১১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৩১

অবরোধে নিরাপত্তা শঙ্কায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)  © ফাইল ফটো

বিএনপি-জামায়াতের চলমান অবরোধ ও হরতালের প্রভাব পড়েছে রাজধানী। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও কোথাও চলন্ত গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। ফলে নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়ে বাইরে বের হতে হচ্ছে ঢাকাবাসীকে। শিক্ষার্থীদের সেশনজট এড়াতে এমন পরিস্থিতিতেও পাঠদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ ও প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি)।

বিগত কয়েকদিনে বেশ কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনে আগুন লাগানো এবং ককটেল উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে আতঙ্ক নিয়ে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে অভিভাবকদেরও।  

৬ নভেম্বর ঢাবির কলাভবনের একটি টয়লেট থেকে দু'টি এবং ২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ গেটের সামনে থেকে তিনটি ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া গত দু'দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু'টি বাসে আগুন দেয়া হয়েছে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাকরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে মত তাদের। এক্ষেত্রে যেকোন সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। সুতরাং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে একটু বেশিই ভাবতে হচ্ছে তাদের। 

সাভারের গার্মেন্টস শ্রমিক রহিমা খাতুনের (ছদ্মনাম) ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। সন্তানের ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া ঝুঁকির কথা ভেবে সারাদিন দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতে হয় দরিদ্র এই মাকে। ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, ‘শুনেছি হলে থাকলে বাধ্যতামূলকভাবে মিছিল-মিটিংয়ে যেতে হয়। তাই শুরু থেকেই ছেলেকে বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছে কিন্তু অবরোধের কারণে ভয় হচ্ছে, কখন কোন দুর্ঘটনা ঘটে। শত অভাব-অনটনের মাঝে আমার ছেলেটা এতবড় প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত যেতে পেরেছে। যদি ছেলের কিছু হয় এই ভেবে সারাদিন উৎকণ্ঠায় থাকতে হয়।’

আরও পড়ুন: আড্ডা দিতে এসে টিএসসিতে ছাত্রলীগের মারধরের শিকার ছাত্রদল নেতা

এদিকে গত সোমবার (৬ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের একটি টয়লেট থেকে দু'টি ককটেল উদ্ধার হয়। পরে শাহবাগ থানায় বিষয়টি জানানো হলে পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ককটেল দুটি উদ্ধার করে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ গেটের সামনে থেকে ককটেল সদৃশ তিনটি বস্তু উদ্ধার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। 

একদিন ক্লাসে, রুমে কিংবা অন্য কোথাও বিস্ফোরণ ঘটবে। এখন ক্যাম্পাসের কোন স্থানে শিক্ষার্থীরা দাঁড়াতেও ভয় পায়—নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাবি শিক্ষার্থী

ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে ককটেল উদ্ধারের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সহকারী প্রক্টর লিটন কুমার সাহাকে প্রধান করে গঠিত চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির অন্য তিন সদস্য হলেন সহকারী প্রক্টর ড. মোহাম্মদ বদরুল হাসান, ড. আব্দুল মুহিত ও ড. সঞ্চিতা গুহ। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর বদরুল হাসান দ্যা ডেইলি  ক্যাম্পাসকে বলেন, কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। আমাদের কাজের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আমরা তদন্ত কাজ চালিয়েছি। আশা করছি বেঁধে দেওয়া সময়েরই মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো। 

এদিকে গত দু'দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু'টি বাসে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। গত রোববার (৫ নভেম্বর) বিকাল ৩টার দিকে মিরপুর বাঙলা কলেজের সামনে চৈতালী নামের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনায় খুব বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন অভিভাকেরা। 

এ শঙ্কায় আতঙ্কগ্রস্থ শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে, এরপর ভবনে ককটেল পাওয়া গেলো। হয়তো একদিন ক্লাসে, রুমে কিংবা অন্য কোথাও বিস্ফোরণ ঘটবে। এখন ক্যাম্পাসের কোন স্থানে শিক্ষার্থীরা দাঁড়াতেও ভয় পায়।