রাবি শিক্ষার্থী আয়াতুল্লাহর ৬৪ জেলা ভ্রমণ 

৬৪ জেলা ভ্রমণকালে আয়াতুল্লাহ
৬৪ জেলা ভ্রমণকালে আয়াতুল্লাহ  © সম্পাদিত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়াতুল্লাহ ভ্রমণ করেছেন দেশের ৬৪টি জেলা। মুগ্ধ হয়েছেন নানা জেলার নানা সংস্কৃতি দেখে। 

মুহাম্মাদ আয়াতুল্লাহ ঝালকাঠি জেলা সদরের বাসিন্দা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে এম.ফিল/পিএইচডি-এর জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন।

তবে ভ্রমণকালে কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতারও শিকার  হয়েছেন তিনি। কখনো আধপেটা খেয়ে, কখনো বা তিন বেলা না খেয়েই দিন কাটিয়েছেন আয়াতুল্লাহ। রাত কাটিয়েছেন রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে, লঞ্চঘাটে, কখনো মসজিদ, কখনো আবার রাস্তার পাশে তাঁবু গেঁড়ে। ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন দুইবার। তীব্র আর্থিক সংকটেও পড়েন তিনি। তবে উদ্দেশ্য থেকে একপাও পিছু হটেননি অদম্য আয়াতুল্লাহ। তাইতো দেশের সবকটি জেলা ভ্রমণকারীদের নামের পাশে নিজের নামটি তালিকাভুক্ত করেছেন এই ভ্রমণপিয়াসু। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই  ভ্রমণের চিন্তা আসে তার। প্রথমবারের মতো ২০১৮ সালে বেরিয়ে পড়েন দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে। প্রথম জেলা ভ্রমণেই টাকার স্বল্পতায় ঠিক মতো না খেয়ে এবং রেলস্টেশনে রাত কাটিয়েছেন তিনি। এই অভিজ্ঞতা থেকেই ভ্রমণ শুরু এবং ২০২২ সালের শেষের দিকে নেত্রকোনা জেলা ভ্রমণের মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ শেষ করেন তিনি। 

ভ্রমণকালে তিনি কিছু সামাজিক বিষয় নিয়েও কাজ করেছেন। এগুলো হলো সন্তানকে শিক্ষার দানের গুরুত্ব, মাদকের ভয়াবহতা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের গুরুত্ব, পরিবেশ সচেতনতার ব্যাপারে গুরুত্ব, ভ্রমণের গুরুত্ব ও শিশু শ্রম বন্ধকরণ।

প্লেন বাদে সব পরিবহণে ভ্রমণ করেছেন তিনি। রিকশা থেকে শুরু করে লোকাল বাস, ট্রেন, টেম্পু ,মটরসাইকেল, অটোরিকশা, নৌকা, লঞ্চ ইত্যাদি। 

ভ্রমণ বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে ভ্রমণ বিষয়ে আলাপ হয় আয়াতুল্লাহর। তিনি বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন একটি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে পরিগণিত। বিভিন্ন সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, মানুষের আচার-আচরণ, বিভিন্ন জেলার মানুষের বৈশিষ্ট্যের বৈচিত্র্যতা, ইতিহাস, ঐতিহ্য ইত্যাদি জানতে এবং শিখতে আমি সবসময় উৎসুক। আমি পুরো দেশকে  জানতে চেয়েছি, দেশের প্রতিটি কোনায় কোনায় যেতে চেয়েছিলাম। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শত-শত পুরাতন ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো নিজ চোখে দেখতে চেয়েছি। এগুলো দেখাই ছিল আমার মূল লক্ষ্য। আমি সেটা পেরেছি। 

আরও পড়ুন: ‘রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ হলে একক ভর্তি পরীক্ষায় যাবে ঢাবি’

তিনি আরও বলেন, আমি ৭ জন মহান বীরশ্রেষ্ঠের সমাধির মধ্যে ৬ জন বীরশ্রেষ্ঠের সমাধিতে গিয়েছি। এটা আমার নিকট একটি বড় অর্জন। আমি রেলস্টেশনে ঘুমিয়েছি, আমি লঞ্চঘাটে ঘুমিয়েছি, মসজিদে ঘুমিয়েছি, রাস্তার পাশে তাবু করে ঘুমিয়েছি, ৫০ টাকার হোটেলে থেকেছি, বান্দরবানে আদিবাসী/উপজাতিদের ঘরে ঘুমিয়েছি। উপজাতিদের জুম ঘরে থেকেছি, জ্যান্ত কাঁকড়া খেয়েছি, ব্যাঙের ভর্তা খেয়েছি, আধা কাঁচা মুরগী রান্না করা খেয়েছি, কখনো কখনো আর্থিক সমস্যার কারণে ৩ বেলাই না খেয়ে থেকেছি। 

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন বড় বড় পাহাড়ে যাওয়ার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা না খেয়ে হেঁটেছি। এমনকি কখনো কখনো গভীর রাতে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে পাহাড়ে হেঁটেছি, যা ছিল ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। এই পাহাড়গুলোতে যাওয়ার জন্য বুক সমান পানির মধ্যে হেঁটেছি। 

সবসময় তার ভ্রমণ সুখকর ছিল না। সামনা সামনি হতে হয়েছে তিক্ত অভিজ্ঞতার। তার ভাষ্য, আমি দুইবার ছিনতাইয়ের স্বীকার হয়েছি। সেসময় ছিনতাইকারীরা আমাকে লুট করেছিল।

তার ভ্রমণ নিয়ে পরিবার ও বন্ধুদের অবস্থান নিয়ে বলেন, আমার পরিবার এ বিষয়ে কিছুই জানতো না। কারণ তারা এগুলো সমর্থন বা পছন্দ করে না। ৬৪ জেলায় ভ্রমণ সম্পন্ন হওয়ার পর তারা জেনেছে। বন্ধুরা ও বড় ভাইয়েরা সবসময় উৎসাহ দিয়েছে। ভ্রমণ করতে গিয়ে অনেক জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই/বোন বা ছোট ভাই/বোনদের বাসায় থেকেছি। 

ভ্রমণের টাকার উৎস জানতে চাইলে তিনি জানান, বাসা থেকে ভ্রমনের জন্য আমি কোনো দিন টাকা নেইনি। প্রতি মাসের হাতখরচ থেকে টাকা জমিয়ে কয়েকমাস পর পর ভ্রমণে বের হতাম এবং এই কারণে আমার ভ্রমণ শেষ করতে এত বেশি সময় লেগেছে।

তাকে বিমোহিত করেছে এমন স্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে আয়াতুল্লাহ বলেন, সৌন্দর্যের দিক থেকে সবচেয়ে ভালো লাগার স্থান হলো বান্দরবান। আমার নিকট একটি স্বপ্নের মতো জায়গা। আমিয়াখুম ও নাফাখুম ঝর্নায় যাওয়াটা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। তার পাশাপাশি দেশের সবচেয়ে বড় পাহাড় তাজিংডং বিজয় করাটা আমার স্মৃতির মানসপটে ভাসছে। বান্দরবানের পরে মৌলভীবাজার ভালো লেগেছে। এ জেলায় প্রবেশ করা মাত্রই চা এর ঘ্রাণে আমি বিমোহিত হয়েছিলাম। তার পাশাপাশি মৌলভিবাজারের হামহাম জলপ্রপাত এখনও আমার চোখে ভাসে। মৌলভীবাজারের পরে ভালো লেগেছে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের রাত্রিটা। ভালো লেগেছে মেঘের বাড়ি রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি এবং কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন।


সর্বশেষ সংবাদ