রাবি প্রশাসনের তথ্য গোপনের ব্যাখ্যা চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপাচার্যের সময় নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের নিয়োগ স্থগিতাদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের জুলাই মাসে সেটি প্রত্যাহার করা হয়। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, আগের সেই নিয়োগ অনিয়মের বিষয়ে হাইকোর্টে এখনো মামলা চলমান রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের চিঠিতে বিচারাধীন রিট পিটিশনের তথ্য গোপন করেছে। কেন তথ্য গোপন করা হলো তার ব্যাখ্যা চেয়ে রাবি প্রশাসন বরাবর চিঠি প্রেরণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোছা. রোখছানা বেগম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। সোমবার চিঠিটি প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছেছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহানের সময় নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ স্থগিতাদেশ জারি করা হয়। পরে ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত স্থগিতাদেশ ২০২৩ সালের ২৫ জুলাই প্রত্যাহার করা হয়।
কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায় যে, উক্ত নিয়োগ অনিয়মের বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে ৭১২৩/২১ নং রিট পিটিশন মামলা চলমান আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রেরিত আবেদনপত্রে উক্ত বিচারাধীন রিট পিটিশনের তথ্য গোপন করেছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।
আরও পড়ুন: সেসিপে নিয়োগ: ভি-রোল ফরম মন্ত্রণালয়ে পাঠাল এনটিআরসিএ
এমতাবস্থায়, বর্ণিত ৭১২৩/২১ নং রিট পিটিশনের তথ্য গোপন করে কেন নিয়োগ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছিল তার ব্যাখ্যা জরুরি ভিত্তিতে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এছাড়াও, গত ২৬ অক্টোবরের আরও একটি চিঠিতে ৭১২৩/২১ নং রিট পিটিশন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জারিকৃত প্রত্যাহার আদেশ স্থগিত করা হয় এবং উক্ত রিট পিটিশনটি নিষ্পত্তির যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
এর আগে রাবির শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা-২০২২ এবং প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিশেষ শর্ত (প্রথম শ্রেণিতে প্রথম থেকে সপ্তম হতে হবে) বাংলাদেশের সংবিধান এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশিকা অনুসরণ করা হয়নি মর্মে ফলিত গণিত বিভাগে প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. আব্দুল আওয়াল হাইকোর্টে একটি রিট (১২৮৯৭/২০২৩) আবেদন করেন। শুনানি শেষে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০২২ এবং প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংবিধান ও ইউজিসির নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ দুই মাসের জন্য ফলিত গণিত বিভাগের নিয়োগ স্থগিতের আদেশ দেন।
ক্রপ সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মু. আলী আসগর বলেন, রাবিতে দীর্ঘদিন নিয়োগ বন্ধ থাকার পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক মাস আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পুনরায় নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করেন। আবার রাবি নিয়োগ প্রক্রিয়া হাইকোর্ট কর্তৃক স্থগিত থাকায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২৬ অক্টোবর এক পত্রে রাবির সকল নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, ২৬ অক্টোবরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অন্য একটি পত্রে রাবি প্রশাসনের কাছে জরুরি ভিত্তিতে ব্যাখ্যা দাবি করে, কেন হাইকোর্টের নিয়োগ স্থগিতাদেশ গোপন রেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিকট নিয়োগ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছিল? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় লিগ্যাল সেলের এরূপ কর্মকাণ্ডে দেশের দ্বিতীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।