১৩ নভেম্বর ২০২৩, ২২:৫৮

শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আবারও আলোচনায় ঢাবির ‘প্রলয় গ্যাং’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © লোগো

বহিরাগত এক শিক্ষার্থীকে পিঠিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অপকর্ম জড়িত থাকা ‘প্রলয় গ্যাং’ এর সদস্যরা। সম্প্রতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলভী আরসালান নামে এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করার অভিযোগ এসেছে তাদের বিরুদ্ধে। বর্তমানে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় অবস্থান করছেন। তবে পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।

আলভীর মা ডা. রেহেনা আক্তার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত। এ ঘটনায় গত ৯ নভেম্বর রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন তিনি।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসে আলভী তার বন্ধুর সাথে গল্প করছিলেন। এমন সময় ‘প্রলয় গ্যাং’ এর কতিপয় সদস্যরা তাদেরকে নানাভাবে হেনস্থা করতে থাকে। প্রতিবাদ করলে উদ্যানের ভেতরে নিয়ে গিয়ে তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীতে আলভীকে ধানমন্ডির পপুলার মেডিকেলে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

মামলার এজহারে অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী তবারক মিয়া, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থী মুরসালিন, সাকিব, জুবায়ের ও স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী জোবায়ের ইবনে হুমায়ূন। এছাড়াও, অজ্ঞাত আরো ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে ডা. রেহেনা বলেন, গত ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পশ্চিম পাশে বসে ছেলে আলভী আরসলান তার বান্ধবীর সাথে গল্প করছিলেন। এমন সময় তবারক, মুরসালিন, সাকিব, জুবায়ের ও জোবায়ের ইবনে হুমায়ূনসহ ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল তাদেরকে বিভিন্নভাবে হেনস্থার পর বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন শুরু করে। ডা. রেহেনার ছেলে (আলভী) এর প্রতিবাদ করলে তাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে শুরু হয় পৈশাচিক শারীরিক নির্যাতন। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা রড, লাঠি ও কাঠ দিয়ে তার বিভিন্ন স্থানে জখম করা হয়। 

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, এরপর তবারক আলভীর পকেটে থাকা আড়াই হাজার টাকা নিয়ে সেখান থেকে সরে যায়। মুরসালিন আলভীর কাছে থাকা পোকো কোম্পানির ২৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি স্মার্টফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। সবশেষে আলভীর ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে ফেলে অভিযুক্তরা।

ছেলের উপর নির্যাতন সম্পর্কে মা ডা. রেহেনা আক্তার বলেন, আমার ছেলের ওপরে পৈশাচিক নির্যাতন করা হয়েছে। তারা সিগারেট, গাঁজা খেয়ে সেগুলোর আগুন আমার ছেলের মাথা ও গলার বিভিন্ন জায়গায় পুড়িয়ে দিয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করে রক্তাক্ত করেছে। এখনো আমার ছেলে আইসিইউতে ভর্তি আছে। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ভুক্তভোগীর পরিবার আমাদেরকে কিছুই জানায়নি, তবে শাহবাগ থানা থেকে আমাদেরকে জানানো হয়েছে। যেহেতু তারা মামলা করেছে তাহলে থানা থেকে যে ব্যবস্থা নেওয়ার তারা নেবে। এধরণের কাজের সাথে যারা যুক্ত তাদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো কথা বলবে না। তাদেরকে সমর্থনও করবে না।

গতবার প্রলয় গ্যাং আলোচনায় আসলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার প্রতিফল এটা কিনা জানতে চাইলে প্রক্টর জানান, আমাদের ব্যর্থতা কেন হবে? আমরা দুজনকে বহিষ্কার করেছি। ডিবি তদন্ত করছে বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত শেষ করেছে আগামী ২০ নভেম্বর ডিবি কার্যালয়ে উপস্থাপিত হলে ঐ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত আসে সেটা নেওয়া হবে। তবে বর্তমান সমস্যা নিয়ে যেহেতু অভিযুক্তরা কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে করেনি তাই আমরা তদন্ত কমিটি করিনি তবে প্রয়োজন হলে থানার অভিযোগ অনুযায়ী আমরা ডিবির কাছে তদন্তের দায়িত্ব দিবো।

তবে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায় নি।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের সামনে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনকে মারধরের ঘটনায় আলোচনার আসে প্রলয় গ্যাংয়। এ ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন জোবায়ের ইবনে হুমায়ূনের মা সাদিয়া আফরোজ খান। ১৯ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ৬-৭ জনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দেন তিনি। যেটির মামলা এখনো চলমান। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই গ্যাংয়ের অভিযুক্ত দুই সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করে।