ঢাবির স্বাস্থ্য সেবকদের সেবা পান না শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রতিটি আবাসিক হলে শিক্ষার্থী অনুযায়ী এক থেকে পাঁচজন ‘স্বাস্থ্য সেবক’ বা ‘সিক বয়’ নিয়োজিত আছেন। কিন্তু তাদের কার্যক্রম থাকে শিক্ষার্থীদের আড়ালে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাদেরকে বেতনসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। মূলত তাদের কাজ, হলের অসুস্থ শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় খাবার, পানীয় ও ওষুধ কক্ষে পৌঁছে দেওয়া। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা জানেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ‘সিক বয়’ নামে কর্মচারী আছে।
জগন্নাথ হল সূত্রে জানা গেছে, সেখানে পাঁচজন স্বাস্থ্য সেবক আছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই তাদের সেবা পাননি। অনেকে জানেন না। হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সুজিত কুমার বলেন, ‘আমি জানি যে কয়েকজন স্বাস্থ্য সেবক আছেন। কিন্তু এখনো তাদেরকে দেখিনি। শুনেছি কয়েকজন সেবা পেয়েছেন। তবে আমার কাছে তাদের নম্বর নেই। হল থেকেও সেরকম কিছু জানায়নি। এর ফলে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর আড়ালেই থেকে যাচ্ছে ব্যাপারটা।’
রোকেয়া হল সূত্র জানায়, হলটিতে নিয়োজিত আছেন চার থেকে পাঁচ জন স্বাস্থ্যসেবক। তারা নিয়মিত তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন ভিন্ন কথা। হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান শরমী বলেন, ‘স্বাস্থ্য সেবক সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। এ বিষয়ে হল বা কেউই আমাদের কিছু জানায়নি। তবে একটা সিক রুম আছে। কেউ অসুস্থ হলে সেখানে থাকে। তবে তাকেও যে কেউ দেখাশোনা করে, এমনটা শুনিনি।’
সুফিয়া কামাল হলে দুজন স্বাস্থ্য সেবিকা নিয়োজিত আছেন। এ হলের শিক্ষার্থীরাও বলছেন একই কথা। ফারহানা ফারিয়া জানান, কোনো স্বাস্থ্য সেবিকা আছে বলে তিনি জানেন না। জানানোও হয়নি। তবে হলে একটা সিক রুম আছে। সেখানে কোনো সেবিকা নিয়োজিত নেই।
জহুরুল হক হলে তিন থেকে চারজন স্বাস্থ্য সেবক রয়েছেন। তারা তাদের নিয়মিত কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। তবে হলের শিক্ষার্থী তপু রায়হান বলেন, হলে কয়েকজন স্বাস্থ্য সেবক আছে বলে শুনেছি। মাঝে মাঝে তাদের দেখা যায়। তবে আমি তাদের সেবা গ্রহণ করিনি। কয়েকজন করেছে বলে শুনেছি।
এছাড়া জসিমউদদীন হলে দু’জন, বঙ্গবন্ধু হলে দু’জন, জিয়াউর রহমান হলে দু’জনসহ প্রতিটি হলে রয়েছে এক থেকে একাধিক স্বাস্থ্য সেবক। তাদের অধিকাংশই থেকে যান শিক্ষার্থীদের চোখের আড়ালে। বসে বসে বেতন এবং সব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
যদিও শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ মানতে নারাজ হলগুলোর প্রাধ্যক্ষরা। তাদের ভাষ্য, শিক্ষার্থীদের হেয়ালির কারণে তারা জানে না যে, হলে স্বাস্থ্য সেবক আছে। শিক্ষার্থীরাই স্বাস্থ্য সেবকদেরকে জানায় না। স্বাস্থ্য সেবক, হাউজ টিউটর বা সরাসরি প্রভোস্টকে জানালেও তাদের অসুস্থতার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সাধারণত যারা ক্যাম্পাসে নতুন এসেছে বা যারা হলে থেকে হল সম্পর্কে জানে না, তারাই এমন বলতে পারে।
শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ মানতে নারাজ হলগুলোর প্রাধ্যক্ষরা। তাদের ভাষ্য, শিক্ষার্থীদের হেয়ালির কারণে তারা জানে না যে, হলে স্বাস্থ্য সেবক আছে। শিক্ষার্থীরাই স্বাস্থ্য সেবকদেরকে জানায় না।
জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম বলেন, ‘এটি মূলত কোনো অভিযোগই হতে পারে না। আমরা আমাদের স্বাস্থ্য সেবকদের হল গেটে বসে থাকতে বলি। তারা সেখানে থাকে। শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যায় তারা যায়। ওষুধ এনে দেওয়া থেকে শুরু করে খাবার এনে দেওয়া, সব ধরনের সাহায্য তারা শিক্ষার্থীদের করেন। হলের বিভিন্ন জায়গা তাদের নাম্বার দিয়ে পোস্টার লাগানো আছে।’
তিনিবলেন, অসচেতন শিক্ষার্থীরাই এ ধরনের কথা বলতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যখন থেকেছি, তখনও স্বাস্থ্য সেবক ছিল। এখনও আছে । তারা নিয়মিত কার্যক্রম চালাচ্ছে।’ তবে অভিযোগ তিনি বিবেচনায় রাখবেন বলে জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন: বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা থেকে ঢাবি ভিসি অধ্যাপক মাকসুদ কামাল
রোকেয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, ‘আমার হলে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমি আগে পাইনি। আমাদের হলে শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যানমূলক সব কাজ করা হয়। যারা নতুন এসেছে তারা হয়তো জানে না। তবে আমার হলের স্বাস্থ্য সেবিকারা সব সময় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকে। তারা রাতেও শিক্ষার্থীদের পাশে থাকে। প্রয়োজনীয় জিনিস এনে দেয়, সেবা করে। অন্তত আমার হল নিয়ে এ ধরনের অভিযোগের কোনো সুযোগ নেই।’
এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন উল্লেখ করে সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেছে চৌধুরী বলেন, ‘আমার হলে স্বাস্থ্য সেবিকা থাকুক বা না থাকুক, প্রতিদিন ডিউটি ভাগ করা আছে। পাঁচ দিন পর পর দুজন হাউজ টিউটর আসেন। যদি কেউ অসুস্থ হয় রাত ৯টার পর, তাহলে শিক্ষকদের উপস্থিতিতে একজন বা দুজন স্বাস্থ্য সেবিকা থাকে, তাদেরকে সাথে নিয়ে আমরা মেয়েদেরকে কোন পরিস্থিতিতে কি লাগবে, সেটা নির্ধারণ করি। আগে একজন চিকিৎসকও ছিলেন। কাজেই এ ধরনের কোনো অভিযোগ বা মেয়েরা জানে কি জানে না, এটা আমার কাছে কোনো অভিযোগ মনে হয় না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি এবং বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল বাছির বলেন, ‘এটা আমার কাছে একটি অভিনব অভিযোগ মনে হচ্ছে। কারণ ওরিয়েন্টেশনের সময় হলে কে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে, সেগুলো জানিয়ে দেওয়া হয়। হয়তো যারা অভিযোগ করেছে, তারা এ প্রোগ্রামগুলোতে আসেনি। তবে এ ধরনের অভিযোগ যদি সত্যি হয়, আমি হল প্রভোস্টদেরকে নিয়ে একটা মিটিং ডেকে তাদেরকে নোটিশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে জানানোর জন্য বলব।’