শিক্ষার্থীদের সতর্ক করতে ‘ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকি’ দিয়েছিলেন চবি অধ্যাপক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) লোকপ্রশাসন বিভাগ নিয়ে অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করা শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকি দিয়েছিলেন বিভাগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, ‘‘এতে শৃঙ্খলার ব্যত্যয় হচ্ছে। এগুলো এখনই বন্ধ করুক। তা না হলে বিভাগ ছাত্রত্ব বাতিলের ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।’’ এ পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সতর্ক করতে তিনি এ পোস্ট দিয়েছেন।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাতে ‘ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ইউনিভার্সিটি অব চিটাগং (অফিশিয়াল)’ নামের ফেসবুক গ্রুপে পোস্টটি দেন এই শিক্ষক। পরে গতকাল শুক্রবার থেকে পোস্টটির স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিভিন্ন ফেসবুকের গ্রুপ ও পেজে।
এদিকে, বিভাগের সভাপতির এ ধরনের পোস্ট নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অনেকে এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে শিক্ষকের সেই পোস্টের নিন্দাও জানিয়েছেন।
গ্রুপের পোস্টে অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ লিখেন, ‘বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে সকল ছাত্র-ছাত্রীকে অনুসরণের জন্য জানাচ্ছি, ইদানীং অনেক ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ, প্রোগ্রাম, কোর্স ও অন্যান্য অনেক নিয়মনীতি সম্পর্কে খণ্ডিত ধারণা নিয়ে পরীক্ষার পরে বা আগে অগ্রহণযোগ্য মতামত গ্রুপে বা তার ওয়ালে পোস্ট দিচ্ছেন এবং সেই পোস্টে আবার অনেক ছাত্রছাত্রী আরও অগ্রহণযোগ্য কমেন্ট করছেন।’
আরও পড়ুন: বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় ডাক পেলেন জাবি অধ্যাপক
তিনি লিখেন, ‘এটাও দেখা যাচ্ছে, অনেক সিআর এবং ভালো ফলাফল করা ছাত্রছাত্রীও এর মধ্যে আছেন। আমার পরিচিত এবং আমার সঙ্গে ফেসবুকে আছেন, তারাও আছেন। সকলকেই জানাচ্ছি, এগুলো শৃঙ্খলার ব্যত্যয় হচ্ছে। আমাকে অনেকে রিপোর্ট করেছেন, কেউ কেউ স্ক্রিনশট পাঠাতে চেয়েছেন, মোবাইল খুলে আমাকে দেখিয়েছেন, আমি চাইলে সেসব ছাত্রছাত্রীকে এখানে নিয়ে আসতে পারি। এখন আনলাম না।’
ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকি দিয়ে সভাপতি লিখেন, ‘আপনাদের সকলকে চূড়ান্তভাবে জানাচ্ছি, আপনারা এগুলো এখনি বন্ধ করুন, তা না হলে বিভাগ বাধ্য হবে নাম ধরে ডেকে এনে তাদের শোকজ করতে। এবং প্রয়োজনীয় হলে ছাত্রত্ব বাতিলের ব্যবস্থা নিতে।’
বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভাগের তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে। গত সোমবার এই বর্ষের ‘বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়ন’ শিরোনামের একটি কোর্সের পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের আশানুরূপ প্রশ্নপত্র করা হয়নি। এ নিয়ে সম্প্রতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রশ্নপত্র নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা করেন। সেসব পোস্টে বিভাগের অনেক বর্ষের শিক্ষার্থীই মন্তব্য করেন। তারা বিভাগ ও প্রশ্ন নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা সেখানে বর্ণনা করেন। শিক্ষার্থীদের সেই আলোচনা ও সমালোচনা নজরে আসার পর বিভাগের সভাপতি এই পোস্ট করেন।
বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করে বলেন, পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র আমাদের আশানুরূপ হয়নি। সেটি নিয়ে আমরা নিজেদের গ্রুপে লিখেছিলাম। কিন্তু সেটি নিয়ে সভাপতি স্যার ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকি দিয়ে পোস্ট দেবেন ভাবিনি। এখন তাঁর পোস্টটি নিয়ে সবখানে সমালোচনা হওয়ায় আমরা একাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা করছি।
পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে মমতাজ উদ্দিন বলেন, ‘‘আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি সর্তকতাস্বরূপ ও উপদেশমূলক বক্তব্যের উদ্দেশ্যে এমন পোস্ট করেছি।’’ আমি বিভাগের প্রাইভেট গ্রুপে তাদের সাবধান করেছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে নিজ বিভাগ সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভালো-মন্দ অনুভূতি প্রকাশের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতি বিভাগ সভাপতির এই মন্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু এমন প্রশ্নের জবাব তিনি দেননি।