লাগামহীন চবি ছাত্রলীগে এক মাসে ৯ বার সংঘর্ষ
ক্যাম্পাসের ভিসি বাসভবনসহ গুরুত্বপূূর্ণ জায়গায় ভাঙচুর, সাংবাদিক মারধরসহ সাম্প্রতিক সময়ে ফের আলোচনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগ। এছাড়া অন্তর্কলহের কারণে নিয়মিত ঘটছে উপ-গ্রুপগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা। এসব কারণে সম্প্রতি শাখাটির কমিটি বিলুপ্ত করা হলেও থামছে না সংঘাত-সংঘর্ষ। যেনো লাগামহীন হয়ে পড়েছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
প্রশাসনের ব্যর্থতা ও রাজনীতির নামে ছাত্রলীগ নেতাদের গ্রুপিং এবং উচ্ছৃঙ্খল আচরণকেই দায়ী করা হচ্ছে। গত এক মাসে নিজেদের মধ্যে ৯ বার সংঘর্ষে জড়ায় উপ-গ্রুপগুলো। এতে আহত হয়েছে অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী। তাদের কর্মকাণ্ডে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রয়েছেন চরম আতঙ্কে।
ডালের বাটি পড়া নিয়ে সংঘর্ষ
গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হল সংলগ্ন 'মায়ের দোয়া' হোটেলে দুপুরের খাবার শেষে বের হওয়ার সময় সিক্সটি-নাইন গ্রুপের কর্মী আজমিরের হাতের ধাক্কায় টেবিলে থাকা ডালের বাটি পড়ে যায়। এ বিষয়টি নিয়ে বিজয় গ্রুপের কর্মী মাহিরের সঙ্গে আজমিরের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আজমিরকে চড়-থাপ্পড় মারে বিজয় গ্রুপের কয়েকজন কর্মী। পরে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ালে তা ভয়াবহ সংঘর্ষে রুপ নেয়। ঘন্টাব্যাপী চলে সংঘর্ষ। এতে উভয় গ্রুপের ২১ জন নেতাকর্মী আহত হয়।
“তুচ্ছ ঘটনা নিয়েই অনেক সময় ছাত্ররা সংঘর্ষে জড়ায়। দু'একটা ঘটনার তদন্ত চলছে, শেষ হলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো। আর যেন সংঘর্ষ না হয় সেদিকে নজর আছে-চবি প্রক্টর
শাটল দুর্ঘটনাকে পুঁজি করে ক্যাম্পাসে ভাঙচুর
৭ সেপ্টেম্বর শাটল দুর্ঘটনায় প্রায় ২০ জন আহত হয়। এর মধ্যে ১ জনের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসে ভিসি বাসভবন, পরিবহন দপ্তরে থাকা ৬৫ টি বাস, শিক্ষক ক্লাবে নজিরবিহীন ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় প্রশাসন ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে ২টি মামলা করে। এ মামলার ১৪ আসামীর মধ্যে ১২ জনই শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপের নেতাকর্মী।
দু’দিনে ৮ বার সংঘর্ষ
পূর্ব শত্রুতা, আধিপত্য বিস্তার, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২১ ও ২২ সেপ্টেম্বর থেমে থেমে শাখা ছাত্রলীগের ৩ টি উপগ্রুপের মধ্যে ৮ বার সংঘর্ষ হয়। গ্রুপগুলো হলো- সিএফসি, বিজয় ও সিক্সটি নাইন। এ ঘটনায় আহত হয় অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী।
সংঘর্ষের পর কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা
বেশ কিছু দিন যাবৎ চবি ছাত্রলীগের বেপরোয়া আচরণে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। কেন্দ্র থেকে বলা হয় সংগঠনে গতিশীলতা আনতে ও নতুনদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এই কমিটি বিলুপ্ত করা হলো। কমিটি বিলুপ্তির পরও বেপরোয়া আচরণের কোন পরিবর্তন আসেনি।
সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র হাতে দেখা গেছে অনেকের সঙ্গে
সাংবাদিক মারধর ও হত্যার হুমকি
২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোশাররফ শাহকে বেধড়ক মারধর করে শাখা ছাত্রলীগের সিএফসি গ্রুপের একাংশের কর্মীরা। নিউজের কাজে বের হলে তাকে মারধর করে প্রতিবেদন না ছাপানোর হুমকি দেয়। তারা বলে, ‘আর নিউজ করিস, তারপর দেখব তোরে কে বাঁচাতে আসে। ছাত্রলীগকে নিয়ে কোনো নিউজ হবে না। মারধরে তার কানের পর্দা ফেটে যায়, কপালে গভীর ক্ষতের কারণে ৪টা সেলাই দেওয়া হয়। এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে ভুক্তভোগী সাংবাদিক।
আতংকে থাকেন শিক্ষার্থীরা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ঠুনকো ঘটনা নিয়েই দেখি গ্রুপগুলোর মধ্যে মারামারি লাগছে। তখন আতংকে থাকি আর ভাবি এটা কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নাকি অন্য কিছু। ক্যাম্পাসে আসার পর থেকে কতবার যে সংঘর্ষ হয়েছে তার কোন হিসেব নাই।
সংঘর্ষের বিষয়ে বিজয় গ্রুপের একাংশের নেতা সাখাওয়াত হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গত এক মাসে যে ঝামেলা, তা নিয়ন্ত্রণহীন গ্রুপগুলোর কারণে। সিনিয়র নেতৃবৃন্দের নির্দিষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এসব সংঘর্ষ হচ্ছে। চবিতে ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে হরহামেশা সংঘর্ষ হয়েই থাকে। অনেকসময় আমরা চেষ্টা করেও সিনিয়রদের (২০০৬-০৭, ২০১০-১১) কারণে সমাধান করতে পারি না।
সদ্য বিলুপ্ত শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও সিএফসি গ্রুপের নেতা মির্জা খবির সাদাফ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শাটল দুর্ঘটনাকে পুঁজি করে ক্যাম্পাসে ভাঙচুর চালানো কোনভাবেই কাম্য না। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি প্রশাসনকে। গত এক মাসে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জুনিয়রদের মধ্যে সহনশীলতা না থাকায় তারা সংঘর্ষে জড়ায়। অনেকগুলো গ্রুপ থাকায় সালাম না দিলেও সংঘর্ষ শুরু হয়ে। আদর্শিক কোন কারণে ঝামেলা হয় না। আমরা সর্বোচ্চ সজাগ থাকবো পরবর্তীতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।
ক্যাম্পাসের সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নুরুল আজিম সিকদার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তুচ্ছ ঘটনা নিয়েই অনেক সময় ছাত্ররা সংঘর্ষে জড়ায়। দু'একটা ঘটনার তদন্ত চলছে, শেষ হলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো। আর যেন সংঘর্ষ না হয় সেদিকে নজর আছে। ক্যাম্পাস ভাঙচুরের বিষয়টি এখন পুলিশের হাতে। মামলা করে পুলিশকে আমরা ব্যবস্থা নিতে বলেছি।