গাছ কাটার প্রতিবাদে জাবি ভিসিকে অবরুদ্ধ করল শিক্ষার্থীরা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য গাছ কাটার প্রতিবাদে দিনব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসময় উপাচার্যকে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে তারা।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দুপুর দেড়টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ করে রাখেন উপাচার্যকে। তবে দুপুর সোয়া দুইটার দিকে তালা খুলে দিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আলাপ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় গাছ কাটার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করাসহ তিনদফা দাবি জানান তারা। তার প্রেক্ষিতে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে কার্যালয়ে চলে যান উপাচার্য। তখন প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে আবারও তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা।
এর আগে, দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি কয়েকটি ভবন ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে না জানিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাতের আঁধারে গাছ কাটায় প্রশাসনকেই দায়ী করেন তারা। এসময় তারা অবিলম্বে সিন্ডিকেট ডেকে আইবিএ ভবনের স্থান পরিবর্তন, তদন্ত কমিটি গঠন, মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে পরিকল্পিত উন্নয়নের দাবি জানান।
পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাছ কাটার কারণ অনুসন্ধানে প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যা আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
তবে তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়ায় ওই বিষয়ে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন ইন্সটিটিউট অব বিজনেস অ্যডমিনিস্ট্রেশনের পরিচালক অধ্যাপক কে এম জাহিদুল ইসলাম।
এদিকে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবির সুনির্দিষ্ট উত্তর না পেয়ে রাত ৯ টার দিকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান লাইব্রেরীতে যান ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। গাছ কেটে ফেলা আইবিএ-জেইউ এর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলমান নতুন লাইব্রেরী প্রকল্পের ঠিকাদার হওয়ায় লাইব্রেরীর কাজ বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় জাবি ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় বলেন, আমাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য ১৩ তারিখ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। এর মধ্যে আমরা সংহতি সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো।
অন্যদিকে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে স্থায়ী ভবনের দাবিতে মিছিল বের করেন আইবিএ-জেইউ এর শিক্ষার্থীরা।
তারা বলেন, আমাদের দাবি একটাই আমাদের একাডেমিক ভবন চাই। ভবনের কাজ কোনোভাবেই বন্ধ রাখা যাবে না।
তবে এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা বলেন, আমরা আইবিএ শিক্ষার্থীদের বিরোধী না। তাদের দাবি যৌক্তিক। কিন্তু মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের মাধ্যমে তাদের ভবন নির্মাণ করতে হবে। শুধু আইবিএ নয়, যেসকল বিভাগের ক্লাসরুম সংকট আছে তাদের পরিকল্পিত ভাবে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে সংকট নিরসন করতে হবে।
এর আগে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, গাছ কারা কেটেছে এ বিষয়টি আমি জানিনা। আমার অনুমতি নেওয়া হয়নি, আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় আমি বলেছিলাম গাছ না কেটে ভবন করতে। এছাড়া, ২০১৬ সালে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আইবিএর ভবন নিমার্ণের জন্য স্থান নিধার্রণ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে চাইলে পুনরায় সিন্ডিকেটে উত্থাপন করতে হবে। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ।