্দেশ দেন অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। এরপর হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে থাকা বিছানাপত্র ও খাট সরিয়ে নিয়ে গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।
জানা যায়, ২০০৭-০৮ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের বারান্দায় শিক্ষার্থী থাকা শুরু করে। এসব বারান্দায় থাকা নবীন শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের কর্মসূচিতে যেতে হয়। মিছিল-মিটিংয়ের বিনিময়ে তাদের পরে রুম দেওয়া হতো।
এ দিকে গত সোমবার রাতে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল ওই হল পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, আজকের ভেতর হল না ছাড়লে ঢাবি প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের উচ্ছেদ এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হলের সাবেক শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়ে নতুন শিক্ষার্থীদের রুমে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্টকে নির্দেশ দিয়েছি।
এ বিষয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড, মোহাম্মদ ইকবল রউফ মামুন বলেন, হলটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থী বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। এরপরও বহিরাগত এবং সাবেক শিক্ষার্থী হলের বারান্দায় অবস্থান করছিল। উপাচার্যের নির্দেশে তাদেরকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, হলের গণরুমগুলো দীর্ঘদিন ধরে নোংরা হয়ে আছে। তাই হলের বারান্দা এবং রুমগুলো পরিষ্কারের জন্য তাদেরকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বারান্দার গণরুম থেকে উচ্ছেদ হওয়া হলের একাধিক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে হলে অবস্থান করে। এর ফলস্বরূপ আমরা হলে সিটে থাকতে পারিনা, অবস্থান করতে হয় গণরুমে।
তারা আরও বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ হলে বহিরাগত শিক্ষার্থী কিভাবে অবস্থান করে এটা আমার বোধগম্য নয়। ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় তারা হলের রুমগুলো দখল করে বসে আছে।